নদীমাতৃক বাংলাদেশে যাত্রী ও পণ্য পরিবহনে দেশব্যাপী ছড়িয়ে থাকা নদীবন্দরগুলোর ভ‚মিকা অপরিসীম। দেশের অর্থনীতিতে অবদান রেখে চলা এসব নদীবন্দরের অন্যতম ভোলা নদীবন্দর। প্রতি বছর ২০ লাখের বেশি যাত্রী আসা-যাওয়ার কাজে ব্যবহার করছেন নদীবন্দরটি।
বাংলার পরিবহন ব্যবস্থায় নদী ও নৌপথের ভ‚মিকা বহু পুরোনো। আর নৌপথে চলাচলকারী যাত্রী ও পণ্য ওঠা-নামার জন্য যেহেতু নদীতীরে যুৎসই স্থান ও স্থাপনার প্রয়োজন পড়ে তাই এ অঞ্চলে নদীবন্দরের ইতিহাসও নতুন নয়। বাংলায় প্রথম নদীবন্দরের উল্লেখ পাওয়া যায় গ্রিক পন্ডিত টলেমির মানচিত্রে, যেটাকে তিনি তমলিটিস নামে চিত্রিত করেছেন। অনেকের মতে, বাংলার তাম্রলিপ্তি বা তাম্রলিপ্ত বন্দরেরই আরেক নাম এটি। বন্দরটির অবস্থান নিয়ে বিস্তর বিতর্ক থাকলেও পশ্চিমবঙ্গের মেদিনীপুর জেলায় বঙ্গোপসাগরের নিকটবর্তী রূপনারায়ন নদীর মোহনায় অবস্থিত তমলুকই যে সেই প্রাচীন তাম্রলিপ্তি সে ব্যাপারে মোটামুটি একমত সবাই। এ ছাড়া সরস্বতী নদীর মোহনায় অবস্থিত সপ্তগ্রাম বা সাতগাঁও বন্দরও গুরুত্বের সাক্ষ্য দেয়।
সেই ধারা এখনো অব্যাহত রয়েছে। নদীমাতৃক বাংলাদেশে যাত্রী ও পণ্য পরিবহনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছে দেশব্যাপী ছড়িয়ে থাকা বিভিন্ন নদীবন্দর। দেশের অর্থনীতিতে বড় অবদান রাখা এসব নদীবন্দরের অন্যতম ভোলা নদীবন্দর।
২০০৪ সালে ভোলা নদীবন্দরের গেজেট প্রকাশিত হয়। একই সাথে পোর্টস অ্যাক্ট, ১৯০৮-এর সেকশন ৪-এর সাব-সেকশন ২-এর ক্লজ (এ)-এর সাব-সেকশন ২-এ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষকে (বিআইডব্লিউটিএ) নদীবন্দরটির সংরক্ষক নিযুক্ত করা হয়। একই বিজ্ঞপ্তিতে ভোলা নদীবন্দরের সীমানাও নির্ধারণ করে দেওয়া হয়।
গেজেট নোটিফিকেশন অনুযায়ী, উত্তর দিকে নদীবন্দরটি জেলার ভোলা সদর থানায় অবস্থিত ভোলা লঞ্চ ঘাটের সামনে জেলা পরিষদ নির্মিত ‘স্বাগতম স্তম্ভ’ থেকে নাপ্তা ইউনিয়নের সদুর চর নামক গ্রামের পাঙ্গাসিয়া নদীর পূর্ব-পশ্চিম বরাবর ২০০-৪১′-০৮″ উত্তর অক্ষাংশ এবং ভেদুরিয়া ইউনিয়নের চরকালী গ্রামের বিসিক শিল্প নগরীর শেষ সীমানার পূর্ব-পশ্চিম বরাবর ২০০-৪১′-১৬″ উত্তর অক্ষাংশ পর্যন্ত বিস্তৃত। আর দক্ষিণে ‘স্বাগতম স্তম্ভ’ থেকে ভেদুরিয়া ইউনিয়নের চর ছিলাবুনি গ্রামের পাঙ্গাসিয়া নদীর পাকা সেতুর ভাটিতে পূর্ব-পশ্চিম বরাবর ২২০-৪০′-১৬″ উত্তর অক্ষাংশ পর্যন্ত বিস্তৃত।
এ ছাড়া পূর্ব দিকে ভোলা নদীবন্দর বর্ণিত উত্তর ও দক্ষিণ সীমানা বরাবর পাঙ্গাসিয়া নদীর ও ভোলা খালের পূর্ব পাড়ে ভরা কটালের সময় সর্বোচ্চ পানি সমতলের তীর রেখা থেকে নদীর স্থলভাগের দিকে ৫০ মিটার পর্যন্ত বিস্তৃত। পশ্চিম দিকে বিস্তৃত বর্ণিত উত্তর ও দক্ষিণ সীমানা বরাবর পাঙ্গাসিয়া নদীর ও ভোলা খালের পশ্চিম পাড়ে ভরা কটালের সময় সর্বোচ্চ পানি সমতলের তীর রেখা থেকে নদীর স্থলভাগের দিকে ৫০ মিটার পর্যন্ত।
অর্থনৈতিক গুরুত্ব
দ্বীপজেলা ভোলা থেকে ঢাকাসহ দেশের অন্যান্য অঞ্চলে যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম হচ্ছে নৌপথ। স্বাভাবিকভাবেই এই অঞ্চলের মানুষের যাতায়াত ও পণ্য পরিবহনের জন্য এখানকার নদীবন্দরটির গুরুত্ব অপরিসীম। ভোলা নদীবন্দরের যাত্রী ও পণ্য পরিবহনের পরিসংখ্যানই তার প্রমাণ। প্রতি বছর ২০ লাখের বেশি যাত্রী নদীবন্দরটি ব্যবহার করছেন। এই সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। পণ্য পরিবহনেও ভোলা নদীবন্দরের গুরুত্ব কম নয়। প্রতি বছর গড়ে ৭ লাখ টনের মতো পণ্য নদীবন্দরটি ব্যবহার করে পরিবাহিত হচ্ছে। এর পরিমাণ উত্তরোত্তর বাড়ছে।
নৌপথই দ্বীপ জেলাটির বাসিন্দাদের যাতাযাতের একমাত্র মাধ্যম হওয়ায় তাদের সুবিধার কথা বিবেচনা করে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে। যাত্রীরা যাতে নির্বিঘ্নে, আরামদায়ক পরিবেশে নৌপথে ভ্রমণ করতে পারেন তা নিশ্চিত করাই এর লক্ষ্য।