বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) নিয়ন্ত্রণাধীন বেশ কিছু নদীবন্দর আছে, যেগুলো অভ্যন্তরীণ নৌপথে পণ্য পরিবহনে বড় ভূমিকা রাখছে। ফরিদপুর নদীবন্দর (সিঅ্যান্ডবি ঘাট) এর মধ্যে অন্যতম। ফরিদপুর অঞ্চলের কার্গো হ্যান্ডলিং চাহিদা পূরণ করে নদীবন্দরটি।
অভ্যন্তরীণ নৌপথে পণ্য পরিবহনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে নদীবন্দরগুলো। এগুলোর কোনোটি কোনোটি প্রথম শ্রেণির নৌপথের সাথে সংযুক্ত। কোনো কোনোটি আবার বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) শ্রেণিকৃত দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির নৌপথের সাথে আন্তঃসংযুক্ত। পণ্য পরিবহনে সবগুলো নদীবন্দরই যে সমান গুরুত্বপূর্ণ তেমন নয়। বিআইডব্লিউটিএর নিয়ন্ত্রণাধীন বেশ কিছু নদীবন্দর আছে, যেগুলো অভ্যন্তরীণ নৌপথে পণ্য পরিবহনে বড় ভূমিকা রাখছে। ফরিদপুর নদীবন্দর (সিঅ্যান্ডবি ঘাট) এর মধ্যে অন্যতম। ফরিদপুর অঞ্চলের কার্গো হ্যান্ডলিং চাহিদা পূরণ করে নদীবন্দরটি। পাশাপাশি অন্যান্য অঞ্চলের জন্য পরিবাহিত পণ্য পরিবহনেও নদীবন্দরটির গুরুত্ব কম নয়।
সীমানা
ফরিদপুর নদীবন্দরের প্রথম গেজেট নোটিফিকেশন জারি করা হয় ২০১৫ সালের ১৬ আগস্ট। পোর্টস অ্যাক্ট, ১৯০৮-এর সেকশন ৪-এর সাব-সেকশন ২-এর ক্লজ (এ)-এর সাব-সেকশন ২-এ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে নদীবন্দরটির সীমানা নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার। পাশাপাশি ২০১৫ সালের ১৮ আগস্ট প্রকাশিত এক গেজেটের মাধ্যমে পার্টস অ্যাক্ট, ১৯০৮-এর সেকশন ৭-এর সাব-সেকশন ১-এ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে সরকার বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষকে (বিআইডব্লিউটিএ) নদীবন্দরটির সংরক্ষক নিযুক্ত করে।
গেজেট নোটিফিকেশন অনুযায়ী, উত্তর দিকে ফরিদপুর নদীবন্দরের সীমানা হলো ফরিদপুর জেলার সদর উপজেলাধীন ডিক্রীরচর ইউনিয়নের টেপুরাকান্দি মৌজার পূর্ব-পশ্চিমে ২৩০-৩৮¢-১০² উত্তর অক্ষাংশ পর্যন্ত। দক্ষিণ দিকে নদীবন্দরটি সদর উপজেলার আলিবাদ ইউনিয়নের সাদিপুর মৌজার পূর্ব-পশ্চিম বরাবর ২৩০-৩৫¢-২০² উত্তর অক্ষাংশ পর্যন্ত বিস্তৃত। আর পশ্চিম দিকে ফরিদপুর নদীবন্দরের সীমানা হলো উত্তর ও দক্ষিণ সীমানা পর্যন্ত যমুনা নদীর পশ্চিমে সাধারণ ভরাকটালের সময় সর্বোচ্চ পানি সমতল থেকে নদীর তীর বরাবর ৫০ মিটার পর্যন্ত।
অর্থনৈতিক গুরুত্ব
দক্ষিণবঙ্গসহ বৃহত্তর ফরিদপুরের পণ্য আনা-নেওয়ার জন্য শত বছরের প্রাচীন এই নদীবন্দরটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নদীবন্দরটি দিয়ে চাল, গম, সিমেন্ট, বালিসহ প্রায় ৪০ ধরনের পণ্য সামগ্রী আনা-নেওয়া করা হয়। চট্টগ্রাম ও মোংলা সমুদ্রবন্দর এবং সিলেট, নারায়ণগঞ্জ ও কুমিল্লাসহ বিভিন্ন স্থান থেকে নৌপথে এই বন্দরে পণ্য আনা-নেওয়া করা হয়। ফরিদপুরের পাট এই বন্দর হয়েই চট্টগ্রাম বন্দরে যায় এবং সেখান থেকে বহির্বিশ্বে রপ্তানি হয়। এ ছাড়াও সিলেট থেকে কয়লা ও বালি এবং চুয়াডাঙ্গা, কুষ্টিয়া, মিরকাদিম থেকে চাল আনা হয় ফরিদপুর নদীবন্দর দিয়ে। নারায়ণগঞ্জ নদীবন্দর থেকে বিপুল সংখ্যক সিমেন্টবাহী জাহাজ ও কার্গো এই বন্দরে নোঙর করে এবং এখানে খালাসের পর সড়কপথে এই পণ্য বিভিন্ন গন্তব্যে যায়।
আছে চ্যালেঞ্জও
দেশের অন্যতম প্রাচীন এই নদীবন্দরটিতে জাহাজ আগমন-নির্গমনে কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে এবং তা হলো চ্যানেলে ডুবোচর ও নাব্যতা হ্রাস পাওয়া। চ্যানেলে নাব্যতা সংকটের কারণে অনেক সময় জাহাজ আটকে যায়। এ ছাড়া একটি জাহাজ স্বাভাবিক চলাচলের জন্য সাধারণত ১০-১২ ফুট গভীরতার প্রয়োজন হলেও চ্যানেলের কোথাও কোথাও কখনো তা ৪-৬ ফুটে নেমে আসে। এর ফলে বেশি পণ্যবাহী বড় জাহাজ ঘাটে ভিড়তে পারে না। নদীর মধ্যেই জাহাজ নোঙর করে রাখতে হয়। এতে পণ্য পরিবহনের খরচ বেড়ে যায়। তবে ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় নাব্যতা ফিরিয়ে এ সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নিয়েছে বিআইডব্লিউটিএ।