বিআইডব্লিউটিএ নিয়মিত প্রকাশনা

বুধবার, সেপ্টেম্বর ৩, ২০২৫
30 C
Dhaka

বিআইডব্লিউটিএ নিয়মিত প্রকাশনা

সুতাং নদী: একদা সমৃদ্ধ এক জলপথ

নদীবাংলা ডেস্ক,

ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের পাহাড়ি অঞ্চল থেকে উৎপন্ন হয়ে হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট উপজেলার আমু চা বাগান এলাকা দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে সুতাং নদী। এরপর উপজেলা শহরের মধ্য দিয়ে উত্তর-পশ্চিম দিকে প্রবাহিত হয়ে লাখাই উপজেলা সদরের মধ্য দিয়ে কালনী নদীর সাথে মিলিত হয়েছে।

ভারত ও মিয়ানমার থেকে ৫৮টি নদী বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। এর মধ্যে ভারত থেকে প্রবেশ করেছে ৫৪টি নদী। সুতাং সেগুলোর অন্যতম। ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের পাহাড়ি অঞ্চল থেকে উৎপত্তি লাভ করে হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট উপজেলার আমু চা বাগান এলাকা দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে নদীটি। চুনারুঘাট থেকে নদীটি উপজেলা শহরের মধ্য দিয়ে উত্তর পশ্চিম দিকে প্রবাহিত হয়ে হবিগঞ্জ জেলা সদরের কিছু দূরে দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে বাঁক নিয়ে লাখাই উপজেলা সদরের মধ্য দিয়ে কালনী নদীর সাথে মিলিত হয়েছে।

এই সুতাং একসময় ছিল সমৃদ্ধ জলপথ। এর রূপবিভায় একসময় মুগ্ধ হতেন লোকালয়ের তাবৎ মানুষ। নদীতে থাকত স্ফটিক জলের বিস্তৃত ঢেউ। প্রতিদিনই বড় বড় নৌকা আসা-যাওয়া করত নদীটি দিয়ে। এসব নৌকায় করে ভাটি এলাকা বাদগরি, কাডাখালি, সাধুরবাজারসহ অন্যান্য অঞ্চল থেকে মানুষ নিয়মিত সদাই করে আবার নৌকা নিয়ে বাড়ি ফিরত।

পাহাড়ি এই নদীটিকে কেন্দ্র করে এই অঞ্চলে গড়ে উঠেছিল বাঁশের সবচেয়ে বড় বাজার। এই নদী দিয়ে বাঁশের চালী নিয়ে আসা হতো সুতাং বাজারে। বর্ষাকালে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে বাঁশ ব্যবসায়ীরা বাঁশ কিনে নদীপথে নিয়ে যেতেন দেশের বিভিন্ন জায়গায়। নদীতে পানি থাকলে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা এখনো বাঁশের আঁটি বেঁধে পানিতে ভাসিয়েই উজান থেকে ভাটিতে নিয়ে যান। এতে করে তাদের পরিবহন খরচ অনেক কম হয়। এ ছাড়া চুনারুঘাট, শায়েস্তাগঞ্জ ও লাখাই উপজেলার বিস্তীর্ণ ফসলি জমি একসময় এই নদীর পানি দিয়েই আবাদ হতো।

চা বাগান, অরণ্য, টিলাভূমি ও সমতল গ্রাম নিয়ে সুতাং নদী প্রায় ৪০০ বর্গ কিলোমিটার অববাহিকা সৃষ্টি করেছে। সুতাং পাড়ের জেলেরা এই নদী থেকেই মাছ ধরেন। লাটি ও গুতুম মাছের জন্য একসময় বিখ্যাত ছিল নদীটি। এখনো মাগুর, কৈ, টেংরা জাতীয় মাছ পাওয়া যায়। সংগ্রহ করা হয় শামুক ও কাঁকড়া।

বাংলাদেশ-ভারত আন্তঃসীমান্ত নদীটির দৈর্ঘ্য ৮৫ কিলোমিটার এবং সুতাং রেলওয়ে ব্রিজের কাজে এর প্রস্থ ৮০ মিটার। নদীটির প্রকৃতি সর্পিলাকার। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তথ্য অনুযায়ী, বর্ষা মৌসুমে সুতাং রেলওয়ে ব্রিজের কাছে নদীটির গভীরতা থাকে ৪ মিটার। তবে শুষ্ক মৌসুমে এই গভীরতা এক মিটারেরও নিচে নেমে আসে এবং নৌ চলাচল ব্যহত হয়। জোয়ার-ভাটার প্রভাবমুক্ত নদীটিতে সারাবছরই পানিপ্রবাহ থাকে। বর্ষা মৌসুমে নদীর তীর উপচিয়ে পানি প্লাবন ভূমিতে চলে আসে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here