বর্তমান সরকারের গত ১২ বছরে যেসব খাতে অভূতপূর্ব সাফল্য এসেছে নৌখাত তার অন্যতম বলে মন্তব্য করেছেন শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন এমপি। বিশ্ব নৌ দিবসের আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, ব্যবসা-বাণিজ্যসহ সড়ক ও রেলপথের মতো গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে নৌখাত। বন্ধ নৌপথ চালু ও নতুন পথ উন্মুক্ত করার মধ্য দিয়ে সারা দেশে নৌ নেটওয়ার্ক গড়ে উঠতে শুরু করেছে। এর মধ্য দিয়ে এক সময় অর্থনৈতিক খাতের অন্যতম নিয়ামক আবারও চাঙ্গা হয়ে উঠছে। খাতটি শক্তিশালী করতে দক্ষ জনবল গঠনেও নেওয়া হয়েছে নানা উদ্যোগ। সরকারের সমন্বিত পরিকল্পনায় নৌখাতে অভূতপূর্ব সাফল্য এসেছে।
৩০ সেপ্টেম্বর রাজধানীর একটি হোটেলে ‘বিশ্ব নৌ দিবস ২০২১’ উদযাপন উপলক্ষে আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন নৌপরিবহন অধিদপ্তর।
এই বছরের জন্য বিশ্ব নৌ-দিবসের প্রতিপাদ্য ‘নাবিকরাই নৌপরিবহন ব্যবস্থার মূল ভবিষ্যৎ’ উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, নাবিকদের দিকে সমগ্র বিশ্ব সংস্থা ও নৌ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বিশেষ দৃষ্টি দেয়া প্রয়োজন। কোভিড-১৯ পরিস্থিতির কারণে ঘরে ও জাহাজে উভয় ক্ষেত্রে নাবিকরা বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন। শত সহস্র নাবিক জাহাজ থেকে ফিরতে পারছেন না, একইভাবে যোগদান করতেও সমস্যা হচ্ছে। আন্তর্জাতিক ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা, বাইরে বের হওয়ার ব্যাপারে কড়াকড়ি, নাবিক পরিবর্তনে জটিলতার মতো বিষয়গুলো এক কঠিন বাস্তবতার সামনে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে।
তিনি বলেন, নাবিক হওয়া একটি মহৎ এবং বিশ্বের প্রাচীনতম পেশা। বিশ্বে মেরিটাইম এবং শিপিং শিল্পে প্রচুর ক্যারিয়ার গড়ার সুযোগ রয়েছে। অনাদিকাল থেকে নাবিক হওয়া অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং এবং আকর্ষণীয় সুযোগ-সুবিধা সম্পন্ন একটি পেশা। আমাদের সরকার সুশিক্ষিত ও প্রশিক্ষিত নাবিক তৈরিতে মনোযোগ দিচ্ছে।
প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমার ও ভারতের সাথে সমুদ্রসীমা নিয়ে বিরোধ মীমাংসায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্ব ও দূরদর্শিতার প্রশংসা করে মন্ত্রী বলেন, এর মাধ্যমে বাংলাদেশের সামুদ্রিক সম্পদ ব্যবহারে আরও ভালো সুযোগ তৈরি হয়েছে।
নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ্ উদ্দিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এমপি, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি জনাব মেজর (অব.) রফিকুল ইসলাম বীর উত্তম এমপি, বাংলাদেশ ওশান গোয়িং শিপ ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আজম জে চৌধুরী, বাংলাদেশ মেরিন একাডেমি, চট্টগ্রামের কমান্ড্যান্ট নৌ প্রকৌশলী ড. সাজিদ হোসেন এবং নৌপরিবহন অধিদপ্তরের চিফ নটিক্যাল সার্ভেয়ার ক্যাপ্টেন কে এম জসীমউদ্দিন সরকার। নৌপরিবহন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কমডোর এ জেড এম জালাল উদ্দিন মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বর্তমান সরকারের উদ্যোগে নৌপরিবহন অধিদপ্তর আন্তর্জাতিক মানের মেরিটাইম প্রশিক্ষণ ও সনদপত্র প্রদান কার্যক্রমের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক নৌ সংস্থার (আইএমও) ‘হোয়াইট লিস্টে’ অন্তর্ভুক্তি বজায় রেখে দক্ষ জনবল সৃষ্টিসহ জাহাজে কর্মসংস্থানের মাধ্যমে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে সহায়তা করছে। সরকার নৌ সেক্টরের উন্নয়নের লক্ষ্যে নৌপথের সংরক্ষণ ও নৌপরিবহন ব্যবস্থা উন্নয়নে ইতোমধ্যে বেশকিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। দেশের সব নদীকে দখলমুক্ত করা এবং নদীর নাব্যতা ফিরিয়ে আনার জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। বিভিন্ন সমস্যা ও সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও আগের চেয়ে নৌপথ এখন অনেক বেশি নিরাপদ ও পরিবেশবান্ধব। নৌ সেক্টরে মানবসম্পদ উন্নয়নের জন্য চারটি নতুন সরকারি মেরিন একাডেমি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে এবং দক্ষ ক্যাডেট ভর্তির লক্ষ্যে সরকারি ও বেসরকারি সব প্রতিষ্ঠানে সমন্বিত ভর্তি কার্যক্রম চালু করা হয়েছে।
অনুষ্ঠানে নৌপরিবহন অধিদপ্তরের নতুন অনলাইন সেবা উদ্বোধন করা হয়। নৌপরিবহন সেক্টরে বিশেষ অবদানের জন্য পাঁচটি ক্যাটাগরিতে পুরস্কার ও সম্মাননা প্রদান করা হয়। পুরস্কার ও সম্মাননাপ্রাপ্তরা হলেন শিপ অ্যাকুইজিশনের জন্য এস আর শিপিং লিমিটেড, গ্রিন শিপ রিসাইক্লিনিংয়ের জন্য পিএইচপি শিপ রিসাইক্লিং, শিপ ফেয়ারার্স এমপ্লয়মেন্টের জন্য হক অ্যান্ড সন্স লিমিটেড, মেরিটাইম ট্রেনিংয়ের জন্য বাংলাদেশ মেরিন একাডেমি এবং সাগরে সাহসিকতার জন্য এমভি জাওয়াদ জাহাজের ক্যাপ্টেন নাসির উদ্দিন এবং ক্রুগণ।