বিআইডব্লিউটিএ নিয়মিত প্রকাশনা

বৃহস্পতিবার, জানুয়ারি ২৩, ২০২৫
14 C
Dhaka

বিআইডব্লিউটিএ নিয়মিত প্রকাশনা

বৃষ্টি ও নদীর পানি সংরক্ষণের আহবান প্রধানমন্ত্রীর

নদীবাংলা ডেস্ক,

ভূগর্ভস্থ পানির পরিবর্তে বৃষ্টি ও নদীর পানি সংরক্ষণের আহন জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। চট্টগ্রাম ওয়াসা বাস্তবায়িত ‘শেখ হাসিনা পানি শোধনাগার-২’-এর উদ্বোধনকালে প্রধান অতিথির ভাষণে ১৬ মার্চ এই আহবান জানান তিনি। প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে চট্টগ্রাম হোটেল রেডিসন ব্লুতে আয়োজিত অনুষ্ঠানে যুক্ত হন।

শেখ হাসিনা বলেন, যেভাবেই হোক বর্ষকালে বৃষ্টির পানি আমাদের ধরে রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। সেই সাথে নদীর পানিও সংরক্ষণ করতে হবে, যাতে করে আমরা তা সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারি। বাংলাদেশ ভূমিকম্প দুর্যোগপ্রবণ দেশ হওয়ার কারণে ভূগর্ভস্থ পানির ওপর থেকে চাপ কমিয়ে ভূউপরিস্থ পানি ব্যবহারে উদ্যোগী হওয়ার এবং শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার সময় বৃষ্টির পানি সংরক্ষণে জলাধারের ব্যবস্থা রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।

তাঁর সরকার ৯০ শতাংশ মানুষকে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের আওতায় আনার লক্ষ্যে ইউনিয়ন পর্যায়ের মানুষের জন্য বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের ব্যবস্থা নিচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা শুধু ঢাকা ও চট্টগ্রামে নয়, বরং ইউনিয়ন পর্যায়ের ৯০ শতাংশ মানুষের জন্য বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের ব্যবস্থা নিচ্ছি।

চট্টগ্রামসহ সারা দেশে সুপেয় পানির যে সমস্যা তা সমাধানে তিনি সরকার গঠনের পর থেকেই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, চট্টগ্রাম ওয়াসার কর্ণফুলী পানি সরবরাহ প্রকল্প (ফেজ-২) এর আওতায় চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায় নির্মিত পানি শোধনাগার-২-এর উদ্বোধন হচ্ছে। এ রকম আরও কয়েকটি প্রকল্পও তাঁর সরকার করে দিয়েছে। ’৯৬ সালে সরকার গঠনের পর থেকেই চট্টগ্রামের পানি সমস্যা সমাধানে পানি শোধন এবং পাইপলাইনে সরবরাহের বিশেষ প্রকল্প হাতে নেয় তাঁর সরকার। ’৯৯ সালে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা ‘জাইকা’ কর্ণফুলী নদী থেকে পানি শোধন করে চট্টগ্রাম শহরে সরবরাহের প্রকল্প গ্রহণ করে ও সমীক্ষা পরিচালনা করে এবং ২০১১ সালে ‘কর্ণফুলী পানি সরবরাহ প্রকল্প (ফেজ-১)’ এর বাস্তবায়ন শুরু হয়। কারণ, ২০০১ সালে আওয়ামী লীগ সরকারে আসতে না পারায় এই প্রকল্প ব্যাহত হয়। এরপর ২০২০ সালে চট্টগ্রাম শহরের ক্রমবর্ধমান পানির চাহিদা পূরণে মদুনাঘাটে দৈনিক ৯ কোটি লিটার ক্ষমতাসম্পন্ন শেখ রাসেল পানি শোধনাগার উদ্বোধন করা হয়।

চট্টগ্রাম মহানগরীর পাশাপাশি কর্ণফুলী নদীর পশ্চিম তীরে কাফকো, সিইউএফএল, কোরিয়ান ইপিজেড, আনোয়ারায় চায়না ইকোনমিক জোন, গড়ে ওঠা শিল্প এলাকাসহ আবাসিক এলাকার পানির চাহিদা মেটাতে দৈনিক ৬ কোটি লিটার সরবরাহ ক্ষমতাসম্পন্ন পানি সরবরাহ প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।

কর্ণফুলী, হালদা ও সাঙ্গুর মতো নদীগুলো যাতে দূষণমুক্ত থাকে, সে বিষয়েও জোর দেন তিনি। এ সময় প্রত্যেকটি শিল্পপ্রতিষ্ঠানে তাঁর সরকার বর্জ্য ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলায় বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়েছে উল্লেখ করে এগুলো যেন ভালোভাবে চলে সেদিকে লক্ষ রাখার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহবান জানান প্রধানমন্ত্রী।

এই ব-দ্বীপ অঞ্চলের মানুষ যাতে সুপেয় পানি পেতে পারে এবং তাঁদের জীবনমান উন্নত করার জন্য তাঁর সরকার পানিসম্পদের সমন্বিত ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে ১০০ বছর মেয়াদি ‘বাংলাদেশ ডেল্টা প্ল্যান-২১০০’ প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।

চট্টগ্রামকে দেশের অর্থনীতির প্রাণশক্তি উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, অতীতে অনেক ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রধান কার্যালয় চট্টগ্রামে থাকলেও ’৭৫-পরবর্তী সরকারগুলো এগুলো ঢাকাকেন্দ্রিক করে ফেলায় চট্টগ্রাম অবহেলিতই থেকে যায়। তবে ’৯৬ সালে আওয়ামী লীগ প্রথমবার সরকার গঠনের পরই চট্টগ্রাম যেন প্রাণ ফিরে পায় এবং ব্যবসা-বাণিজ্যসহ সবকিছুতে উন্নত হয় সেই উদ্যোগ নেয়। চট্টগ্রামে প্রথম অন্তর্জাতিক বিমানবন্দর আওয়ামী লীগ সরকারই করেছে। আজকে ঢাকার সঙ্গে চট্টগ্রামের যোগাযোগ ব্যবস্থারও বিশেষ উন্নতি করা হয়েছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণ প্রায় সমাপ্তির পথে, ঢাকা-চট্টগ্রাম হাইওয়ে নির্মাণ করা হয়েছে। এভাবেই চট্টগ্রামের সার্বিক উন্নয়নের দিকে আমরা দৃষ্টি দিচ্ছি।

তাঁর সরকার সুপেয় পানি, বর্জ্য ব্যবস্থাপনাসহ যেসব নাগরিক সুবিধাগুলো সৃষ্টি করে দিচ্ছে সেগুলো জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে যেন সামঞ্জস্য রেখে চলমান থাকে সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মহলকে ব্যবস্থা নেয়ারও নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী।

অন্যদের মধ্যে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দেন। তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন। স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দীন আহমদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী এ কে এম ফজলুল্লাহ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here