বিআইডব্লিউটিএ নিয়মিত প্রকাশনা

বৃহস্পতিবার, জানুয়ারি ২৩, ২০২৫
17 C
Dhaka

বিআইডব্লিউটিএ নিয়মিত প্রকাশনা

ভিএইচএফ : জরুরি মুহূর্তের যোগাযোগ প্রযুক্তি

সমুদ্র বা নদী কিংবা নৌপথ। ব্যবহারের উদ্দেশ্য বাণিজ্যিক হোক বা বিনোদনমূলক। জরুরি অবস্থায় সবারই সাহায্য চাওয়ার মাধ্যমে জোগাড় থাকাটা সবচেয়ে জরুরি। ভেরি হাই ফ্রিকোয়েন্সি (ভিএইচএফ) যোগাযোগ প্রযুক্তিই হচ্ছে বিপদ উত্তরণের গুরুত্বপূর্ণ সেই মাধ্যম। ভিএইচএফ রেডিও এখন পর্যন্ত জরুরি যোগাযোগের সবচেয়ে পরীক্ষিত ও পছন্দের মাধ্যম। নদী বা সমুদ্রে যেতে উদ্যত যে কারো কাছেই এটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নিরাপত্তা সরঞ্জামও। অন্য নৌযান, মেরিনা অপারেটর, লাইফগার্ড, কোস্ট গার্ড স্টেশন, নদীবন্দর কর্তৃপক্ষ ও উদ্ধারকারী কর্তৃপক্ষের সাথে জরুরি মুহূর্তে যোগাযোগের জন্য ব্যবহৃত হয়ে থাকে এটি।

যেভাবে কাজ করে

নৌযানে হাতে ধরা ভিএইচএফ সবক্ষেত্রেই দেখা যায়। স্বল্প দূরত্বের মধ্যে যোগযোগের জন্য হাতে ধরা ভিএইচএফ যথেষ্ট বলে মনে করা হয়। ফিক্সড মাউন্ট (স্থায়ীভাবে স্থাপন করা) ভিএইচএফ বসানোর ধরন, নৌযানের হিল অ্যাঙ্গেল ও সমুদ্র বা নদীর পরিস্থিতির ওপর ভিত্তি করে ২০ থেকে ৪০ মাইল পর্যন্ত বার্তা পৌঁছাতে পারে। স্থাপনা ও প্রাকৃতিক কোনো প্রতিবন্ধক ছাড়াই দুই বিন্দুর মধ্যে সরাসরি বার্তা আদান-প্রদানের জন্য অ্যান্টেনা যতটা উঁচুতে সম্ভব স্থাপন করাটা জরুরি। অ্যান্টেনা যতটা সম্ভব উঁচুতে স্থাপনের পর পরবর্তী কাজ হলো আওতা বাড়ানোর জন্য তরঙ্গের ক্ষমতা বৃদ্ধি। তরঙ্গের ক্ষমতা পরিমাপ করা হয় ডেসিবল দিয়ে। সাধারণভাবে বলা যায়, তরঙ্গের ক্ষমতা যত শক্তিশালী হয় এর আওতা তত বাড়ে। কানো কারণে অ্যান্টেনার অনুপস্থিতি দেখা দিলে জরুরি ভিএইচএফ অ্যান্টেনা না বহন করা পর্যন্ত ভিএইচএফ রেডিও সেভাবে কাজে আসে না।

জরুরি মুহূর্তে ব্যবহার

ভিএইচএফের মাধ্যমে তিন ধরনের জরুরি বার্তা আদান-প্রদান করা হয়। এগুলো হলো ডিস্ট্রেস (দুর্যোগ), আর্জেন্সি (জরুরি) ও সেফটি (সুরক্ষা)। কোনো নৌযান যখন বড় কোনো বিপদের মধ্যে পড়ে বা বিপদ আসন্ন এবং আশু সাহায্যের প্রয়োজন সেই সময় ডিস্ট্রেস বার্তা পাঠানো হয়। একটি পূর্ণাঙ্গ ডিস্ট্রেস বার্তার তিনটি অংশ থাকে- অ্যালার্ট, কল ও মেসেজ। ডিজিটাল সিলেক্টিভ কলিং (ডিএসসি) ব্যবহার করে চ্যানেল ৭০-এ বার্তা পাঠানোই হচ্ছে অ্যালার্ট। চ্যানেল ৭০-এর এই বার্তা একবার স্বীকৃত হলে অধিকাংশ ভিএইচএফ সেট স্বয়ংক্রিয়ভাবে চ্যানেল ১৬-এ সুইচ করে এবং তখন ভয়েস কল পাঠানো যায়। ডিজিটাল সিলেক্টিভ কলিং হচ্ছে একটি কৌশল যা ডিজিটাল কোড ব্যবহার করে কোনো রেডিও স্টেশন ইন্টারন্যাশনাল রেডিও কনসালটেটিভ কমিটির (সিসিআইআর) সব সুপারিশ মেনে অন্য স্টেশন বা একাধিক স্টেশনের একটি গ্রুপের সাথে সংযোগ স্থাপন এবং তথ্য স্থানান্তর করে।

এই পর্যায়ে পুশ টু টক বাটন (পিটিটি) ব্যবহার করে ভয়েস কল পাঠানোর প্রয়োজন পড়ে। এর পরের অংশে রয়েছে মেসেজ বা বার্তা, যেখানে আপনার অবস্থান, দুর্যোগের ধরন, কী ধরনের সাহায্য দরকার, নৌযানে লোকের সংখ্যা এবং দরকারি ও গুরুত্বপূর্ণ অন্যান্য তথ্য থাকে।

আর্জেন্সি কল নৌযান অথবা ব্যক্তির সুরক্ষা সম্পর্কিত খুবই গুরুত্বপূর্ণ বার্তাকে নির্দেশ করে। কল বা বার্তার অগ্রাধিকারের নিরিখে আর্জেন্সি বা জরুরি বার্তা হচ্ছে ডিস্ট্রেসের পর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বার্তা। এ ধরনের বার্তার জন্য নৌযানের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তির অনুমোদন গ্রহণ বাধ্যতামূলক।
সুরক্ষা বার্তা আবহাওয়া ও নেভিগেশন-সংক্রান্ত বার্তা। অগ্রাধিকারের নিরিখে ডিস্ট্রেস ও আর্জেন্সির পর সেফটি বা সুরক্ষা বার্তা হচ্ছে তৃতীয় গুরুত্বপূর্ণ বার্তা।

ডিজিটাল সিলেক্টিভ কলিং থাকলে যা করতে হয় তা হচ্ছে সঠিক সতর্কতা প্রথমে চ্যানেল ৭০-এ পাঠানো এবং এরপর চ্যানেল ১৬-এ ভয়েস পাঠানো। মনে রাখা দরকার যে নেভিগেশন সংক্রান্ত সতর্কতা সাধারণত ভিএইচএফের মাধ্যমেই পাঠানো হয়।

বাংলাদেশের প্রবিধান যা বলছে

নৌযানে ভিএইচএফ রেডিও সংক্রান্ত সব ধরনের নির্দেশনা বাংলাদেশ মার্চেন্ট শিপিং (রেডিও) রেগুলেশনস ২০০২-এ উল্লেখ করা আছে। সে অনুযায়ী, প্রত্যেক জাহাজেই চ্যানেল ৭০ বা ১৫৬.৫২৫ মেগাহার্টজে ডিএসসি এবং চ্যানেল ৬ বা ১৫৬.৩০০ মেগাহার্টজ, চ্যানেল ১৩ বা ১৫৬.৬৫০ মেগাহার্টজ ও চ্যানেল ১৬ বা ১৫৬.৮০০ মেগাহার্টজে টেলিফোনি বার্তা প্রেরণ ও গ্রহণে সক্ষম ভিএইচএফ রেডিও থাকতে হবে। থাকতে হবে ৯ গিগাহার্টজ ব্যান্ডে কাজ করতে সক্ষম একটি রাডার ট্রান্সপন্ডার। এছাড়া আন্তর্জাতিক ন্যাভটেক্স ব্রডকাস্ট গ্রহণে সক্ষম একটি রিসিভার, ইনমারসাট স্যাটেলাইটের মেরিটাইম সেফটি সংক্রান্ত তথ্য গ্রহণের মতো রেডিও সুবিধা এবং ৪০৬ মেগাহার্টজ ব্যান্ডে পরিচালিত পোলার অরবিটিং স্যাটেলাইট সেবা অথবা ১.৬ গিগাহার্টজে পরিচালিত ইনমারসাট জিওস্টেশনারি স্যাটেলাইট সেবার মাধ্যমে দুর্যোগ-সংক্রান্ত সতর্কতা সম্প্রচারের সক্ষমতাও থাকতে হবে। ইনমারসাট হচ্ছে ১৯৭৬ সালের ৩ সেপ্টেম্বর ইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম স্যাটেলাইট অর্গানাইজেশনের কনভেনশন দ্বারা প্রতিষ্ঠিত একটি সংস্থা। আর আন্তর্জাতিক ন্যাভটেক্স সেবা হচ্ছে ৫১৮ কিলোহার্টজে মেরিটাইম সেফটি ইনফরমেশনের সম্প্রচার ও স্বয়ংক্রিয়ভাবে গ্রহণের একটি সমন্বয়। মেরিটাইম সেফটি ইনফরমেশন বলতে নৌযানে সম্প্রচারিত সাধারণত আবহাওয়া-সংক্রান্ত সতর্কবার্তা, আবহাওয়ার পূর্বাভাস ও অন্যান্য জরুরি নিরাপত্তা-সংক্রান্ত বার্তা বোঝায়।

নৌযানটি যাত্রীবাহী হলে (যা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ নৌপথে চলাচল করে) ডিস্ট্রেস অ্যালার্ম প্যানেলটি হুইলহাউজের এমন স্থানে বসাতে হবে যা সহজেই দৃশ্যমান হয়। নৌযানে কোনো ধরনের দুর্যোগ সংকেত গৃহীত হলে ডিস্ট্রেস অ্যালার্ম প্যানেল তা জানিয়ে দেয়।

নৌযানে স্থাপন করা বা বহন করা ভিএইচএফ রেডিও সরঞ্জাম অবশ্যই ইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম অর্গানাইজেশন (আইএমও) গৃহীত মানদন্ড পূরণ করতে হবে। সর্বোপরি এগুলো তত্ত্বাবধান জন্য যোগ্য এক বা একাধিক ব্যক্তি নৌযানে থাকতে হবে। যোগ্যতা হিসেবে হয় তাদের প্রথম শ্রেণির রেডিও ইলেকট্রিক সনদ অথবা দ্বিতীয় শ্রেণির রেডিও ইলেকট্র্রিক সনদ অথবা জেনারেল অপারেটর সনদ অথবা রেস্ট্রিক্টেড অপারেটর সনদ থাকতে হবে।

নদীবন্দরে ভিএইচএফ

নৌ দুর্ঘটনা রোধে সতর্কতামূলক বিভিন্ন পদক্ষেপ জোরদার করছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডাব্লিউটিএ)। এরই অংশ হিসেবে কালবৈশাখী মৌসুম, দুর্যোগের সময়ে ও বিভিন্ন উৎসবে নৌযান যাতে দুর্ঘটনায় না পড়ে সেজন্য নদীবন্দরের সঙ্গে এর যোগাযোগ ও মনিটরিংয়ের জন্য নদীবন্দরগুলোতে ভিএইচএফ যোগাযোগ চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ২০২০-২১ অর্থবছরে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, বরিশাল, পটুয়াখালী ও চাঁদপুর নদীবন্দরে এটি চালুও করা হয়েছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here