বিআইডব্লিউটিএ নিয়মিত প্রকাশনা

বুধবার, সেপ্টেম্বর ৩, ২০২৫
30 C
Dhaka

বিআইডব্লিউটিএ নিয়মিত প্রকাশনা

ইছামতী: একসময়ের রমণীয় এক নদী

নদীবাংলা ডেস্ক,
মানিকগঞ্জের ইছামতী মৌসুমি নদী। ডিসেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত সাধারণত প্রবাহহীন থাকে নদীটি। তবে বর্ষাকালে অর্থাৎ আগস্ট মাসে সবচেয়ে বেশি পানি প্রবাহিত হয়। নদীটিতে জোয়ার-ভাটার প্রভাব একেবারেই নেই। ইছামতী বন্যাপ্রবণ হলেও সাধারণ বন্যায় নদীর পাড় উপচে পড়ে না।

পুরাণাদিতে ইছামতীর উল্লেখ ইক্ষুনদী নামে। নদীটির তীরভূমিতে প্রচুর পরিমাণে আখ উৎপন্ন হতো বলেই এর নাম হয়েছিল ইক্ষুনদী। মেগাস্থেনিস আবার একে অক্ষিমাতিস, তিসিয়াস ও হাইপোবারাস বলে পরিচিত করেছেন।

ইছামতী নামে দেশে একাধিক নদী থাকলেও যতীন্দ্রমোহন রায়ের ‘ঢাকার ইতিহাস’ গ্রন্থে উল্লেখিত ইক্ষুনদী বা ইছামতী বৃহত্তর ঢাকা জেলায় প্রবাহিত। মানিকগঞ্জ উপজেলার যমুনা নদী থেকে বের হয়ে ইছামতী মুন্সিগঞ্জের লৌহজংয়ে পদ্মা নদীর সাথে মিশেছে। তার আগে নদীটি মানিকগঞ্জের ঘিওর, শিবালয়, হরিরামপুর এবং মুন্সিগঞ্জের নবাবগঞ্জ, দোহার, সিরাজদিখান ও শ্রীনগরের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।

তবে ১৩১৯ বঙ্গাব্দে প্রকাশিত ‘ঢাকার ইতিহাস’ গ্রন্থে যতীন্দ্রমোহন রায় ইছামতীর উৎসস্থল দেখিয়েছেন সাহেবগঞ্জের কাছে ধলেশ্বরী। এরপর মদনগঞ্জের পূর্বদিকে পুনরায় নদীটি ধলেশ্বরীতে এসে পড়েছে। তার মতে, পশ্চিম ও দক্ষিণ ঢাকার নদীসমূহের মধ্যে ইছামতীই সর্বাপেক্ষা প্রাচীন। পূর্বে এই নদী জাফরগঞ্জের দক্ষিণে হুরাসাগরের বিপরীত দিকে নাথপুরের ফ্যাক্টরির কাছে উৎপন্ন হয়ে মুন্সিগঞ্জের কাছে যোগিনীঘাট পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। ধলেশ্বরীর প্রবল আক্রমণের ফলে এই নদীর অস্তিত্ব বিলুপ্ত হওয়ার উপক্রম হয়েছিল।

তার বয়ানে, ‘ধলেশ্বরী নদী ব্রহ্মপুত্রের প্রধান প্রবাহ বলিয়া পরিগণিত হইলে সিঙ্গৈর ও সাভারের মধ্যবর্তী গাজিখালি নদী, বংশী নদীর কতকাংশ, পাথরঘাটা ও রামকৃষ্ণদির মধ্যস্থিত ইছামতী ও বয়রাগাদি এবং মুন্সিগঞ্জের মধ্যবর্তী ইছামতী নদী ধলেশ্বরীর সামিল হইয়া পড়ে।’

নদীটির অবস্থা সম্পর্কে সেই সময় তিনি লেখেন, ‘বর্তমান সময়ে এই প্রাচীন নদীটির অবস্থা অত্যন্ত শোচনীয়। স্থানে স্থানে শুষ্ক হইয়া যাওয়ায় ক্ষীণতোয়া হইয়া পড়িয়াছে। এই নদীর তীরে বহু সমৃদ্ধ জনপদ ও বাণিজ্যস্থান আছে। ইহার উভয় তীরবর্তী প্রদেশসমূহ শস্য সম্পদে ঢাকা জেলায় শীর্ষস্থানীয়। প্রাকৃতিক দৃশ্যও অতিশয় রমণীয়।’

ইছামতী নামে আরও একাধিক নদী আছে বাংলাদেশে। এর মধ্যে একটি ইছামতী বের হয়েছে পাবনা শহরের কাছে পদ্মা থেকে। এই ইছামতী আতাইকুলা, ভুলবাড়িয়া, বেড়া হয়ে ত্রিমোহনীতে হুরাসাগর নদীতে মিলিত হয়েছে। নদীটি নিয়ে এক ঐতিহাসিক ঘটনা লোক মুখে শোনা যায়। ষোড়শ শতকের প্রথম দিকে ইসলাম খাঁ চিশতির সময়কাল তখন। সেই সময় বাংলা শাসন করার জন্য নানা প্রান্তে যেতে হত। কিন্তু স্থলপথে রাজমহল থেকে ঢাকা যাতায়াতের সুবিধা ছিল না। তাই ইসলাম খাঁ ঈশা খাঁকে নির্দেশ দিলেন একটা খাল কাটার জন্য, যে খালটা পদ্মা ও যমুনা নদীর সাথে সংযোগ স্থাপন করবে। ঈশা খাঁর কাটা খালটি ‘ঈশামতী’ খাল নামে পরিচিতি পায়। পরে লোকমুখে সেই নদীটিই এই ইছামতী।

মানিকগঞ্জের ইছামতী মৌসুমি নদী। ডিসেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত সাধারণত প্রবাহীন থাকে নদীটি। তবে বর্ষাকালে অর্থাৎ আগস্ট মাসে সবচেয়ে বেশি পানি প্রবাহিত হয়। নদীটিতে জোয়ার-ভাটার প্রভাব একেবারেই নেই। নদীটি বন্যাপ্রবণ হলেও সাধারণ বন্যার পানিতে পাড় উপচে পড়ার কোনো ঘটনা ঘটে না।

উথুলী বাজার, ঝিটকা বাজার, রামকৃষ্ণপুর বাজার এবং নবাবগঞ্জ উপজেলা সদর এই নদীর তীরে অবস্থিত। ইছামতীর ওপর অবকাঠামো সেভাবে নেই। যেগুলো আছে তা হলো উথুলী সড়ক সেতু এবং শিকারীপাড়া ও কাইশাখলীতে দুটি ক্লোজার।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here