বিআইডব্লিউটিএ নিয়মিত প্রকাশনা

বৃহস্পতিবার, জানুয়ারি ২৩, ২০২৫
16 C
Dhaka

বিআইডব্লিউটিএ নিয়মিত প্রকাশনা

মেকং নদীর বাঁধ নিয়ে উদ্বেগ

মেকং নদীর উজানে চীনের অংশ লানকাঙ্গ জিয়াংয়ে জলবিদ্যুৎ উৎপাদনে একাধিক বাঁধ দিয়েছে দেশটি। তিব্বত মালভূমি থেকে উৎপন্ন প্রমত্তা ও আন্তর্জাতিক নদীটি একসময় মুক্তভাবে প্রবাহিত হলেও বাঁধের কারণে এখন প্রবাহিত হচ্ছে খণ্ডিত ভাবে। মেকংয়ে দেওয়া বাঁধের ১১টিই চীনের। বেশ কয়েকটি বাঁধ লাওসও দিয়েছে।

মেকংয়ের ভাটি অঞ্চলের দেশগুলো এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। থাইল্যান্ডের চিয়াং রাই প্রদেশের মেকং নদী পাড়ের গ্রামগুলোর বাসিন্দাদের নদীর প্রবাহ হঠাৎ বদলে যাওয়ায় বিলাপ করতেও দেখা গেছে। কারণ, বন্যাকে যদি বাদও দেওয়া হয় তার পরও গ্রামবাসীর মাছ ধরা ও চাষাবাদে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে এতে।

মেকংয়ের প্রবাহে এ ধরনের দ্রুত ও হঠাৎ পরিবর্তন ১৯৯৩ সাল অর্থাৎ প্রথম বাঁধ হিসেবে মানওয়ান বাঁধের কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর থেকেই প্রতীয়মান হচ্ছে। এটিসহ অন্য বাঁধগুলোতে সংরক্ষিত পানির পরিমাণ ৪ হাজার ১৭০ কোটি ঘনমিটারের বেশি। এর অর্থ হলো বিপুল পরিমাণ পানি নদীর বাস্তুতন্ত্র থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

ফলে ২০০৭ সাল থেকে দুটি ক্ষেত্রে মারাত্মক প্রভাব লক্ষ করা যাচ্ছে। সারা বছর মেকং নদীর পানির স্তরের ওঠানামা এবং পানিপ্রবাহের অস্বাভাবিক উত্থান-পতন এর প্রাকৃতিক চক্রকে স্থায়ীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। পুরো শীত ও শুকনো মৌসুমে মেকং নদীর পানির স্তরের ওঠানামা দৃশ্যমান থাকে। উদাহরণ হিসেবে ২০১৩ সালের ১৩ থেকে ১৭ ডিসেম্বরের কথা উল্লেখ করা যেতে পারে। চীনের আরেকটি বাঁধ জিঙ্গহঙ্গ চালু করার পর চিয়াং রাইয়ের চিয়াং সায়েন জেলায় মেকং নদীর পানির স্তর হঠাৎ ৩ মিটার বেড়ে যায়।

মেকং নদীর হাইড্রোলজিক্যাল ধরনের এ পরিবর্তন ডিম ছাড়ার জন্য মাছের শাখা নদীতে গমনকে মারাত্মক প্রভাবিত করছে। নদীটির বাস্তুতন্ত্র চমৎকার ও অনন্য। মেকংয়ের মূল প্রবাহে পানির স্তর শাখা নদীগুলোর চেয়ে তুলনামূলক নিচু। মূল প্রবাহে পানিপ্রবাহের সামান্য পরিবর্তন ডিম ছাড়ার জন্য মাছের শাখা নদীতে গম বাধাগ্রস্ত করে এবং ফলে মাছের উৎপাদন হ্রাস পায়। অথচ উজানের ছয় কোটি গ্রামবাসীর আয় ও আমিষের প্রধান উৎস এই মাছ।

মেকং নদীর বাস্তুতন্ত্রের বিদ্যমান এই সংকট নিয়ে বিপাকে আছে থাই সরকার। মেকংয়ের উজানে সৃষ্ট খরা পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার জন্য থাইল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডন প্রমুদ্দিনাই ২০২০ সালের জানুয়ারিতে চীন সফর করেন। ওই বছরের ২৪ জানুয়ারি থেকে পানিপ্রবাহ ১৫০ কিউসেক বাড়াতে সম্মতও হয়। কিন্তু বাস্তবে যা হয়েছে তা হলো প্রতিশ্রুত সময়ের আগেই চীনের বাঁধ পরিচালক সংস্থা প্রবাহ ১৫০ কিউসেক হ্রাস করেছে।

বিভিন্ন সংখ্যা, উপাত্ত দিয়ে চীন এই দাবি করছে যে চীনা ভূখণ্ড থেকে মেকংয়ের ভাটিতে পানিপ্রবাহ ১৩ শতাংশেরও কম। একই সাথে তারা এই দাবিও করছে যে চীনের বাঁধ মেকংয়ের ভাটিতে খরা ও বন্যা প্রশমনে ভূমিকা রাখছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here