সফলভাবে প্রকল্প বাস্তবায়ন থেকে শুরু করে দক্ষ নৌপরিবহন ব্যবস্থা-সবক্ষেত্রেই প্রয়োজন সুস্পষ্ট ব্যবহারিক ও প্রায়োগিক জ্ঞান। এই জ্ঞান পরিবেশগত, কারিগরি ও পরিচালন সম্পর্কিত। সেই সাথে বিষয়ভিত্তিক দক্ষতারও বিকল্প নেই, যার সম্মিলনে তৈরি হয় প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা। সম্প্রতি কক্সবাজারে অনুষ্ঠিত অভ্যন্তরীণ এক প্রশিক্ষণে বিভিন্ন বিষয়ে তাত্ত্বিক ও প্রায়োগিক জ্ঞানের পাশাপাশি দক্ষতার ধারণা পেয়েছেন বিআইডব্লিউটিএ এবং প্রকল্প বাস্তবায়ন ইউনিটের কর্মকর্তারা।
বাংলাদেশ আঞ্চলিক অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন প্রকল্প-১(বিআরডব্লিউটিপি-১) এর আওতায় বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) এবং প্রকল্প বাস্তবায়ন ইউনিটের (পিআইইউ) কর্মকর্তাদের জন্য প্রশিক্ষণ কর্মসূচিটি আয়োজন করে ট্রেইনিং অ্যান্ড টেকনোলজি ট্রান্সফার (টিটিটি)। ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের (আইডিএ) অর্থায়নে ২৫-২৭ ডিসেম্বর, ২০২৪ কক্সবাজারের হোটেল সিগালে প্রশিক্ষণ কর্মসূচিটি অনুষ্ঠিত হয়।
উদ্দেশ্য
প্রশিক্ষণের উদ্দেশ্য ছিল পরিবেশ এবং বিআরডব্লিউটিপি-১ প্রকল্প, অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন ও জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এসডিজি) সাথে এর সম্পর্কের মৌলিক বিষয়গুলো সম্পর্ক ধারণা দেওয়া। সেই সাথে পরিবেশ সম্পর্কিত বিভিন্ন আইন, নীতিমালা, নীতি, চুক্তি এবং উন্নয়ন খাতে এর ভূমিকা সম্পর্কে জানা। আরও যেসব বিষয় প্রশিক্ষণে গুরুত্ব পায় সেগুলো হলো পরিবেশ ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা (ইএমপি) ও প্রশমন ব্যবস্থা, জীববৈচিত্র্য ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা (বিএমপি) ও প্রশমন পদক্ষেপ, ড্রেজড ম্যাটেরিয়াল ব্যবস্থাপনা ও ডিজিটাল তদারকি ব্যবস্থা, গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ ও পলিউট্যান্ট ইনভেন্টরি এবং পলিসি ইন্টারভেনশন, পরিবেশগত ও সামাজিক প্রভাব মূল্যায়ন (এএসআইএ), অবকাঠামো ও নির্মাণখাতের গুণগত মান পরীক্ষা, পাবলিক প্রকিউরমেন্ট রুলস (পিপিআর), ২০০৮ এবং মৌলিক কম্পিউটার শিক্ষা।
প্রশিক্ষণের ধরন
পুরো প্রশিক্ষণ কর্মসূচিটিই ছিল ইন্টারঅ্যাক্টিভ এবং অভিজ্ঞতার আলোকে শিখনকে গুরুত্ব দিয়ে। ক্লাসরুম সেশনে বিষয়ভিত্তিক বিশেষজ্ঞরা সংশ্লিষ্ট বিষয়ের তাত্ত্বিক এবং ব্যবহারিক বিভিন্ন দিকের ওপর আলোকপাত করেন। গ্রুপ ডিসকাশনে অংশগ্রহণকারীরা উদ্ভ‚ত বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে তাদের অভিজ্ঞতা বিনিময় করেন। জটিল ধারণাগুলো সম্পর্কে যাতে ভালো বোঝাপড়া তৈরি হয় সেজন্য মাল্টিমিডিয়া প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে অংশগ্রহণকারীদের সামনে সেগুলো তুলে ধরা হয়। এ ছাড়া প্রশিক্ষণের কার্যকারিতা আরও উন্নত করতে মতামত সংগ্রহ করা হয় অংশগ্রহণকারীদের কাছ থেকে।
প্রশিক্ষণের প্রথম দিন
প্রশিক্ষণের প্রথম দিন ছিল ২৬ ডিসেম্বর, ২০২৪। ওইদিন সকালে বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান কমডোর আরিফ আহমেদ মোস্তফা এবং বিআরডব্লিউটিপি-১ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ও কর্তৃপক্ষের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী জনাব মোঃ আইয়ুব আলীর স্বাগত বক্তব্যের মধ্য দিয়ে প্রশিক্ষণ কর্মসূচি শুরু হয়। অংশগ্রহণকারী সবাইকে স্বাগত জানিয়ে প্রশিক্ষণের উদ্দেশ্য সম্পর্কে ধারণা দেন তারা।
এরপর বিআরডব্লিউটিপি-১ প্রকল্পের বিস্তারিত অংশগ্রহণকারীদের সামনে তুলে ধরা হয়। এ সময় অংশগ্রহণকারীদের কাছ থেকে আসা বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হয়।

এদিন প্রথম ব্রিফ সেশনটি ছিল পরিবেশগত সুরক্ষা সংক্রান্ত। সেশনটি পরিচালনা করেন পরিবেশ বিশেষজ্ঞ মোঃ মিজানুর রহমান। সুরক্ষা ব্যবস্থা কী, আন্তর্জাতিক অর্থায়ন সংস্থাগুলোর পরিবেশগত সুরক্ষা নীতি কেমন, বাংলাদেশে এর আইনগত দিক, উন্নয়ন প্রকল্পে সুরক্ষা শর্ত, বিআরডব্লিউটিপি-১ প্রকল্পের অধীনে পরিবেশগত সুরক্ষামূলক পদক্ষেপসহ এ সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন তিনি।
মিজানুর রহমান তার উপস্থাপনায় বলেন, যেকোনো উন্নয়ন প্রকল্প চলাকালে জনগণ ও পরিবেশকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করতে সুরক্ষা নীতি একটি অপরিহার্য হাতিয়ার। কোনো প্রকল্প গ্রহণ ও ডিজাইনের সময় সুরক্ষা নীতি প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সম্ভাব্য পরিবেশগত ও সামাজিক ঝুঁকি নিরূপণে সহায়তা করে। প্রকল্প বাস্তবায়নকালীন সময়ে এই নীতি কার্যকরভাবে ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা ও ইতিবাচক প্রভাব বাড়িয়ে দিতে ভূমিকা রাখে।
উন্নয়ন প্রকল্পে সুরক্ষা নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত কিছু রীতি-রেওয়াজ পরিপালন করতে হয়। এর মধ্যে রয়েছে পরিবেশগত ও সামাজিক আচরণবিধি (সিওসি); যৌন নিপীড়ন ও নির্যাতন (এসইএ) এবং পোশাগত স্বাস্থ্য ও সুরক্ষা (ওএইচএস); পারফরম্যান্স সিকিউরিটি; নির্মাণ পরিবেশ ও সামাজিক ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা (ই-ইএসএমপি); পরিবেশগত চর্চা বিধি (ইকপ) এবং পরিবেশগত ও সামাজিক প্রতিশ্রুতি পরিকল্পনা (ইএসসিপি)।
বিআরডব্লিউটিপি-১ প্রকল্পের প্যাকেজভিত্তিক সুরক্ষার অবস্থা কী সে তথ্য তুলে ধরেন এই বিশেষজ্ঞ। তাঁর উপস্থাপনা অনুযায়ী, এস১২/৩ প্যাকেজের পরামর্শক প্রতিষ্ঠান তাদের নবম প্রতিবেদন জমা দিয়েছে এবং তা বিশ্বব্যাংকের পর্যালোচনাধীন রয়েছে। এস১৭ প্যাকেজের পরামর্শক প্রতিষ্ঠান তাদের তৃতীয় প্রতিবেদন জমা দিয়েছে এবং প্রকল্প বাস্তবায়নকারী ইউনিট তা পর্যালোচনা করে দেখছে।
পেশাগত স্বাস্থ্য ও সুরক্ষা নিশ্চিতের ক্ষেত্রে করণীয় সম্পর্কেও বিস্তারিত তুলে ধরেন তিনি। এর অংশ হিসেবে নির্মাণ সাইটে কর্মরত সব কর্মকর্তা, কর্মী ও শ্রমিকদের যথাযথ ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রী (পিপিই) পরিধান নিশ্চিত করতে হবে। যেমন মাথার সুরক্ষায় হেলমেট, চোখ ও মুখের সুরক্ষায় গগলস পরিধান করতে হবে। উচ্চ শব্দের সম্ভাবনা থাকলে সেক্ষেত্রে শ্রবণ সুরক্ষা সামগ্রী পরিধান করতে হবে। হাত ও বাহুর সুরক্ষায় ব্যবহার করতে হবে গ্লাভস, ফিঙ্গার গার্ড, আর্ম কভার ও এলবো প্রটেকশন গ্লাভসের মতো সুরক্ষা সামগ্রী। পা ও আঙুলের সুরক্ষায় সুরক্ষা জুতা অবশ্যই পরে নিতে হবে। আর নদীতে কাজের সময় বাধ্যতামূলকভাবে পরতে হবে লাইফ জ্যাকেট।
সেই সাথে সব কর্মীর স্বাস্থ্য বিমা নিশ্চিত করাও জরুরি। এ ছাড়া কর্মীদের জন্য রাখতে হবে পর্যাপ্ত খাবার পানি, বিশ্রামের জায়গা, নারী ও পুরুষদের জন্য আলাদা টয়লেট এবং ধূমপানমুক্ত অফিস ক্যাম্পাসের ব্যবস্থা।
দুর্ঘটনা এড়াতে সঠিক ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা থাকতে হবে। কমিউনিটির সুরক্ষায় ড্রেজিং এলাকা সুস্পষ্টভাবে আলাদা করে সুরক্ষিত করতে হবে। পাশাপাশি কর্মরত সব কর্মীর জন্য জরুরি প্রয়োজনে ফার্স্ট এইড বক্সের ব্যবস্থা রাখতে হবে। কেউ দুর্ঘটনায় পড়লে দ্রুত যাতে চিকিৎসার জন্য পার্শ্ববর্তী হাসপাতালে নেওয়া যায় সে লক্ষ্যে সার্বক্ষণিক অ্যাম্বুলেন্স সুবিধা থাকাও বাঞ্ছনীয়।
সুরক্ষা ব্যবস্থা আরও উন্নত করতে বেশ কিছু সুপারিশও করেন তিনি। এর মধ্যে আছে সুপারভিশন কনসালট্যান্টের সুরক্ষা কর্মকর্তা খণ্ডকালীনের পরিবর্তে পূর্ণকালীন হওয়া প্রয়োজন। এ ছাড়া টিইসিতে একজন ক্রয় কর্মকর্তা রাখা যেতে পারে, যিনি দরপত্রের শর্তে পরিবেশগত ও সামাজিক বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত করবেন। সিইএপি ছাড়া নির্মাণকাজ শুরু করা সমীচিন হবে না। সর্বোপরি পিআইইউর সুরক্ষা কর্মকর্তার দায়িত্ব প্রকল্প প্রকৌশলীকে দেওয়া যেতে পারে।
ওইদিনই ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা নিয়ে আরেকটি সেশন পরিচালনা করেন কর্তৃপক্ষের নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের পরিচালক জনাব মোঃ সাইফুল ইসলাম। ট্রাফিক ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা কী, এর উদ্দেশ্য, নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের মিশন ও ভিশন, নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত আইন ও বিধি নিয়ে আলোচনা করেন তিনি। পাশাপাশি তিনি নৌপথে নিরাপত্তা বিধান ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে বিভিন্ন কার্যক্রম, নৌ-দুর্ঘটনার কারণ ও প্রতিকার, ট্রাফিক সার্ভে এবং বাংলাদেশ-ভারত প্রটোকল রুট নিয়ে বিস্তারিত তথ্য পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে তুলে ধরেন।
নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের কাজ হচ্ছে সহজলভ্য, নিরাপদ, পরিবেশবান্ধব এবং টেকসই অভ্যন্তরীণ ও উপকূলীয় নৌপরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে সহায়তা করা, যাতে করে আধুনিক সুযোগ-সুবিধাসম্বলিত ও যাত্রীবান্ধব নৌযানের মাধ্যমে নৌ চলাচল নিরাপদ, সুশৃঙ্খল ও নিয়মানুগ হয়। সেই সাথে অভ্যন্তরীণ ও উপকূলীয় নৌপথে দুর্ঘটনা হ্রাস পায়।
এ লক্ষ্যকে সামনে রেখেই ২০০৮ সালের ১৫ মে ২৩৫ জন জনবল নিয়ে বিভাগটির কার্যক্রম শুরু হয় বলে জানান মোঃ সাইফুল ইসলাম। প্রেজেন্টেশনে তিনি বলেন, আগে বন্দর ও পরিবহন বিভাগের একটি শাখার মাধ্যমে এসব কাজ পরিচালিত হতো। এখন নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক, সার্ভে ও উন্নয়ন, কার্গো সেল, বৈদেশিক পরিবহন, ভাড়া ও উন্নয়ন এবং প্রশাসন এই ছয়টি শাখার সমন্বয়ে বিভাগটি কার্যক্রম পরিচালনা করছে। সারা দেশে বর্তমানে ২২টি নদীবন্দরে নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের কাজ বিস্তৃত।
অভ্যন্তরীণ ও উপকূলীয় নৌপথে নৌযানের অনুকূলে রুট পারমিট অনুমোদন নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের অন্যতম কাজ। এখন পর্যন্ত তারা ২২৯টি রুটে ১ হাজার ১৭৮টি যাত্রীবাহী নৌযানের রুট পারমিট দিয়েছে বলে নৌ-নিট্রা পরিচালক তার উপস্থাপনায় জানান। এর মধ্যে এমভি ৩১১টি, এমএল ২৬৩টি, এমবি ১৮৫টি এবং স্পিডবোট ৪১৯টি। পাশাপাশি বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃক প্রদত্ত অন্যান্য নৌযানের পরিসংখ্যানও তুলে ধরেন তিনি।
নিরাপদ নৌ-চলাচল নিশ্চিতসহ অন্যান্য ব্যবস্থার পাশাপাশি আইন বা বিধি ভঙ্গের অভিযোগে সংশ্লিষ্ট নৌযানের বিরুদ্ধে মেরিন কোর্টে মামলা দায়েরের এখতিয়ার রয়েছে বিভাগটির। এই ক্ষমতা তারা যথাযথভাবে প্রয়োগ করছেন বলে জানান পরিচালক।
নৌ-দুর্ঘটনার প্রধানতম কারণ হিসেবে অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহনকে দায়ী করেন মোঃ সাইফুল ইসলাম। পাশাপাশি ঝড়ের সংকেত বা আবহাওয়া পূর্বাভাস না মানা, যথাযথ প্রশিক্ষণ না থাকা মাস্টার/ড্রাইভার দিয়ে নৌযান চালানো, নৌযানের অনুমোদিত নকশা না মানা, নৌযান পরিচালনায় প্রতিযোগিতার মনোভাব, রাতে নিষিদ্ধ ঘোষিত বালুবাহী নৌযান পরিচালনা সর্বোপরি প্রাকৃতিক দুর্যোগও নৌ-দুর্ঘটনার জন্য দায়ী। এর প্রতিকার হিসেবে বেশ কিছু বিষয় তুলে ধরেন তিনি।
প্রটোকল রুট ও পোর্ট অব কলের সংখ্যা, বাংকারিং স্টেশনের পাশাপাশি এ সংক্রান্ত বিভিন্ন পরিসংখ্যান নৌ-নিট্রা পরিচালক তাঁর উপস্থাপনায় তুলে ধরেন। প্রটোকল রুটে পণ্য পরিবহনে বাংলাদেশ কীভাবে লাভবান হচ্ছে সেই আলোচনায় তিনি দেখান যে, প্রটোকল রুটে পণ্য পরিবহন, পণ্য ওঠানো-নামানো ও অন্যান্য কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করছেন প্রায় এক লাখ মানুষ। দূরত্ব কম হওয়ায় প্রটোকল রুট দিয়ে নির্মাণ সামগ্রী আমদানি করার কারণে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রাও সাশ্রয় হচ্ছে।
আগে কেবলমাত্র বিআইডব্লিউটিএর নিবন্ধন সনদ ও সার্ভে সনদপ্রাপ্ত যাত্রীবাহী নৌযানকে ফি বা অর্থ ছাড়া সময়সূচি প্রদান করা হতো। কিন্তু বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ নৌপথে চলাচলকারী সব ধরনের নৌযানকে রুট পারমিট বা সময়সূচি প্রদান তথা আইনের আওতায় আনা ও রাজস্ব বাড়াতে ২০১৯ সালে এ সংক্রান্ত বিধি সংশোধন করা হয়। সংশোধিত বিধিমালা অনুযায়ী অভ্যন্তরীণ নৌপথে চলাচলকারী ৫৫ ধরনের নৌযানের ফি নির্ধারণপূর্বক রুট পারমিট জারি করা হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে এ খাতে শৃঙ্খলা যেমন এসেছে, একইভাবে সরকারের রাজস্বও বেড়েছে। আর এই কাজটি নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের কার্গো সেল শাখা করছে বলে জানান বিভাগটির পরিচালক।
‘সেবা, পণ্য, কাজ এবং নন-কনসাল্টিং সেবাসমূহ ক্রয়’ শীর্ষক একটি সেশন পরিচালনা করেন বিআরডব্লিউটিপি-১ এর জাতীয় ক্রয় পরামর্শক (এনপিসি) অ্যাডভোকেট ও প্রকৌশলী মোঃ আলি আকবর পাটোয়ারি। তিনি তাঁর উপস্থাপনায় বিআরডব্লিউটিপি-১ প্রকল্পের ক্রয় কার্যক্রম যেসব নীতিমালার আলোকে তার বিস্তারিত তুলে ধরেন। এসব নীতিমালার মধ্যে আছে বিশ্বব্যাংকের আইবিআরডি ঋণ এবং আইডিএ ঋণ ও অনুদানের আওতায় পণ্য, কাজ এবং নন-কনসাল্টিং সেবাসমূহ নীতিমালা; বিশ্বব্যাংকের আইবিআরডি ঋণ এবং আইডিএ ঋণ ও অনুদানের আওতায় পরামর্শক বাছাই ও নিয়োগ; আদর্শ দরপত্র মূল্যায়ন ফরম এবং মূল্যায়ন প্রতিবেদনের নমুনা ফরম। আরও আছে বাংলাদেশ সরকারের সরকারি ক্রয় আইন, ২০০৬ এবং সরকারি ক্রয় বিধি, ২০০৮।
ক্রয় পদ্ধতি সম্পর্কে প্রশিক্ষণার্থীদের বিস্তারিত ধারণা দেন তিনি। উপস্থাপনায় তিনি দেখান, ক্রয়ের ক্ষেত্রে স্বীকৃত কিছু পদ্ধতি রয়েছে। এর একটি হলো আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতামূলক বিডিং (আইসিবি)। এ ছাড়া জাতীয় প্রতিযোগিতামূলক বিডিং, সংস্থার কাছে গ্রহণযোগ্য কর্মকাঠামো চুক্তির অধীনে, সরাসরি চুক্তি ও শপিংয়ের মাধ্যমেও ক্রয় সম্পন্ন হয়ে থাকে।
জাতীয় প্রতিযোগিতামূলক বিডিংয়ে বেশ কিছু প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়। যেমন, বিডিং পরবর্তীতে সর্বনিম্ন দরদাতা এবং অন্য দরদাতাদের সাথে কোনো ধরনের দর-কষাকষিতে না যাওয়া। দরপত্র যেখানে গ্রহণ করা হবে খুলতেও হবে একই স্থানে, জনসমক্ষে। লটারির মাধ্যমে ঠিকাদার নির্বাচনের কোনো সুযোগ নেই। বিডারের সুনির্দিষ্ট অভিজ্ঞতা ও যোগ্যতা থাকাও বাধ্যতামূলক।

পরামর্শক সেবা ক্রয় পদ্ধতি সম্পর্কেও প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণকারীদের ধারণা দেওয়া হয় এই সেশনে। বলা হয়, পরামর্শকের সেবা ক্রয়ের বিভিন্ন পদ্ধতি রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো-মানভিত্তিক নির্বাচন, নির্ধারিত বাজেটের মধ্যে নির্বাচন, সর্বনিম্ন ব্যয়ের পরামর্শক নির্বাচন, পরামর্শকের যোগ্যতার ভিত্তিতে নির্বাচন, একক উৎস থেকে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নির্বাচন এবং একক উৎস থেকে ব্যক্তি পরামর্শক নির্বাচন।
সম্ভাব্য সব বড় ক্রয় বিশ্বব্যাংকের এক্সটার্নাল এবং ইউনাইটেড নেশন্স ডেভেলপমেন্ট বিজনেসে (ইউএনডিবি) প্রকাশিত জেনারেল প্রকিউরমেন্ট নোটিশে (জিপিএন) ঘোষণা দিতে হয়। পাশাপাশি শর্ত অনুযায়ী বিশ্বব্যাংকের অনলাইন স্টেপ সিস্টেম ব্যবহার করে সেমি-অ্যানুয়ালি তা হালনাগাদ করতে হয়। সেই সাথে চুক্তি সংক্রান্ত তথ্য সেন্ট্রাল প্রকিউরমেন্ট ইউনিট (সিপিটিইউ) ও বিআইডব্লিউটিএর ওয়েবসাইটে দেওয়ার বিধান রয়েছে। আইসিবি বা আন্তর্জাতিক পরামর্শ সেবার ক্ষেত্রে তথ্য দিতে হয় ইউএনডিবি অনলাইনে। কাজ দেওয়ার দুই সপ্তাহের মধ্যেই তথ্য সরবরাহ সম্পন্ন করতে হয়।
প্রথম দিনের প্রশিক্ষণের শেষ সেশনটি ছিল তথ্য বিনিময় এবং গণমাধ্যমের সাথে যোগাযোগ সংক্রান্ত। দৈনিক যুগান্তরের বিশেষ প্রতিনিধি কাজী জেবেল সেশনটি পরিচালনা করেন। এ সময় তিনি তথ্য বিনিময় এবং গণমাধ্যমের সাথে যোগাযোগের গুরুত্ব ও প্রক্রিয়া নিয়ে আলাপ করেন।
প্রশিক্ষণে দ্বিতীয় দিন
প্রশিক্ষণ কর্মসূচির দ্বিতীয় দিন ছিল ২৭ ডিসেম্বর, ২০২৪। এদিন শুরুতেই মাল্টিমোডাল পরিবহন এবং সমন্বিত বন্দর ব্যবস্থার ওপর একটি সেশন অনুষ্ঠিত হয়। সেশনটি পরিচালনা করেন বিআইডব্লিউটিএর সাবেক পরিচালক ও সচিব সৈয়দ মনোয়ার হোসেন। এ সময় তিনি মাল্টিমোডাল পরিবহন ও সমন্বিত বন্দর ব্যবস্থা কী, এর সুবিধাই বা কতখানি সে সম্পর্কে অংশগ্রহণকারীদের ধারণা দেন। অংশগ্রহণকারীদের কাছ থেকে উত্থাপিত বিভিন্ন প্রশ্নেরও উত্তর দেন তিনি।
এরপর তীরভূমি ও নদীবন্দর ব্যবস্থাপনা শীর্ষক একটি সেশন পরিচালনা করেন কর্তৃপক্ষের বন্দর ও পরিবহন বিভাগের পরিচালক জনাব এ, কে, এম আরিফ উদ্দিন। এ সময় তিনি কর্তৃপক্ষের আধুনিক নদীবন্দর ব্যবস্থাপনা, বন্দর কর্মকর্তাদের কার্যক্রম এবং অধিক রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যে টার্মিনাল/পন্টুন/যাত্রী/কুলি ব্যবস্থাপনা কেমন হওয়া উচিত তা নিয়ে আলোচনা করেন। পাশাপাশি কর্তৃপক্ষের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট সমসাময়িক বেশ কিছু অমীমাংসিত বিষয়ের ওপরও আলোকপাত করেন তিনি।
দুই দিনব্যাপী প্রশিক্ষণ কর্মসূচির শেষ সেশনটি ছিল পরিবেশ সংক্রান্ত মৌলিক বিষয় ও বিআরডব্লিউটিপি-১ এর সাথে এর সম্পর্ক এবং পরিবেশগত ও সামাজিক ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা প্রশমন ও উন্নত করার ওপর। সেশনটি পরিচালনা করেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. তানভীর আহমেদ। ‘ফান্ডামেন্টালস অব ইনভায়রনমেন্ট, বায়োডাইভারর্সিটি কনজার্ভেশেন, এনভায়রনমেন্টাল ইম্প্যাক্টস অব বিআরডব্লিউটিপি প্রজেক্ট’ শীর্ষক এক উপস্থাপনায় তিনি পরিবেশগত ব্যবস্থাপনা ও প্রাণবৈচিত্র্য সংরক্ষণের গুরুত্ব, বাংলাদেশে এর আইনি ও নিয়ন্ত্রণমূলক কর্মকাঠামো, বিআরডব্লিউটিপি-১ প্রকল্পের (বিশেষ করে নদীতে ড্রেজিং ও অন্যান্য কার্যক্রম) পরিবেশগত প্রভাব, কীভাবে এই প্রভাব প্রশমিত করা যায় এবং প্রাকৃতিক সম্পদের টেকসই ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনের উপায় নিয়ে আলোচনা করেন তিনি।
পরিবেশগত ব্যবস্থাপনা হচ্ছে বায়োফিজিক্যাল অর্থাৎ জীব ও জড় সব ধরনের উপাদানের ব্যবস্থাপনা। আর জীববৈচিত্র্য হচ্ছে স্থলজ, সামুদ্রিক ও অন্যান্য জলজ জীবন্ত প্রাণী, উদ্ভিদ ও অণুজীবের বৈচিত্র্য। এই বৈচিত্র্য একই প্রজাতির মধ্যে যেমন একইভাবে এক প্রজাতি থেকে আরেক প্রজাতির মধ্যেও।
কেন এই জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ গুরুত্বপূর্ণ সেই আলোচনায় তিনি দেখান যে, জীববৈচিত্র্য রক্ষা ও সংরক্ষণ এবং জীবন্ত প্রাকৃতিক সম্পদগুলো টেকসইভাবে রক্ষা করা টেকসই উন্নয়নের জন্য অপরিহার্য। জীবন্ত প্রাকৃতিক সম্পদের প্রাথমিক উৎপাদন ও সংগ্রহ টেকসই ব্যবস্থাপনা এবং ইকোসিস্টেম সার্ভিস ধরে রাখার ক্ষেত্রেও এটা জরুরি। সর্বোপরি এটা গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের কারণে যাদের জীবিকা প্রভাবিত হয় তাদের জন্যও।
নানাভাবে এই প্রাণবৈচিত্র্য ঝুঁকিতে পড়তে পারে। প্রকল্প সম্পর্কিত ঝুঁকির ক্ষেত্রে সেটা নিরূপণ করাটা জরুরি। প্রাণবৈচিত্র্য এবং তার আবাসের ওপর প্রকল্প-সংশ্লিষ্ট ঝুঁকি চিহ্নিত করা হয় পরিবেশগত ও সামাজিক মূল্যায়নের মাধ্যমে। এক্ষেত্রে প্রাণবৈচিত্র্য বিশেষজ্ঞদের দ্বারা পরিবেশগত ও সামাজিক প্রভাব মূল্যায়ন (এএসআইএ), বেজলাইন স্টাডি সম্পাদন এবং প্রশমন ব্যবস্থার কার্যকারিতা ও সম্ভাব্যতা মূল্যায়ন করা হয়। এরপর প্রশমন অনুক্রম অনুযায়ী ও অংশীজনদের সাথে পরামর্শক্রমে ঝুঁকি ও প্রভাব ব্যবস্থাপনা করা হয়। এরপর সতর্কতামূলক পদ্ধতি গ্রহণ এবং অভিযোজিত ব্যবস্থাপনার উত্তম চর্চাগুলো প্রয়োগ করা হয়, যাতে প্রশমন ও ব্যবস্থাপনা উদ্যোগগুলো পরিবর্তিত পরিস্থিতিতেও কার্যকর থাকে।
প্রশমন অনুক্রমের দুটি অনুষঙ্গ-একটি প্রতিরোধমূলক এবং অন্যটি প্রতিকারমূলক। প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থায় প্রাণবৈচিত্র্যের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব আগে থেকেই ধারণা করে তা প্রতিরোধের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এক্ষেত্রে প্রকল্পের স্থান এমনভাবে নির্বাচন করা হয়, যা পরিবেশগত বা সামাজিকভাবে সংবেদনশীল নয় এবং বাসিন্দারা প্রকল্প এলাকা থেকে স্থানান্তর ব্যতিরেকে সেখানে অব্যাহতভাবে বসবাস করে যেতে পারেন।
আবার ক্ষতিকর প্রভাবের ব্যাপ্তি, মাত্রা ও গুরুত্বও কমিয়ে আনার উদ্যোগ নেওয়া হয় প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থায়। সেক্ষেত্রে কম কার্বন নিঃসরণকারী প্রযুক্তি ব্যবহারের পাশাপাশি প্রস্তাবিত ড্যামের উচ্চতা কমিয়ে আনা হয়, যাতে করে কম সংখ্যক লোককে পুনর্বাসনের প্রয়োজন পড়ে।
প্রতিকারমূলক ব্যবস্থায় পরিবেশগত যে অবনমন বা ক্ষতি তা মেরামত করা হয়। এক্ষেত্রে স্থানীয়দের সাংস্কৃতিক বা প্রাকৃতিক সম্পদে প্রবেশের বিকল্প সুযোগ করে দেওয়া হয়। সেটা করা যেতে পারে ব্যস্ত সড়কগুলোতে আন্ডারপাস অথবা গ্রিন সেতু স্থাপন এবং প্রকল্প এলাকায় বাস্তুতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার মাধ্যমে। আবার ক্ষতিপূরণ প্রদানের মাধ্যমেও এটা করা যায়।
প্রকল্পের ক্ষেত্রে প্রাণবৈচিত্র্য ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা (বিএমপি) প্রণয়ন জরুরি একটি কাজ। প্রকল্পের কাক্সিক্ষত ফলাফল পেতে অত্যাবশ্যকীয় ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমের বিষয়ে উল্লেখ থাকে এই পরিকল্পনায়। এই কার্যক্রম হতে হয় সুনির্দিষ্ট, পরিমাপযোগ্য, অর্জনযোগ্য এবং সময়বদ্ধ। সময় সময় বিএমপি পর্যালোচনা করাও জরুরি।
ড. তানভীর আহমেদ তার উপস্থাপনায় বলেন, প্রাণবৈচিত্র্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প এলাকার ব্যাপ্তি ও অবস্থার ওপর নজর রাখা জরুরি, যাতে করে প্রকল্পের কাক্সিক্ষত ফলাফল প্রাপ্তি নিশ্চিত হয়। পাশাপাশি মনিটরিং ফলাফলের আলোকে ব্যবস্থাপনা উদ্যোগগুলো সামঞ্জস্যপূর্ণ করাও প্রয়োজন।
বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নকৃত বিআরডব্লিউটিপি-১ প্রকল্পের অন্যতম প্রধান অঙ্গ হচ্ছে ড্রেজিং। স্বাভাবিকভাবেই পরিবেশ, জলজ বাস্তুতন্ত্র, পানি, বায়ুমান, শব্দ এবং কর্মীদের স্বাস্থ্য ও সুরক্ষার ওপর এর প্রভাব রয়েছে। কীভাবে এই প্রভাব প্রশমিত করা যায় উপস্থাপনায় তা তুলে ধরেন এই বিশেষজ্ঞ। যেসব প্রশমন ব্যবস্থার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে সেগুলো হলো সেডিমেন্ট পরিবহন ও পানির নিচের আবাসের ক্ষতি যতটা সম্ভব কম করা এবং কাজের সঠিকতা বাড়ানো। সেই সাথে খননের জন্য নির্বাচিত এলাকার পানির নিচে বসবাসকারী জীব-অণুজীব, টার্বিডিটি, পিএইচ, তাপমাত্রা, লবণাক্ততা, বায়োকেমিক্যাল অক্সিজেন ডিমান্ড (বিওডি) ও কেমিক্যাল অক্সিজেন ডিমান্ড (সিওডি) পরীক্ষা করার কথাও বলা হয়েছে। ড্রেজিং কার্যক্রম পরিচালনা করা উচিত বৃক্ষাচ্ছাদিত, মাডফ্ল্যাট এবং পাখিদের আবাস থেকে কমপক্ষে ১০০ মিটার দূরে। ড্রেজিংয়ের ফলে উৎপন্ন মাটি কোনোমতেই রিডল্যান্ড, মাডফ্ল্যাট, প্লাবনভূমি এবং মাছের প্রজনন, স্থানীয় ও পরিযায়ী পাখি বা কচ্ছপের আবাস ও বিচরণক্ষেত্র এমন স্থানে ফেলা যাবে না। নিতান্তই যদি পানির নিচের জীব-অণুজীবের পাশাপাশি প্রাণবৈচিত্র্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ রিডল্যান্ড, মাডফ্ল্যাটের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব এড়ানো সম্ভব না হয় সেক্ষেত্রে ক্ষপিূরণের জন্য প্রাণবৈচিত্র্য সংরক্ষণ পরিকল্পনা উন্নয়ন করা হয়েছে।
এরপর স্মারক বিনিময় এবং সমাপনী অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে দুই দিনব্যাপী এই প্রশিক্ষণের সমাপ্তি হয়। প্রশিক্ষণ শেষে ছিল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
প্রশিক্ষণে প্রাপ্তি
প্রশিক্ষণের মাধ্যমে অংশগ্রহণকারীরা সংশ্লিষ্ট বিষয়ে তাদের বোঝাপড়া ও দক্ষতাকে বাড়িয়ে নেওয়ার সুযোগ পান। পরিবেশগত ব্যবস্থাপনা, নীতিমালা পরিপালন এবং কীভাবে এ খাতের সর্বোত্তম পরিচালন নিশ্চিত করা যায়, সে ব্যাপারে গভীর ধারণা পান তারা। আত্মস্থ করেন ইএমপি এবং বিএমপি নীতি ও সঠিকভাবে তা প্রয়োগের কৌশল। পাশাপাশি পরিবেশগত ঝুঁকি প্রশমনে এএসআইএ বাস্তবায়ন এবং তদারকি ও রিপোর্টিংয়ের ডিজিটাল টুলগুলোর ব্যবহার সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা মেলে প্রশিক্ষণে।

প্রশিক্ষণ কর্মসূচি থেকে ক্রয় প্রক্রিয়া ব্যবস্থাপনা এবং সর্বোচ্চ দক্ষতার সাথে কীভাবে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার যায় সে সম্পর্কে আরও উন্নত ধারণা পান অংশগ্রহণকারীরা। এ ছাড়া জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ, টেকসই ড্রেজিং চর্চা এবং গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ কমানোর গুরুত্ব কতখানি সে ব্যাপারেও জ্ঞান অর্জন করেন তারা।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো দীর্ঘ এ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে যে ধারণা ও জ্ঞান অংশগ্রহণকারীরা পেয়েছেন তা প্রয়োগযোগ্য। এনভায়রমেন্টাল কমপ্লায়েন্স সম্পর্কিত জ্ঞান তারা প্রকল্পের বিভিন্ন শর্ত পূরণ এবং টেকসইতা নিশ্চিতে ইএমপি ও বিএমপি বাস্তবায়নে প্রয়োগ করতে পারবেন। পিপিআর, ২০০৮ সম্পর্কিত ও ডিজিটাল দক্ষতা তারা ব্যবহার করতে পারবেন উন্নত প্রকল্প ব্যবস্থাপনার কাজে। প্রশিক্ষণে অংশীজনদের অংশগ্রহণে আলোচনাগুলো ছিল ইন্টারঅ্যাক্টিভ। এর মাধ্যমে প্রাপ্ত ধারণা কর্মকর্তারা অংশীজন ও স্থানীয় সম্প্রদায়গুলোর সাথে সহযোগিতা শক্তিশালী করার কাজে প্রয়োগ করতে পারবেন।
প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব জনাব মোহাম্মদ ইউসুফ। অতিথি হিসেবে ছিলেন নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সংস্থা-১ অনু বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ব্যারিস্টার মোঃ গোলাম সরওয়ার ভূঁইয়া, কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান কমডোর আরিফ আহমেদ মোস্তফা, সদস্য (প্রকৌশল) জনাব মোহাম্মদ মনোয়ার উজ জামান, কর্তৃপক্ষের সাবেক সচিব জনাব সৈয়দ মনোয়ার হোসেন ও ১১ জন বিভাগীয় প্রধান। এ ছাড়া একজন অধ্যক্ষ, পাঁচজন অতিরিক্ত পরিচালক, তিনজন অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলীও উপস্থিত ছিলেন। প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে বর্তমান অফিসার্স এসোসিয়েশনের কার্যনির্বাহী পরিষদের সকল সদস্য, আটজন তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী, ১০ জন যুগ্ম-পরিচালক, আটজন নির্বাহী প্রকৌশলী, ১৫ জন উপ-পরিচালক, ছয়জন সহকারী প্রকৌশলীসহ কর্তৃপক্ষের ২২টি নদীবন্দরের বন্দর কর্মকর্তা অংশগ্রহণ করেন।
উল্লেখ্য, বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে ‘চট্টগ্রাম-ঢাকা-আশুগঞ্জ সংযুক্ত নৌপথ খনন এবং টার্মিনালসহ আনুষঙ্গিক স্থাপনাদি নির্মাণ’ শীর্ষক প্রকল্পের অধীনে শ্মশানঘাট, নারায়ণগঞ্জ, চাঁদপুর ও বরিশালে চারটি প্যাসেঞ্জার টার্মিনাল নির্মাণ ও উন্নয়ন এবং পানগাঁও ও আশুগঞ্জে দুটি কার্গো টার্মিনাল নির্মাণসহ ১৩টি লঞ্চঘাট উন্নয়নের কাজ চলছে।