আসামের ধুবরি বন্দরটি বাংলাদেশে পণ্য রপ্তানির হাব হয়ে ওঠার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে সক্ষমতা পুরোপুরি কাজে লাগাতে দিচ্ছে না কার্যক্রম পরিচালনায় প্রতিবন্ধকতা। এ মন্তব্য করেন ধুবরি ওয়াটারওয়েজ ইন্টারন্যাশনাল ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আতোয়ার রহমান। ২১ মার্চ ধুবরিতে অনুষ্ঠিত ‘ক্রস-বর্ডার ট্রেড, ট্যুরিজম অ্যান্ড নেভিগেশন থ্রু ট্রান্স-বাউন্ডারি ইনল্যান্ড ওয়াটারওয়েজ বিটুইন ইন্ডিয়া অ্যান্ড বাংলাদেশ’ শীর্ষক এক বৈঠকে এই মন্তব্য করেন তিনি। বিভিন্ন অংশীজন ও ব্যবসায়ীরা বৈঠকে অংশ নেন।
সুইডিশ ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট কো-অপারেশন এজেন্সির (সিডা) সহায়তায় ট্রান্স-বাউন্ডারি রিভারস অব সাউথ এশিয়া (ট্রোসা) শীর্ষক কর্মসূচির আওতায় বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়। এতে ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে ছিল অক্সফাম। আর অংশগ্রহণকারী ছিলেন ২০ জনের মতো।
আতোয়ার রহমান বলেন, ব্রহ্মপুত্র এখন একটি সেকেন্ডারি চ্যানেল হয়ে গেছে। অভ্যন্তরীণ নৌপথকে তাই নৌ-চলাচলের উপযোগী রাখতে বিপুল পরিমাণ ড্রেজিংয়ের প্রয়োজন। ধুবরি বন্দর আসামের একটি গুরুত্বপূর্ণ বন্দর, যার অবস্থান ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে ধুবরি শহরে। বন্দরটি জাতীয় নৌপথ-২-এ অবস্থিত এবং পোর্ট টার্মিনালের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। একই সাথে এটি জাতীয় নৌপথ-২-এর পশ্চিম প্রান্তে বাংলাদেশ সীমান্তের কাছাকাছি অবস্থিত।
বাণিজ্য, নিয়ন্ত্রণ ও সুশাসনবিষয়ক বৈশ্বিক চিন্তক প্রতিষ্ঠান কাটসের ফেলো সৌরভ কুমার বলেন, ব্যবসায়ী ও রপ্তানিকারকদের মাঠপর্যায়ে যেসব ইস্যু ও উৎকণ্ঠার মুখোমুখি হতে হয় সঠিক সময়ে নীতিনির্ধারকদের কাছে তা পৌঁছায় না। ধুবরি বন্দর দিয়ে বাণিজ্য পরিচালনাকারী স্থানীয় ব্যবসায়ী ও রপ্তানিকারকরা যেসব সমস্যার সম্মুখীন হন, সেগুলো তুলে আনাই এ বৈঠকের উদ্দেশ্য।
নেতৃস্থানীয় আমদানি-রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান বনসালি ইন্টারন্যাশনালের ব্যবস্থাপক ও চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট ললিত কুমার চোপড়া বলেন, সব নথি ডিজিটালকরণ, ইলেকট্রনিক ডেটাবেজ ইন্টারচেঞ্জ (ইডিআই) ব্যবস্থার দ্রুত বাস্তবায়ন, কাগুজে কাজ কমিয়ে আনা এবং সময়ানুগ অনুমোদন এ অঞ্চলে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। তাছাড়া বন্দরের সুবিধাদিও আরও বাড়ানো প্রয়োজন, যাতে নির্বিঘ্ন ও দক্ষ বাণিজ্য নিশ্চিত হয়। অধিকন্তু ধুবরি বন্দরে রো রো সেবা পুনরায় চালু করা গেলে ব্যয় ও সময় উভয়ই কমে আসবে।
ভারতীয় নৌযান যাতে ইন্দো-বাংলা প্রটোকল রুটে চলাচল করতে পারে সেজন্য স্থানীয় জাহাজ নির্মাণ, রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামত সুবিধা গড়ে তোলার ওপরও দৃষ্টি আকর্ষণ করেন কেউ কেউ। এই রুটে এখন কেবল বাংলাদেশি নৌযান চলাচল করছে। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বলেন, ভুটানের পণ্যের মতো ভারতীয় পণ্যের ওপর থেকেও বাংলাদেশ যদি আমদানি শুল্ক কমায় তাহলে স্থানীয় পণ্যও ধুবরি থেকে চিলমারীতে রপ্তানি করা সম্ভব।
কাটস ব্যবসায়ীদের তাদের চ্যালেঞ্জগুলো নিয়ে আলোচনা করার এবং ইস্যুগুলো ইনল্যান্ড ওয়াটারওয়েজ অথরিটি অব ইন্ডিয়া (আইডব্লিউএআই) ও বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) সামনে তুলে ধরার অভিন্ন প্ল্যাটফর্ম সুবিধা দিচ্ছে।
আর ট্রোসা হচ্ছে পাঁচ বছর মেয়াদি আঞ্চলিক পানি সুশাসন কর্মসূচি, যার উদ্দেশ্য আন্তঃসীমান্ত নদী গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র ও মেঘনা নদীতীরের মানুষের দারিদ্র্য হ্রাস করা। দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ৭০ কোটির বেশি মানুষ খাদ্য, পানি ও জ্বালানির জন্য গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র, মেঘনা ও সালউইন নদীর ওপর নির্ভরশীল।