গ্রাম কিংবা নগর, বাজার কিংবা বসতি সবকিছুরই পত্তন নদীকে ঘিরে। আর নগরের সমৃদ্ধির চালক যে বাণিজ্য তার যাতায়াত বন্দরকে আশ্রয় করে। নরসিংদীর প্রাচীন নগরী ওয়ারি-বটেশ্বরও এ থেকে বিচ্যুত নয়। সমৃদ্ধ এই নগরীতেও ছিল বন্দর। বাণিজ্য লক্ষ্মীর গমনাগমনের কেন্দ্র। প্রাচীন এই নগরীতে বন্দর গড়ে উঠেছিল ব্রহ্মপুত্রকে ধারণ করে।
ধারণা করা হয়, ওয়ারি-বটেশ্বর ছিল নদীর মোহনায় গড়ে ওঠা একটি বন্দর। মনুষ্য নির্মিত কোনো স্থাপনার প্রমাণ ওয়ারী-বটেশ্বর উৎখননে পাওয়া যায়নি। তাই বন্দরের পোতাশ্রয়ে যে কোনো জেটি ছিল না সেই বিশ্বাস করাই যায়। তবে বন্দর এলাকায় কিছু পরিষেবা ব্যবস্থা নিশ্চিতভাবেই ছিল। গুদাম, স্টোন বেড ও মাটির তৈরি সামগ্রীর উৎপাদন কেন্দ্র ছিল সেখানে। কালের আবর্তে নদীবন্দর হিসেবে ওয়ারী-বটেশ্বর তার জৌলুস হারাতে থাকে। যদিও এর যুৎসই কারণ সেভাবে জানা যায় না। অনেকের মতে, ব্রহ্মপুত্রের প্রবাহ পরিবর্তন একটা কারণ হয়ে থাকতে পারে।
ঔজ্জ্বল্য হারাতে হারাতে ওয়ারী-বটেশ্বরের সেই নদীবন্দরের ঠিকানা এখন ইতিহাসের পাতায়। তাই বলে বাণিজ্যের পীঠস্থান হিসেবে নরসিংদীর সুখ্যাতিতে ধুলো জমেনি। এখনো উজ্জ্বল। আর এই বাণিজ্যে গতি সঞ্চার করছে মেঘনার তীরে গড়ে ওঠা নরসিংদী নদীবন্দর।
নরসিংদী নদীবন্দরের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসে ছয় দশকেরও বেশি সময় আগে ১৯৬০ সালে। তবে গেজেট প্রকাশিত হয় ১৯৮৯ সালে। যাত্রী আসা-যাওয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে নদীবন্দরটি। নরসিংদী-ছলিমগঞ্জ-নবীনগর রুটে নিয়মিত লঞ্চ চলাচল করে এই নদীবন্দরটি থেকে। প্রতি বছর গড়ে ৪০ লাখের বেশি যাত্রীর পদচিহ্ন পড়ে নরসিংদী নদীবন্দরে।
যাত্রী পরিবহনের পাশাপাশি পণ্য পরিবহনেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে নদীবন্দরটি। ২০১৯-২০ অর্থবছর পর্যন্ত প্রতি বছর গড়ে দেড় লাখ টনের বেশি পণ্য নরসিংদী নদীবন্দর দিয়ে আনা-নেওয়া হলেও ২০২০-২১ অর্থবছরে তা ২ লাখ টনে উন্নীত হয়।
সীমানা
নরসিংদী নদীবন্দরের গেজেট প্রকাশিত হয় ১৯৮৯ সালে। একই সাথে পোর্টস অ্যাক্ট, ১৯০৮-এর সেকশন ৪-এর সাব-সেকশন ২-এর ক্লজ (এ)-এর সাব-সেকশন ২-এ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষকে (বিআইডব্লিউটিএ) নদীবন্দরটির সংরক্ষক নিযুক্ত করা হয়। একই বিজ্ঞপ্তিতে নরসিংদী নদীবন্দরের সীমানাও নির্ধারণ করে দেওয়া হয়।
গেজেট নোটিফিকেশন অনুযায়ী, নরসিংদী নদীবন্দরের অবস্থান দ্রাঘিমাংশ ৯০০-৪৪’-৫৪” ও অক্ষাংশ ২৩০-৫৪’-০০” বিন্দু থেকে মেঘনা নদীর ডান তীরে স্রোতের ভাটিতে দ্রাঘিমাংশ ৯০০-৪২’-৩১” ও অক্ষাংশ ২৩০-৫৩’-০০” বিন্দু পর্যন্ত এবং ডান তীরবর্তী সর্বোচ্চ জোয়ারে প্লাবিত জলসীমা থেকে ৫০ গজ পর্যন্ত তীরভূমি।
একইভাবে দ্রাঘিমাংশ ৯০০-৪৪’-৩৭” ও অক্ষাংশ ২৩০-৫৪’-০০” বিন্দু থেকে মেঘনা নদীর বাম তীরে স্রোতের ভাটিতে দ্রাঘিমাংশ ৯০০-৪২’-৫৪” ও অক্ষাংশ ২৩০-৫৩’-০০” বিন্দু পর্যন্ত এবং বাম তীরবর্তী সর্বোচ্চ জোয়ারে প্লাবিত জলসীমা থেকে ৫০ গজ পর্যন্ত তীরভূমি।