বিআইডব্লিউটিএ নিয়মিত প্রকাশনা

বুধবার, সেপ্টেম্বর ৩, ২০২৫
30 C
Dhaka

বিআইডব্লিউটিএ নিয়মিত প্রকাশনা

কীর্তিনাশা : ইতিহাসখ্যাত বিধ্বংসী এক নদী

নদীবাংলা ডেস্ক,

শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার পদ্মা নদী থেকে উৎপন্ন কীর্তিনাশার দৈর্ঘ্য ৪০ কিলোমিটার ও প্রস্থ ১২০ মিটার। গভীরতা ৬ মিটার এবং অববাহিকা ১৫০ বর্গকিলোমিটার। এটি একটি মৌসুমি নদী এবং জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত সাধারণত প্রবাহহীন থাকে।

ব্রহ্মপুত্র যখন মেঘনার সাথে মিলিতভাবে প্রবাহিত হতো, তখন এর স্রোতের বেগ ছিল প্রবল এবং পদ্মাকে বহু পশ্চিমে রেখেছিল। পরে ব্রহ্মপুত্রের সাথে মেঘনার সম্বন্ধ যখন কমে যায় এবং ব্রহ্মপুত্র যমুনার সাথে মিশে গোয়ালন্দের কাছে পদ্মার সাথে মিলিত হয়, তখন পদ্মার বেগই প্রবল হয়ে ক্রমে পশ্চিম দিক পরিত্যাগ করে পূর্ব দিকে অগ্রসর হতে থাকে। ফলস্বরূপ কীর্তিনাশা নদীর উদ্ভব হয়।

যতীন্দ্রমোহন রায় তাঁর ‘ঢাকার ইতিহাস’ গ্রন্থে লিখেছেন, ‘পদ্মার যে অংশ বিক্রমপুর ভেদ করিয়া মেঘনাদের সহিত মিলিত হইয়াছে, উহার নাম কীর্তিনাশা। প্রকৃত প্রস্তাবে পদ্মার গতি বিক্রমপুরের পশ্চিম দিক পরিত্যাগ করিয়া মরাপদ্মা নামে এবং প্রবলাংশ, যাহা প্রায় শত বৎসরের মধ্যে উদ্ভব হইয়া প্রাচীন কালীগঙ্গা নদীর বিলোপ সাধন করিয়াছে, উহাই কীর্তিনাশা নামে পরিচিত।’

তাঁর ভাষায়, ‘মি. রেনেল ১৭৮০ খ্রিস্টাব্দে পূর্ববঙ্গের যে মানচিত্র অঙ্কিত করিয়াছিলেন, তাহাতে দেখা যায়, পদ্মা নদী বিক্রমপুরের বহু পশ্চিম দিক দিয়া প্রবাহিত হইয়া ভ‚বনেশ^রের সহিত সম্মিলিত হইয়াছিল। তখন ‘কীর্তিনাশা’ বা ‘নয়াভাঙ্গনী’ নামে কোনো নদীর অস্তিত্ব ছিল না। বিক্রমপুরের অন্তর্গত রাজনগর ও ভদ্রেশ^র গ্রামের মধ্যে একটি অপ্রশস্ত জলপ্রণালী মাত্র বিদ্যমান ছিল। উহা প্রাচীন কালীগঙ্গার শেষ চিহ্নমাত্র। শ্রীপুর, নওপাড়া, ফুলবাড়িয়া, মুলফৎগঞ্জ প্রভৃতি প্রসিদ্ধ গ্রামসমূহ কালীগঙ্গার তটে বিদ্যমান ছিল। পরে শত বৎসরের মধ্যে কীর্তিনাশা নদীর উৎপত্তি হইয়া বিক্রমপুরের বক্ষদেশ ভেদ করিয়া এবং নয়াভাঙ্গনী নদী উদ্ভুত হইয়া ইদিলপুরের প্রান্তদেশ ধৌত করিয়া পদ্মা ও মেঘনাদ পরস্পর সংযুক্ত করিয়া দিয়াছে।’

কেন কীর্তিনাশা

রেনেলের মানচিত্রে কীর্তিনাশার উল্লেখ না থাকলেও ১৮৪০ সালে জেমস টেইলার তার ‘টপোগ্রাফি অব ঢাকা’ পুস্তকে ‘কাথারিয়া’ বা ‘কীর্তিনাশা’ নদীর কথা তুলে ধরেছেন। কীর্তিনাশা নাম হওয়ার পেছনে রয়েছে এর বিধ্বংসী রূপ। ভীষণ সংহার মূর্তি ধারণ করে নানা প্রাচীন কীর্তি নাশ বা ধ্বংস করেছে নদীটি। বিক্রমপুরের জমিদার চাঁদ রায় ও কেদার রায়ের এবং নওপাড়ার চৌধুরীদের কীর্তি ধ্বংস করায় নদীটির নাম হয়েছে কীর্তিনাশা। পরে মহারাজ রাজবল্লভের কীর্তিনিকেতন ভেঙে নামের সার্থকতা প্রমাণ করেছে। কীর্তিনাশা প্রথমে ‘রথখোলা’ পরে ‘ব্রহ্মবধিয়া’ ও ‘কাথারিয়া’ এবং সবশেষে ‘কীর্তিনাশা’ নামে পরিচিত। কীর্তিনাশা নদী দ্বারা বিক্রমপুর দুই ভাগে বিভক্ত হয়েছে।

ভৌত বৈশিষ্ট্য

শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার পদ্মা নদী থেকে উৎপন্ন কীর্তিনাশা শরীয়তপুর ও মাদারীপুরের বেশ কিছু এলাকা দিয়ে প্রবাতিহ হয়ে আড়িয়াল খাঁ নদীর সাথে মিলিত হয়েছে। নদীটির দৈর্ঘ্য ৪০ কিলোমিটার ও প্রস্থ ১২০ মিটার। গভীরতা ৬ মিটার এবং অববাহিকা ১৫০ বর্গকিলোমিটার।

কীর্তিনাশা একটি মৌসুমি নদী। জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত সাধারণত প্রবাহহীন থাকে নদীটি। তবে বর্ষা মৌসুমে অর্থাৎ জুলাই ও আগস্ট মাসে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ পানি প্রবাহিত হয়। নদীটিতে জোয়ার-ভাটার প্রভাব রয়েছে এবং সাধারণ বন্যায় নদীর পাড় উপচে পড়ার ঘটনা ঘটে।

নড়িয়া পৌরসভা, ভোঝেশ্বর বন্দর ও শরীয়তপুর পৌরসভা এই নদীর পাড়ে অবস্থিত। কীর্তিনাশার ওপর অবকাঠামো খুব বেশি নেই। নদীটির ওপর নির্মিত দুটি সড়ক সেতু রয়েছে। এগুলো হলো নড়িয়া ও আঙ্গারিয়া সেতু। কীর্তিনাশা নদী অববাহিকায় বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড ছাড়া অন্য কোনো সরকারি-বেসরকারি প্রকল্পও নেই।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here