করোনা-পরবর্তী বৈশ্বিক বাস্তবতায় অভ্যন্তরীণ নৌপথে বাণিজ্য বৃদ্ধি দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর জন্য জরুরি হয়ে পড়েছে বলে মনে করেন অংশীজন ও বিশিষ্টজনরা। ৮ সেপ্টেম্বর বেসরকারি গবেষণা সংস্থা উন্নয়ন সমন্বয় আয়োজিত ‘রিজিয়নাল কো-অপারেশন ডায়ালগ সিরিজ’ এর প্রথম পর্বে ‘প্রমোটিং ইনল্যান্ড ওয়াটারওয়েজ: প্রসপেক্টস অ্যান্ড চ্যালেঞ্জেস’ শীর্ষক ওয়েবিনারের এই অভিমত ব্যক্ত করা হয়। ভুটান, বাংলাদেশ ও ভারত থেকে নদীপথে বাণিজ্যবিষয়ক গবেষক, নীতিনির্ধারক এবং ব্যক্তি খাতের উদ্যোক্তারা আলোচনায় অংশ নেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান ওয়েবিনারে বলেন, অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের জন্য বিনিয়োগের ৮০ শতাংশই হচ্ছে উন্নত দেশগুলোতে। অন্যদিকে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে বৈদেশিক বিনিয়োগ কমেছে ১২ শতাংশ। এ অবস্থায় দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে আন্তঃদেশীয় বাণিজ্য সহযোগিতা বাড়ানোর বিকল্প নেই। এক্ষেত্রে পরিবহন মাধ্যম হিসেবে অভ্যন্তরীণ নৌপথ হতে পারে ব্যবসায়ীদের জন্য সবচেয়ে সহজ ও সাশ্রয়ী বিকল্প।
বিপুল সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও নীতিগতভাবে রেল ও সড়ক যোগাযোগের তুলনায় অভ্যন্তরীণ নৌপথ কম গুরুত্ব পেয়েছে। অন্যান্য মাধ্যমের তুলনায় সাশ্রয়ী ও পরিবেশসম্মত পরিবহন মাধ্যম হওয়ার পরও অভ্যন্তরীণ নৌপথের সম্ভাবনার পুরোটা এখনো কাজে লাগানো হয়নি। অভ্যন্তরীণ নৌপথের পুনর্জাগরণের মধ্য দিয়ে পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে দেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের উদ্যোক্তাদের ব্যাপক লাভবান হওয়ার সুযোগ রয়েছে। ফলে সবচেয়ে কম খরচে পণ্য পরিবহনের একটা সুযোগ তৈরি হবে তাদের জন্য।
আলোচনায় অংশ নিয়ে বাংলাদেশ কার্গো ভেসেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাহী সদস্য মাহবুব উদ্দীন আহমেদ বীর বিক্রম বলেন, নদীপথে বাণিজ্য সহজীকরণ সম্ভব হলে এ অঞ্চলের সব দেশই যেহেতু তার সুবিধাভোগী হবে, তাই সব পক্ষের সম্মিলিত অংশগ্রহণ জরুরি।
পশ্চিমবঙ্গের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে নদীপথে পণ্য পরিবহন সহজতর করার মাধ্যমে বেনাপোল স্থলবন্দরের ওপর চাপ কমানোর সম্ভাব্যতা তুলে ধরেন কলকাতার বেঙ্গল চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের পরিচালক সোমা মিত্র। বিআইডব্লিউটিএ’র সাবেক পরিচালক সৈয়দ মনোয়ার হোসেন অভ্যন্তরীণ নৌপথে বাণিজ্যের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য হালনাগাদ ও নির্ভরযোগ্য তথ্যের প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন। অভ্যন্তরীণ নৌপথে বাণিজ্যে ব্যবসায়ীদের আস্থা বাড়াতে বেশি বেশি পাইলট ভয়েজ পরিচালনা করে ঝুঁকিগুলো চিহ্নিত করা এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন বলে মত দেন ভারতের কাটস ইন্টারন্যাশনালের পলিসি অ্যানালিস্ট অর্ণব গাঙ্গুলি। আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বিশেষজ্ঞ পৃথ্বীরাজ নাথ বলেন, অভ্যন্তরীণ নৌপথে বাণিজ্য সহজীকরণের উদ্যোগ গ্রহণের সময় অবশ্যই এসব উদ্যোগের পরিবেশগত ও সামাজিক প্রভাবের দিকগুলো বিবেচনায় রাখা প্রয়োজন।
ওয়েবিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন উন্নয়ন সমন্বয়ের রিসার্চ অ্যাসোসিয়েট অয়ন সুফী। তিনি তার উপস্থাপনায় দেখান, অভ্যন্তরীণ নৌপথের কার্যক্রমে গতি আনার মধ্য দিয়ে বেনাপোল, সোনামসজিদ ও বুড়িমারী স্থলবন্দরে যানবাহনের চাপ যথাক্রমে ৫৩, ৯০ ও ৯৯ শতাংশ কমানো সম্ভব। এছাড়া সড়কের পরিবর্তে নৌপথে পণ্য পরিবহন করলে পরিবহন ব্যয় কমবে প্রায় ৬০ শতাংশ।