১৭৭৫ থেকে ১৮০০ সালের মধ্যে মুঘল সুবাদার মীর জুমলা মুন্সিগঞ্জের পুলঘাটায় মীরকাদিম সেতুটি নির্মাণ করেন। স্থানীয়ভাবে এটি পুলঘাটা সেতু নামেও পরিচিত। সেতুটির বিশেষত্ব হলো এটা তিনটি আর্চ নিয়ে তৈরি এবং মাঝখানের আর্চটা অনেক বেশি বড়। এ কারণে সেতুটি অনেকটা অর্ধচন্দ্রাকৃতি আদল পেয়েছে।
নদীমাতৃক দেশ হিসেবে বাংলাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থায় সেতুর গুরুত্ব চিরকালীন। যোগাযোগের প্রয়োজনে সুলতানি ও মুঘল এই দুই কালপর্বে বাংলাদেশে বেশকিছু সেতু নির্মিত হয়। মুঘল সুবাদাররা বাংলাদেশের সমগ্র নদীপথকে সংযুক্ত করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন এবং সেই লক্ষ্যে বেশকিছু কালভার্ট ও সেতু নির্মাণ করেন। বিভিন্ন শিলালিপিতেও এসব সেতুর কথা উল্লেখ আছে। স্থাপত্যিক নকশা ও প্রকৌশলগত দিক থেকে এসব সেতু যেমন অনন্য, একইভাবে তা তৎকালীন সময়ের যোগাযোগ ব্যবস্থায় সেতুর গুরুত্বেরও পরিচায়ক। এসব সেতুর বেশির ভাগই আর টিকে নেই। যে কয়েকটি টিকে আছে তা ধ্বংসাবশেষ হয়ে। সংরক্ষণ ও মেরামতের নামে কয়েকটি সেতুকে আবার আধুনিক রূপ দেয়া হয়েছে। মধ্যযুগে নির্মিত যে কয়টি সেতু এখনো বাংলাদেশে টিকে আছে মুন্সিগঞ্জের পুলঘাটায় মুঘল আমলে নির্মিত মীরকাদিম সেতু তার অন্যতম।
অষ্টাদশ শতকে অর্থাৎ ১৭৭৫ থেকে ১৮০০ সালের মধ্যে মীরকাদিম সেতুটি নির্মিত হয়, যা এখনো হালকা যানবাহন চলাচলের জন্য উপযোগী। এটি নির্মাণ করেন মুঘল সুবাদার মীর জুমলা। স্থানীয়ভাবে এটি পুলঘাটা সেতু নামেও পরিচিত। মীরকাদিম সেতুর বিশেষত্ব হলো এটা তিনটি আর্চ নিয়ে তৈরি এবং মাঝখানের আর্চটা অনেক বেশি বড়। এ কারণে সেতুটি অনেকটা অর্ধচন্দ্রাকৃতি আদল পেয়েছে। বিশেষ এই আকৃতির ফলে সেতুর মাঝখান দিয়ে নৌকা চলাচল করতে পারে। এছাড়া সেতুর ভার বহনক্ষমতাও বৃদ্ধি পায়।
কিংবদন্তি
মুঘল আমলে নির্মিত মীরকাদিম সেতু নিয়ে নানা কিংবদন্তি চালু আছে। মীরকাদিমের স্থানীয় বাসিন্দাদের কেউ কেউ মনে করেন এটি জিনের তৈরি। অনেকের বিশ্বাস, মানুষের দ্বারা এ কাজ করা সম্ভব নয়। লোকমুখে এও শোনা যায় যে, কোনো এক বৈশাখী পূর্ণিমায় অদৃশ্য শক্তি তার নিজ হাতে সেতুটি নির্মাণ করে। আবার শোনা যায়, এটি দৈত্য-দানবের কাজ এবং তাদের এক রাতের ফসল। তবে মীরকাদিম সেতুটিকে ঘিরে প্রচলিত এসব কথনের সবই পুরাকথা অথবা শুধুই গল্প, যা কালের পর কাল ধরে লোকমুখে চলে আসছে।
ইতিহাস যা বলে
মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেবের সময়ে সুবাদার মীর জুমলা লাদাখপুর দুর্গ ও দোহারের মুসা খান দুর্গের মধ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ ও শক্তিশালী করার লক্ষ্যে দুটি সেতু নির্মাণ করেন। তার মধ্যে একটি হলো এই মীরকাদিম সেতু। অন্যটি তালতা সেতু। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ইংরেজদের ছোড়া বোমার আঘাতে তালতা সেতুটি ধ্বংস হয়ে যায়। পুরনো নথি, পুস্তক ও ইতিহাসে সেই তথ্য লিপিবদ্ধ আছে। এমনকি লোকমুখেও প্রচলিত আছে তালতা সেতুর কথা। মীর জুমলা নির্মিত দুটি সেতুর মধ্যে টিকে আছে মীরকাদিম সেতুটি।
স্থাপত্যিক বিশেষত্ব
মীরকাদিম সেতুটি দেখতে অনেকটা সোনারগাঁর পানাম সেতুর মতো। তবে দৈর্ঘ্যে এটি পানাম সেতুর চেয়ে অনেকটাই বড়। সেতুটি দৈর্ঘ্যে ৫২ দশমিক ৭২ মিটার বা ১৭৩ ফুট। তিনটি আর্চের মধ্যে সবচেয়ে বড় অর্থাৎ মাঝের আর্চটির বিস্তৃতি ৪ দশমিক ২৬ মিটার বা ১৪ ফুট এবং পানির স্তর থেকে উচ্চতা ৮ দশমিক ৫৩ মিটার বা ২৮ ফুট। পাশের আর্চ দুটির প্রতিটি ২ দশমিক ১৩ মিটার বা ৭ ফুট বিস্তৃত এবং পানির স্তর থেকে ৫ দশমিক ১৮ মিটার বা ১৭ ফুট উঁচু। বাংলাদেশ সরকারের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ বর্তমানে এটি ঐতিহ্য হিসেবে রক্ষণাবেক্ষণ করছে। পুরো সেতুটিই নির্মিত হয়েছে ইট দিয়ে। কোনো ধরনের কষ্টিপাথরের ব্যবহার এখানে করা হয়নি। সেতুটির পুরুত্ব অনেক বেশি এবং তা ৪ ফুট ৫ ইঞ্চি।
পানাম ছাড়াও মীরকাদিম সেতুর আদলে বাংলায় আরও দুটি সেতু নির্মাণ করেন মুঘলরা। এর মধ্যে বাড়িউড়া প্রাচীন পুল বা হাতিরপুলটি নির্মাণ করেন সম্ররাট আকবরের দেওয়ান শাহবাজ খান। ১৬৫০ সালের দিকে এটি নির্মাণ করেন তিনি। এটি সরাইল সেতু নামেও পরিচিত। জনশ্রুতি আছে, সেকালে সরাইলের দেওয়ানদের অনেক হাতি ছিল। এসব হাতির পিঠে সওয়ার হয়ে তারা সেতুটি পার হতেন। সেতুটিতে আসার পর হাতিগুলো কিছুটা বিশ্রাম পেত। এই হাতিকে কেন্দ্র করেই সেতুটির নাম হয় হাতিরপুল সেতু। আর সপ্তদশ দশকে মুঘলরা নির্মাণ করেন সোনারগাঁর পানাম সেতু। এই সেতুটিও তিনটি আর্চবিশিষ্ট এবং মাঝের আর্চটি বেশি বড়। সম্পূর্ণ ইটের তৈরি সেতুটির দৈর্ঘ্য ১৭৩ ফুট এবং প্রস্থ ১৪ ফুট। সেতুর মাঝখানের পিলারের পুরুত্ব ২ দশমিক ২১ মিটার।
সেতুর মতো বাংলায় বিভিন্ন দুর্গ, সুরক্ষা প্রাচীর, সুড়ঙ্গপথ, মসজিদ, ঐতিহাসিক ভবন ও ঘাট নির্মাণেও নেতৃস্থানীয় ভূমিকা রেখে গেছেন মুঘলরা। পাশাপাশি বিভিন্ন পরিখা, দিঘি ও খালও খনন করে গেছেন তারা। দিল্লির পুরাতন দুর্গের পাশের খাল তার উদাহরণ। একইভাবে কেল্লার পুল খাল ও খিজিরপুর দুর্গে ত্রিবেণী খালের খননও তাদের হাতেই। তবে সেতুর কথা আলাদা করে বলতে হয়। এসব সেতুর অধিকাংশই সময়ের পরিক্রমায় হারিয়ে গেছে। খাজা অম্বর সেতু ও তাঁতীবাজার সেতুর কথা এক্ষেত্রে উল্লেখ করা যায়। আবার পুরনো ব্রিজকে নতুন আদল দেওয়ার চেষ্টাও হয়েছে। ত্রিবেণী সেতু ও কেল্লা সেতুর কথা এখানে উল্লেখযোগ্য। তালতলা সেতুটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ভয়ংকর সেই দিনগুলোর শিকার হয়েছে। এর মধ্যেও মুঘল আমলে নির্মিত কিছু সেতু এখনো টিকে আছে। সেগুলোরও স্থাপত্যিক অনন্যতা হুমকির মুখে রয়েছে। তা সত্ত্বেও মুন্সিগঞ্জের মীরকাদিম সেতুটি মুঘল আমলের অনন্য স্থাপত্যশৈলীর সাক্ষী হয়ে এখনো দাঁড়িয়ে আছে।
Everyone loves it when people come together and share thoughts.
Great site, keep it up!
Hi there! This post could not be written much better! Going through this post reminds me of my previous roommate!
He continually kept talking about this. I most certainly will send this information to
him. Fairly certain he’ll have a great read. Many thanks for
sharing!