কুড়িগ্রাম জেলার চিলমারীতে নদীবন্দর নির্মাণ প্রকল্পটি অনুমোদন পেয়েছে। ৮ জুন জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রকল্পটি অনুমোদন দেওয়া হয়, যা বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ২৩৫ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। প্রকল্পটির বাস্তবায়নকাল ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত।
প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে চিলমারী এলাকায় বছরে প্রায় ৩ লাখ ২৫ হাজার যাত্রী ও ১ লাখ ৫০ হাজার টন পণ্য সুষ্ঠু ও নিরাপদে ওঠানামা নিশ্চিত হবে। পাশাপাশি নৌ-প্রটোকলের আওতায় ভারতের আসাম, নেপাল ও ভুটানের সাথে যোগাযোগের অন্যতম কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৬ সালের ৭ সেপ্টেম্বর চিলমারীকে নদীবন্দর হিসেবে ঘোষণা করেন এবং অন্যান্য নদী ও সমুদ্রবন্দরের সাথে একে সংযোগ করার ওপর জোর দেন। সে অনুযায়ী, ২০১৬ সালের ৮ ডিসেম্বর এ-সংক্রান্ত গেজেট প্রকাশিত হয়।
প্রকল্পটির এলাকা হলো কুড়িগ্রাম জেলার অন্তর্গত চিলমারী উপজেলার রমনা ও জোড়গাছ ঘাট এলাকা, রাজিবপুর উপজেলার রাজিবপুর ঘাট ও নয়ারহাট ঘাট এলাকা এবং রৌমারী উপজেলার রৌমারী ঘাট এলাকা।
প্রকল্পটির প্রধান উদ্দেশ্য হলো রংপুর বিভাগের অপেক্ষাকৃত সুবিধাবঞ্চিত কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, নীলফামারী, রংপুর ও গাইবান্ধা জেলার কিছু এলাকার নৌ-পরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়ন।
মধ্যযুগের পাঠান ও মুঘল আমলে পূর্ব ভারতের অন্যতম নদীবন্দর ছিল চিলমারী। সেই সময় জাহাজও নির্মিত হতো নদীবন্দরটিতে। সেই তথ্যের উল্লেখ পাওয়া যায় ইতিহাসবিদ আর কে মুখার্জির লেখা ‘হিস্ট্রি অব ইন্ডিয়ান শিপিং’ গ্রন্থে। সেখানে তিনি উল্লেখ করেছেন, সুবেদার ইসলাম খানের অহোমরাজের সেনাবাহিনীর সাথে নৌযুদ্ধে চিলমারীতে নির্মিত যুদ্ধজাহাজ ব্যবহৃত হয়েছিল। ব্রিটিশ আমলেও ভারতের পূর্বাংশ আসাম ও অখ- বঙ্গের অন্যতম নদীবন্দর ছিল চিলমারী।
ব্রহ্মপুত্রের ভাঙনে একাধিকবার এই চিলমারী বন্দরের স্থান বদলে গিয়েছে। ১৮৯৭ সালের প্রচণ্ড ভূমিকম্পের পর চিলমারী বন্দর রাজিবপুরের নিকটবর্তী স্থান থেকে পশ্চিমে সরে গিয়ে জিতুর হাট নামক স্থানে স্থিতি লাভ করেছিল। ষাটের দশক পর্যন্ত বন্দরের নতুন যে অবস্থান ছিল, তাও পরবর্তী সময়ে কয়েক দফা ভাঙনের ফলে ব্রহ্মপুত্রের বুকে বিলীন হয়ে যায়।