সমুদ্রে পারদের উপস্থিতি মানব স্বাস্থ্য ও বন্যপ্রাণী বিশেষ করে উপকূলীয় এলাকার ওপর মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এই পারদের উৎস হিসেবে এতদিন বায়ুম-লকেই মূল্যায়ন করা হতো, যেখান থেকে সরাসরি ধাতুটি জমা হয়। তবে ইয়েল স্কুল অব দ্য এনভায়রনমেন্টের ইকোসিস্টেম ইকোলজির অধ্যাপক পিটার রেমন্ড এক গবেষণায় দেখিয়েছেন, বিশ্বের উপকূলগুলোতে বিষাক্ত ভারী ধাতুটির প্রধান উৎস আদতে নদী। নেচার জিওসায়েন্সে গবেষণাটি প্রকাশিত হয়েছে।
পিটার রেমন্ড বলেন, এটা অনেকটা পারদের চক্রটাকে নতুন করে দেখা। আগে ধারণা ছিল সমুদ্রে অধিকাংশ পারদই জমা হয় বায়ুম-ল থেকে। এরপর তা উপকূলের দিকে যায়। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, সমুদ্র উপকূলে অধিকাংশ পারদই আসে নদীগুলো থেকে। এরপর তা উন্মুক্ত সমুদ্রের দিকে যায়।
রেমন্ড’স ল্যাবের পোস্টডক্টরাল ফেলো মাওদিয়ান লিউ বলেন, নীতিনির্ধারকরা বর্তমানে বায়ুম-ল থেকে নির্গত ও জমা হওয়া পারদ নিয়ন্ত্রণেই বেশি মনোযোগী। নদী থেকে সমুদ্র উপকূলে পারদ জমা হওয়ার বিষয়টি তারা অবগত নন। নতুন এ গবেষণায় পারদ সীমিত করার গুরুত্বের বিষয়টি উঠে এসেছে, যা নদীতে মেশে।
নদী থেকে পারদের বার্ষিক প্রবাহের চক্রটিও পরীক্ষা করে দেখেছেন গবেষকরা। তাতে দেখা গেছে, বৈশ্বিকভাবে এর প্রবাহ সবচেয়ে বেশি থাকে আগস্ট ও সেপ্টেম্বরে। সমুদ্রে সবচেয়ে বেশি পারদের জোগান দেয় কোন কোন নদী তাও বিশ্লেষণ করেছেন তারা। বিশ্লেষণ বলছে, এর অর্ধেকের জন্য দায়ী মাত্র ১০টি নদী। অ্যামাজন নদী রয়েছে এই তালিকায় সবার ওপরে। এর পরেই রয়েছে ভারত ও বাংলাদেশের গঙ্গা এবং চীনের ইয়াংজি।
বায়ুম-লে পারদের মূল উৎস কয়লা পোড়ানো, যা শেষ পর্যন্ত সমুদ্র ও মাটিতে এসে মেশে। নদীগুলো যে পারদ সমুদ্রে বয়ে নিয়ে যায় সেটিও আসে বায়ুম-ল থেকেই, যা মাটিতে এসে মেশে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ভয়াবহ ঝড় ও বন্যা দীর্ঘদিন ধরে মাটিতে সুপ্ত অবস্থায় থাকা পারদ বর্ধিত হারে সমুদ্রে বয়ে আনতে পারে বলেও জানিয়েছেন গবেষকরা।