বিআইডব্লিউটিএ নিয়মিত প্রকাশনা

বৃহস্পতিবার, জানুয়ারি ২৩, ২০২৫
16 C
Dhaka

বিআইডব্লিউটিএ নিয়মিত প্রকাশনা

নারায়ণগঞ্জ নদীবন্দর : নৌ-বাণিজ্যের তীর্থস্থান

নারায়ণগঞ্জ বন্দরের কাছে ১৯৫০ সালে বিশ্বের বৃহত্তম পাটকল আদমজী প্রতিষ্ঠিত হয়। স্বাভাবিকভাবেই বন্দরের ব্যস্ততাও আগের চেয়ে বেড়ে যায়। ১৯৫৫ সালের মাঝামাঝি সময়ে আধুনিক যন্ত্রপাতিতে সজ্জিত করা হয় প্রাচীন এই নদীবন্দরটি। ১৯৬০-এর দশকে ব্রিটেনের রানী এলিজাবেথ দ্বিতীয়, জাপানের সম্রাট আকিহিতোসহ অনেকেরই পা পড়ে এই বন্দরে।

সালটা সম্ভবত ১৮৬২। নারায়ণগঞ্জ তখন সুবে বাংলার রাজধানী ঢাকার প্রবেশদ্বার। ঠিক সেই সময় শীতলক্ষ্যার পাড়ে নারায়ণগঞ্জ নদীবন্দরের কার্যক্রম শুরু করে ব্রিটিশ রাজ। ব্রিটিশ বণিকরা একে এই অঞ্চলে তাদের বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রস্থল হিসেবে প্রতিষ্ঠার প্রয়াস পান। কারণটা ছিল খুবই যৌক্তিক। বাংলাদেশের ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেট; ভারতের আসাম ও কলকাতা এবং মিয়ানমারের ইয়াঙ্গুন ও আকিয়াব বন্দরের সাথে জাহাজ চলাচলের সংযোগ ছিল এই বন্দরের।

ব্রিটিশদের হাত ধরে ধীরে ধীরে নারায়ণগঞ্জ বন্দর হয়ে ওঠে শিপিং ও বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। বিশেষ করে পাট ব্যবসার তীর্থস্থানে পরিণত হয় বন্দরের আশপাশের এলাকা। র‌্যালি ব্রাদার্স অ্যান্ড কোম্পানির মাধ্যমে ব্রিটিশদের হাত ধরে এখানে পাট ব্যবসার সূত্রপাত হয়। একসময় বাংলাদেশের ডান্ডি নামেও পরিচিতি পায় নারায়ণগঞ্জ এবং ১৮৭৯ সালে এসে নারায়ণগঞ্জ নদীবন্দরকে করমুক্ত বন্দর হিসেবে ঘোষণা করে ব্রিটিশ শাসকরা। ১৯০৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় চেম্বার অব কমার্সের। আর ১৯০৭-০৮ সালের মধ্যেই নিদেনপক্ষে ২০টি কোম্পানি নারায়ণগঞ্জে এই ব্যবসা শুরু করে, যার ১৮টি ছিল ইউরোপীয়।

শুধু পাট ব্যবসা নয়, নারায়ণগঞ্জ নদীবন্দরের সুবিধা কাজে লাগাতে ১৯২০-এর দশকে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক হিন্দু বণিক শীতলক্ষ্যার আশপাশে সুতার মিল প্রতিষ্ঠা করেন। ঢাকেশ^রী কটন মিল, চিত্তনারায়ণ কটন মিল ও লক্ষ্মী নারায়ণ কটন মিল এর মধ্যে অন্যতম।

ব্রিটিশরা ভারত ছাড়ার পরও নারায়ণগঞ্জ নদীবন্দরের গুরুত্ব এতোটুকুও কমেনি। বন্দরের কাছেই ১৯৫০ সালে বিশ্বের বৃহত্তম পাটকল আদমজী প্রতিষ্ঠা করে তৎকালীন পাকিস্তান সরকার। স্বাভাবিকভাবেই এর ব্যস্ততাও আগের চেয়ে বেড়ে যায় এবং ১৯৫৫ সালের মাঝামাঝি সময়ে আধুনিক যন্ত্রপাতিতে সজ্জিত করা হয় প্রাচীন এই নদীবন্দরটি। ১৯৬০-এর দশকে ব্রিটেনের রানী এলিজাবেথ দ্বিতীয়, জাপানের সম্রাত আকিহিতোসহ অনেকেরই পদচারণা ঘটে এই বন্দরে।

স্বাধীনতার পর বন্দরটির ব্যস্ততা আরো বেড়ে যায়। কারণ শীতলক্ষ্যার পাড়ে অসংখ্য শিল্প-কারখানা গড়ে উঠতে থাকে। এসব শিল্প-কারখানার পণ্য আনা-নেওয়ার কাজ চলতে থাকে নারায়ণগঞ্জ নদীবন্দর দিয়েই। পরে আদমজী জুট মিল বন্ধ হয়ে গেলেও নদীবন্দরটি যাতে অব্যবহৃত না থাকে, সেজন্য প্রতিষ্ঠা করা হয় রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল। আর সর্বশেষ ২০১৯ সালে পরীক্ষামূলকভাবে নারায়ণগঞ্জ নদীবন্দর থেকে ঢাকা ও কলকাতার মধ্যে চালু করা হয় সরাসরি যাত্রীবাহী জাহাজ।

অবস্থান

নদীবন্দরটির অবস্থান ঢাকা থেকে ২৮ কিলোমিটার দূরে নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে। অন্যতম ব্যস্ত নদীবন্দরটিতে রয়েছে দ্বিতল টার্মিনাল ভবন, সাতটি আরসিসি জেটি ও ১০টি পন্টুন জেটি। পণ্য রাখার জন্য বেশ কয়েকটি গুদামও আছে বন্দরটিতে, যেগুলোর মোট আয়তন ৬২ হাজার বর্গফুট। ঢাকা নদীবন্দরের পর সবচেয়ে বেশি যাত্রী ও পণ্য পরিবহন হয় এই বন্দর দিয়ে। এতো গুরুত্বপূর্ণ হওয়ার পরও দখলমুক্ত রাখা যায়নি নারায়ণগঞ্জ নদীবন্দরকে। সর্বশেষ ২০১৯-২০  দুই বছরে বিআইডব্লিউটিএ অভিযান চালিয়ে নদীবন্দর এলাকা থেকে প্রায় ১,৯০০ অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করেছে। এর মধ্য দিয়ে উদ্ধার করা হয়েছে প্রায় ৯০ একর জমি। এছাড়া দখলদারদের কাছ থেকে প্রায় ৩০ লাখ টাকা জরিমানাও আদায় করা হয়েছে। আর নিলামে তোলা হয়েছে প্রায় ২ কোটি ৪৩ লাখ টাকার সামগ্রী।

 

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here