বিআইডব্লিউটিএ নিয়মিত প্রকাশনা

বুধবার, জানুয়ারি ২২, ২০২৫
17 C
Dhaka

বিআইডব্লিউটিএ নিয়মিত প্রকাশনা

চট্টগ্রাম-কাপ্তাই বাঁধ কর্ণফুলীর গুরুত্বপূর্ণ এক নৌরুট

শুধু পার্বত্য চট্টগ্রাম ও চট্টগ্রাম নয়, সমগ্র বাংলাদেশেরই গুরুত্বপূর্ণ নদীগুলোর অন্যতম কর্ণফুলী। এর গতিপথ ধরে প্রবহমান নৌপথ দিয়েই বছরের পর বছর বাণিজ্য চলেছে। এখনও চলছে। কর্ণফুলীর ওপর দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ যেসব নৌরুট রয়েছে চট্টগ্রাম-কাপ্তাই বাঁধ সেগুলোর অন্যতম।

কর্ণফুলীর সাথে মিশে আছে হাজার বছরের ইতিহাস। শুধু পার্বত্য চট্টগ্রাম ও চট্টগ্রাম নয়, সমগ্র বাংলাদেশেরই গুরুত্বপূর্ণ নদীগুলোর অন্যতম এই কর্ণফুলী, যার উৎপত্তি ভারতের মিজোরাম রাজ্যের লুসাই পাহাড় থেকে। নদীটি বরফকল, সুবলং, গোবামুড়া, চিলার ডাক, সীতাপাহাড় ও কাপ্তাইয়ের কাছে তিনটি পর্বত শ্রেণিকে ছেদ করে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। এরপর প্রবাহটির অন্তিম ঠিকানা হয়েছে চট্টগ্রাম বন্দরের অদূরে বঙ্গোপসাগরে।

পর্বতমালার উচ্চতার সাথে তাল রেখে কর্ণফুলী নদী তার পুরাতন গতিপথ অব্যাহত রেখেছে বিধায় এটিকে একটি ভূমিজপূর্ব বা প্রাচীন নদী বলা হয়ে থাকে। নদীটি কাপ্তাই-চন্দ্রঘোনা সড়ক বরাবর প্রাংকিয়াং থেকে ওয়াগ্গাছড়ি পর্যন্ত সংকীর্ণ ও সরল। এ ঋজুতা সম্ভবত একটি চ্যুতির কারণে যা প্রাংকিয়াং থেকে ওয়াগ্গা পর্যন্ত নদীখাতটিকে নিয়ন্ত্রণ করছে। কর্ণফুলীর প্রধান শাখা নদী হচ্ছে ডানতীরে  কাসালং, চেঙ্গী, হালদা ও ধুরং এবং বামতীরে সুবলং, কাপ্তাই, রেংখিয়াং ও থেগা। কর্ণফুলীর গতিপথ ধরে প্রবহমান নৌপথ দিয়েই বছরের পর বছর বাণিজ্য চলেছে। এখনো চলছে। কর্ণফুলীর ওপর দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ যেসব নৌরুট রয়েছে চট্টগ্রাম-কাপ্তাই বাঁধ সেগুলোর অন্যতম।

চট্টগ্রাম অঞ্চলের নদীপ্রণালি

কর্ণফুলী প্রধান নদী হলেও এ অঞ্চলে আরও কিছু নদী ও হ্রদ আছে, যা চট্টগ্রাম অঞ্চলের নদীপ্রণালির গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে আছে। এই অঞ্চলের পূর্বদিকে বগাকাইন হ্রদ একটি যথার্থ প্রাকৃতিক গভীর পানির হ্রদ, যার দৈর্ঘ্য ১ দশমিক ২৫ কিলোমিটার এবং বিস্তৃতি ২১ দশমিক ২১ হেক্টর। অপর প্রাকৃতিক হ্রদটির নাম রেইনখেইংকাইন, এটিও পার্বত্য চট্টগ্রামে অবস্থিত। হ্রদটির দৈর্ঘ্য প্রায় ১ দশমিক ৫৫ কিলোমিটার। তবে দেশের সবচেয়ে বড় কৃত্রিম হ্রদটির নাম কাপ্তাই, যা কর্ণফুলী নদীসংলগ্ন।

এই অঞ্চলের প্রধান নদীগুলোর উৎপত্তিস্থল পর্বতশৃঙ্গ। পাহাড় থেকে বয়ে আসা এসব নদীতে পলি জমার হার তুলনামূলক বেশি। এ অঞ্চলের প্রধান নদীসমূহ হলো কর্ণফুলী ও তার উপনদী রাইনখিয়াং, কাসালং, হালদা, ইছামতী এবং বাকখালী, সাঙ্গু, মাতামুহুরী, নাফ, ফেনী ও কুতুবদিয়া চ্যানেল, মহেশখালী চ্যানেল।

মিজোরামের পূর্বাঞ্চলীয় পর্বতশ্রেণি থেকে উৎপন্ন বেশকিছু সংখ্যক ক্ষুদ্র স্রোতধারা একত্রে মিলিত হয়ে রাইনখিয়াং নদীর সৃষ্টি করেছে। নদীটি পাহাড়ি এলাকার গভীর সংরক্ষিত বনাঞ্চলের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে অনেক বাধা-বিঘ্ন পেরিয়ে বেলাছড়ি (রাঙ্গামাটি) নামক স্থানে এই কাপ্তাই হ্রদে পতিত হয়েছে। এ স্থান কর্ণফুলী নদীর সঙ্গে রাইনখিয়াংয়ের মূল সঙ্গমস্থল রাইনখিয়াংমুখ থেকে ৩০ কিলোমিটার উজানে। নদীটি তরঙ্গমুখর উচ্ছল এবং ৭৭ কিলোমিটার দীর্ঘ। গোবাচ্ছরিমুখ পর্যন্ত আর্দ্র মৌসুমে নদীটিতে নৌচলাচলের জন্য প্রয়োজনীয় নাব্যতা থাকে এবং এর আরও উজানে শুধু কাঠের গুঁড়ি এবং বাঁশ ভাসিয়ে পরিবহন করা হয়। থেগা কর্ণফুলীর প্রধান উপনদীগুলোর একটি। এটি বরকল ও সুবলংয়ের আরও উজানে কর্ণফুলীর সাথে মিলিত হয়ে কাপ্তাই লেকে পতিত হয়েছে। মিজোরামের পূর্বাঞ্চলীয় পর্বতশ্রেণি থেকে উৎসারিত হয়ে কিছু ক্ষুদ্র স্রোতধারা বাঘাইছড়ি এলাকায় একত্রে মিলিত হয়ে কাসালং নদীর সৃষ্টি করেছে। এটি কেদারমারাতে এসে কাপ্তাই হ্রদে পড়েছে। নদীটি খরস্রোতা এবং ৬৫ কিলোমিটার দীর্ঘ। খাগড়াছড়ির বাটনাতলি পাহাড় থেকে উৎসারিত হালদা দক্ষিণ দিকে প্রবাহিত হয়ে মধুনাঘাটের কাছে কর্ণফুলীর সাথে মিলিত হয়েছে। নদীটি খরস্রোতা এবং দৈর্ঘ্য ৮৮ কিলোমিটার। কাউখালির কাছে কিছু ক্ষুদ্র স্রোতধারা মিলিত হয়ে ইছামতী নদী সৃষ্টি করেছে। এটি কর্ণফুলী নদীর একটি ছোট উপনদী, যার দৈর্ঘ্য মাত্র ৩০ কিলোমিটার। নদীটি রাঙ্গুনিয়ার কাছে কর্ণফুলীতে মিলিত হয়েছে। মিজোরামের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় পাহাড় থেকে উৎসারিত কিছু ক্ষুদ্র স্রোতধারা বান্দরবান জেলার নাইক্ষংছড়িতে মিলিত হয়ে সম্মিলিত ধারা বাকখালী নদীর সৃষ্টি করেছে। এ নদীটি নাইক্ষ্যংছড়ি এবং কক্সবাজার জেলার রামুর মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে মহেশখালী চ্যানেলে পড়েছে। খরস্রোতা নদীটির দৈর্ঘ্য প্রায় ৬৭ কিলোমিটার। মাইনি ত্রিপুরার পূর্বাঞ্চলীয় পাহাড় থেকে উৎপন্ন কিছু ক্ষুদ্র স্রোতধারা খাগড়াছড়ির দিঘীনালার কাছে মিলিত হয়েছে। সম্মিলিত এই প্রবাহই মাইনি নদী নামে পরিচিত। নদীটি দিঘীনালা এবং লংগদুর মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে কেদামারার কাছে কাপ্তাই হ্রদে গিয়ে পড়েছে। ৯১ কিলোমিটার দীর্ঘ নদীটিও খরস্রোতো। ত্রিপুরার পূর্বাঞ্চলীয় পাহাড় শ্রেণি থেকে উৎসারিত কিছুসংখ্যক ক্ষুদ্র স্রোতধারা খাগড়াছড়ি জেলার পানছড়িতে এসে মিলিত হয়ে চিংগ্রী নামে প্রবাহিত হচ্ছে। পাহাড়ি এই নদীটি দক্ষিণ দিকে প্রবাহিত হয়ে পানছড়ি, খাগড়াছড়ি, মহালছড়ির মধ্য দিয়ে রাঙ্গামাটি জেলার নানিয়ারচর উপজেলার কাছে কাপ্তাই হ্রদে পতিত হয়েছে। খরস্রোতা নদীটির দৈর্ঘ্য প্রায় ৮৫ কিলোমিটার।

পার্বত্য অঞ্চলের নদীপ্রণালির আরেক গুরুত্বপূর্ণ নদী হলো মিয়ানমারের আরাকান পর্বত থেকে উৎপন্ন সাঙ্গু নদী, যা বান্দরবান জেলার থানচি উপজেলাধীন রিমার্কি নামক স্থান দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। চট্টগ্রামের খানখানাবাদের কাছে বঙ্গোপসাগরে পতিত হওয়া নদীটির দৈর্ঘ্য ২৯৫ কিলোমিটার। চাঁদখালি ও ধলু খাল এর প্রধান উপনদী। এছাড়া বান্দরবানের আলিকদম উপজেলার ময়ভার পাহাড় থেকে উৎপন্ন মাতামুহুরী একটি খরস্রোতা নদী। নদীটি বান্দরবান জেলার আলিকদম ও লামা উপজেলা এবং কক্সবাজার জেলার চকরিয়া উপজেলার মধ্য দিয়ে উত্তর-পশ্চিমাভিমুখে প্রবাহিত হয়ে সাফলাপুরের (চকরিয়া, কক্সবাজার) কাছে মহেশখালী চ্যানেলে পতিত হয়েছে। নদীটির দৈর্ঘ্য ১৪৮ কিলোমিটার। নাফ দেশের সর্বদক্ষিণে মিয়ানমার ও বাংলাদেশের মধ্যকার সীমান্তরেখা বরাবর প্রবাহিত ৬২ কিমি দীর্ঘ একটি নদী। মিয়ানমারের উত্তরাঞ্চলীয় পর্বত শ্রেণি থেকে উৎসারিত হয়ে নদীটি কক্সবাজার জেলাধীন উখিয়া উপজেলার পালংখালির কাছ দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। এরপর দক্ষিণ দিকে প্রবাহিত হয়ে বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়েছে। এই নদীপ্রণালির আরেক গুরুত্বপূর্ণ নদী হচ্ছে ফেনী। ত্রিপুরার পূর্বাঞ্চলীয় পর্বত থেকে উৎপন্ন হয়ে নদীটি খাগড়াছড়ি জেলার মাটিরাঙ্গা উপজেলার বেলছড়ি নামক স্থান দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। এরপর নদীটি খাগড়াছড়ি জেলার রামগড়, চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি ও মিরসরাই এবং ফেনী জেলার ছাগলনাইয়া, ফেনী সদর ও সোনাগাজী উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়েছে।

নৌরুটের প্রকৃতি

তবে কর্ণফুলীই পার্বত্য অঞ্চলের নদীপ্রণালির মূল নদী। এর প্রধান উপনদীগুলো হলো রাইনখিয়াং, সুবলং, থেগা, কাসালং, ইছামতী ও হালদা। কর্ণফুলীর প্রধান শাখা দুটির নাম সুয়ালক এবং বোয়ালখালী। কাপ্তাই নামক স্থানে এ নদীর ওপর বাঁধ নির্মাণ করে দেশের একমাত্র জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র গড়ে তোলা হয়েছে। বরকল এবং কাপ্তাইয়ের কাছে কর্ণফুলী নাব্য, কিন্তু বরকলের উজানে কর্ণফুলী অগভীর। কাপ্তাই বাঁধ নির্মাণের ফলে কর্ণফুলীর স্বাভাবিক প্রবাহ বাধাপ্রাপ্ত হয় এবং একটি বিশাল এলাকা জুড়ে কৃত্রিম হ্রদের সৃষ্টি হয়। মানবসৃষ্ট এ হ্রদ সারা বছর অত্র এলাকার অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহনের জন্য ব্যবহৃত হয়। শুষ্ক মৌসুমে বাঁধের ভাটিতে খুব সামান্য পানির প্রবাহ থাকে। প্রয়োজন অনুযায়ী মাঝে মাঝে বাঁধের জলকপাট খুলে দিয়ে জলাধারে জমাকৃত পানি ছেড়ে ভাটির দিকে প্রবাহ ঠিক রাখা হয়। বন্দর নগরী চট্টগ্রাম এ নদীর মোহনায় অবস্থিত।

এই নদীরই গুরুত্বপূর্ণ একটি নৌরুট হলো চট্টগ্রাম-কাপ্তাই বাঁধ নৌরুট। রুটটির প্রকৃতি বুঝতে হলে নদীর হাইড্রোলজিক্যাল, মরফোলজিক্যাল, সেডিমেন্টের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে জানতে হবে সবার আগে। এ নিয়ে একটি সম্ভাব্যতা সমীক্ষা পরিচালনা করেছে ইনস্টিটিউট অব ওয়াটার ম্যানেজমেন্ট (আইডব্লিউএম)। কনসালট্যান্সি সার্ভিসেস ফর ইনল্যান্ড ওয়াটারওয়ে ড্রেজিং ফিজিবিলিটি স্টাডি বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ফ্যাসিলিটেশন স্টাডিজ প্রজেক্টের আওতায় মোট ৫৩টি নৌরুটের ওপর সমীক্ষাটি চালানো হয়েছে। চট্টগ্রাম-কাপ্তাই বাঁধ নৌরুটটি এগুলোর একটি।

১৯৩ কিলোমিটার দীর্ঘ কর্ণফুলীর ওপর দিয়ে বয়ে চলা চট্টগ্রাম-কাপ্তাই বাঁধ নৌরুটটির দৈর্ঘ্য প্রায় ৬৫ কিলোমিটার। কর্ণফুলী একটি পাহাড়ি নদী এবং প্রান্তিক প্রবাহ থেকে ৮০ কিলোমিটার উজানে কাপ্তাই বাঁধ নির্মাণের ফলে নদীর বৈশিষ্ট্য অনেকটাই বদলে গেছে। রুট ৬ অর্থাৎ চট্টগ্রাম-কাপ্তাই বাঁধ রুটটি পড়েছে নদীর ডাউনস্ট্রিমে, যার বিস্তৃতি কাপ্তাই বাঁধ থেকে চট্টগ্রাম বন্দর পর্যন্ত। নদীর এই অংশটিতে মোটামুটি জোয়ারের প্রভাব রয়েছে এবং কিছুটা আঁকাবাঁকা। হালদা এর প্রধান উপনদী।

নৌরুটটির নিম্নাংশে অর্থাৎ চট্টগ্রাম বন্দর প্রান্তে ৭০০ মিটার প্রশস্ত। আর আপস্ট্রিমে প্রশস্ততা ৪০০ মিটারের মতো। তবে নৌরুটটি কাপ্তাই বাঁধের দিকে যত এগিয়েছে এর গভীরতা ও প্রশস্ততা তত হ্রাস পেয়েছে। শেষ পর্যন্ত এর প্রশস্ততা ১০০ মিটারে গিয়ে ঠেকেছে।

মরফোলজিক ও সেডিমেন্টের বৈশিষ্ট্য

ডাউনস্ট্রিমে কর্ণফুলী জোয়ার-ভাটা প্রভাবিত হওয়ায় সংসক্তিপ্রবণ ও অসংসক্তিপ্রবণ দুই ধরনের সেডিমেন্ট বহন করে নদীটি। এই সেডিমেন্টের কিছু ইন্টার-টাইডাল জোন ও জোয়ারের প্রভাব কমে গেলে জমা হয়। বর্ষা মৌসুমে ইন্টার-টাইডাল ও আপস্ট্রিম জোনে স্রোতের প্রকোপ বেড়ে গেলে এই সেডিমেন্ট আবারও স্থানান্তরিত হতে পারে। এছাড়া বর্ষা মৌসুম এলে পাহাড়ি এলাকা থেকে নদীটি আরও বেশি পরিমাণে পলি বহন করে নিয়ে আসে। ফলে নদীর আপস্ট্রিমে বালির তীর গড়ে ওঠে। রুটটির ডাউনস্ট্রিম অংশও জোয়ার-ভাটা প্রভাবিত এবং সংসক্তিপ্রবণ সেডিমেন্ট ও পলি বহন করে থাকে।

রুটটির শ্রেণি

গভীরতা অনুযায়ী বাংলাদেশের নৌ-রুটগুলোকে চারটি পৃথক শ্রেণিতে বিভাজিত করা হয়েছে। ৩ দশমিক ৬৬ থেকে ৩ দশমিক ৯৬ মিটার গভীরতা থাকলে সেই নৌ-রুটকে ক্লাস-১ বা প্রথম শ্রেণির হিসেবে গণ্য করা হয়। ক্লাস-২ বা দ্বিতীয় শ্রেণিতে রাখা হয় ২ দশমিক ১৩ থেকে ২ দশমিক ৪৪ এবং ৩ দশমিক ৬৬ মিটারের কম গভীর নৌ-রুটকে। ২ দশমিক ১৩ মিটারের কম অর্থাৎ ১ দশমিক ৫২ থেকে ১ দশমিক ৮৩ মিটারের মধ্যে থাকলে সেই নৌ-রুটকে ধরা হয় ক্লাস-৩ বা তৃতীয় শ্রেণির নৌ-রুট। গভীরতা ১ দশমিক ৫২ মিটারের কম হলে সেটি ক্লাস-৪ বা চতুর্থ শ্রেণির নৌ-রুট। বিআইডব্লিউটিএর শ্রেণিবিভাজন অনুযায়ী চট্টগ্রাম-কাপ্তাই বাঁধ নৌ-রুটটি তৃতীয় শ্রেণিভুক্ত। শুষ্ক মৌসুমে রুটটির সর্বনিম্ন গভীরতা থাকে তিন ফুটের মতো। তবে বর্ষা মৌসুমে গভীরতা অনেকটাই বেড়ে যায় এবং তা ২০ ফুটে উন্নীত হয়। রুটটিতে চলাচলকারী নৌযান মূলত দেশীয় নৌকা।

নাব্যতার ধরন

কর্ণফুলীর এই অংশটি তুলনামূলক বাঁকবিশিষ্ট। তবে খাড়া বাঁক সে অর্থে নেই। কাপ্তাই বাঁধ ও আদুরপাড়ায় ৩৫০ মিটার ব্যাসার্ধে ৯০ ডিগ্রি বাঁক রয়েছে।

রুটটি শুরু হয়েছে কাপ্তাই হ্রদ থেকে যেখানে জলবিদ্যুৎকেন্দ্রটি অবস্থিত। কোনো লক না থাকায় কাপ্তাই হ্রদ থেকে কর্ণফুলী নদীতে নৌ চলাচলের কোনো সুযোগ নেই। কাপ্তাই হ্রদ থেকে প্রায় বড়াইচারি পর্যন্ত নদীটি বিভিন্ন পাহাড়ের মধ্য দিয়ে এঁকেবেঁকে প্রবাহিত হয়েছে। বড়াইচারি কাছে নদীকূলে পাথরের উপস্থিতি রয়েছে।

রাঙ্গামাটি ও বান্দরবানের মধ্যে ছোট একটি ফেরি ক্রসিং রয়েছে। ফকিরকিলের কাছে ৩৫০ মিটার দীর্ঘ একটি সেতু রয়েছে, যার পিলারের মধ্যে দূরত্ব ৪০ মিটার। চট্টগ্রামের পূর্ব দিকে নদীটির ওপর সিঙ্গেল ট্র্যাকের রেল ও সড়ক সেতু নির্মিত হয়েছে। আর দক্ষিণে রয়েছে একটি চার লেনের সেতু। চট্টগ্রামে নদীটিতে বিপুলসংখ্যক নৌযানের চলাচল রয়েছে। সেই সাথে রয়েছে অনেকগুলো ছোট ছোট বার্থ।

তাৎপর্য

কাপ্তাই বাঁধের উজানে বড় উপনদীগুলো নাব্য এবং রাঙ্গামাটি থেকে ছোট ছোট লঞ্চ চলাচল করে। আর কর্ণফুলী নদী কাপ্তাই পর্যন্ত নাব্য থাকে। বাঁধের উজানে ও ভাটিতে মাথার ওপর দিয়ে ট্রলির মাধ্যমে নৌকা পারাপারের ব্যবস্থা রয়েছে। তবে নাব্যতা বৃদ্ধির মাধ্যমে নৌরুটটি উন্নয়ন করা গেলে আধুনিক নৌযান চলাচলেরও সুযোগ রয়েছে। এতে ওই এলাকার মানুষের যাতায়াতের যেমন সুবিধা হবে, একইভাবে সহজে ও সাশ্রয়ে পণ্য পরিবহনেরও সুযোগ তৈরি হবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here