ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সাম্প্রতিক বাংলাদেশ সফরকালে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতামূলক সম্পর্কের বিভিন্ন দিক নিয়ে দুই দেশের মধ্যে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। দ্বিপক্ষীয় শীর্ষ বৈঠকে বাংলাদেশ-ভারত পানিসম্পদ-সংক্রান্ত সহযোগিতা বৃদ্ধির বিষয়টিতে বিশেষ জোর দেওয়া হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ২৬ থেকে ২৮ মার্চ বাংলাদেশ সফর করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী।
এ সফর নিয়ে দেওয়া যৌথ বিবৃতি অনুযায়ী, তিস্তা নদীর পাণিবণ্টন দীর্ঘদিনের বকেয়া অন্তর্বর্তী চুক্তিটি শিগগিরই সম্পাদনের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আবারও উদ্যোগ গ্রহণের অনুরোধ জানিয়েছেন। তিস্তা অববাহিকার ওপর নির্ভরশীল মানুষের জীবনযাত্রা দীর্ঘদিন ধরে সংকটের মধ্যে রয়েছে। বাংলাদেশের জন্য তিস্তার পানির যথাযথ হিস্যা পাওয়া অত্যন্ত প্রয়োজন। এই চুক্তির খসড়া ২০১১ সালে উভয় সরকার গ্রহণ করে।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে নরেন্দ্র মোদি জানিয়েছেন, এই চুক্তি বাস্তবায়নের ব্যাপারে ভারত অঙ্গীকারবদ্ধ। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে শিগগিরই আলোচনা করে এটি রূপায়ন করা হবে।
এছাড়া ছয়টি অভিন্ন নদী মনু, মুহুরি, খোয়াই, গোমতী, ধরলা এবং দুধকুমার নদীর পাণিবণ্টনের ক্ষেত্রে উভয় নেতা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণায়কে আলোচনা দ্রুত শেষ করতে নির্দেশ দিয়েছেন। পাশাপাশি উজানে সুরমা কুশিয়ারা প্রকল্পের কুশিয়ারা নদীর পানিকে সেচের কাজে ব্যবহার করতে রহিমপুর খাল খননের বিষয়ে বাংলাদেশ সরকার ভারতকে অনুরোধ জানিয়েছে, ভারত যেন দ্রুত এ-সংক্রান্ত অনুমতি দেয়। এই প্রসঙ্গে উভয়পক্ষ দ্রুত চুক্তি স্বাক্ষরের বিষয়টিও আলোচনা করেছে। সংশ্লিষ্ট রাজ্য এ নিয়ে রাজ্য সরকারের সাথে আলোচনা চলছে বলে ভারতের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
২০১৯ সালের অক্টোবরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের সময় ফেনী নদী থেকে ১ দশমিক ৮২ কিউসেক পানি নেওয়ার বিষয়ে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে একটি অন্তর্বর্তী চুক্তি হয়েছিল। ভারত বাংলাদেশকে এই চুক্তি দ্রুত সম্পাদনের অনুরোধ জানিয়েছে।
গঙ্গা-পদ্মা জলাধার এবং ১৯৯৬ সালের গঙ্গার পানিবণ্টন চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশ যাতে গঙ্গার পানির হিস্যা নির্ধারিত পরিমাণে পেতে পারে, সে বিষয়ে একটি যৌথ কারিগরি কমিটি গঠন করা হয়েছিল। দুই প্রধানমন্ত্রী এই কমিটিকে দ্রুত এ-সংক্রান্ত প্রতিবেদন তৈরির নির্দেশ দিয়েছেন।
যৌথ নদী কমিশনের ইতিবাচক অবদানকে উভয় নেতাই স্বীকৃতি দিয়েছেন এবং দুই দেশের পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব পর্যায়ের আলোচনাটি ফলপ্রসূ হয়েছে বলেও জানান তাঁরা।
ভারত মুন্সিগঞ্জ এবং পানগাঁওয়ের মধ্যে প্রয়োজনীয় প্রোটোকল অনুযায়ী নৌপরিবহন ব্যবস্থা শুরু করার জন্য বাংলাদেশকে অনুরোধ জানিয়েছে ভারত। আশুগঞ্জে একটি কনটেইনার টার্মিনাল গড়ে তোলার প্রস্তাবও দিয়েছে দেশটি। যতদিন না মুন্সিগঞ্জ ও পানগাঁওয়ের মধ্যে নৌপরিবহন শুরু হয়, ততদিন এটি কার্যকর থাকবে।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ফেনী নদীর ওপর মৈত্রী সেতু উদ্বোধনের কথাও উল্লেখ করেন তার সফরকালে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ প্রসঙ্গে বলেন, ফেনী নদীর ওপর এই সেতু উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে বিশেষত উত্তর-পূর্ব ভারতের সাথে যোগাযোগ ও অর্থনৈতিক কর্মকা-কে দৃঢ় করার বিষয়ে তাঁদের অঙ্গীকার প্রতিফলিত হয়েছে। নতুন এই সেতু দিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্য ও পর্যটনের প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো গড়ে তুলতে উভয় দেশ একমত হয়েছে।