নদীর স্রোতে অন্তহীন। নদী সম্পর্কে আমাদের প্রথাগত ধারণা এটাই। এই ধারণায় এবার পরিবর্তন আনলেন বিজ্ঞানীরা তাদের নতুন এক গবেষণায়। তারা বলছেন, বিশ্বের সব নদীর অন্তত ৫১ শতাংশ বছরে কম করে হলেও একদিন প্রবাহ থামিয়ে দেয়।
অত্যধিক ঠান্ডায় সাময়িকভাবে নদী জমে যেতে পারে। আবার অত্যধিক গরমে প্রবাহ থামিয়ে পানি বাষ্পীভূত হতে পারে। উদাহরণ হিসেবে অস্ট্রেলিয়ার ৭০ শতাংশ নদীই বারোমাসী নয়। যেসব নদী বারোমাসী নয় প্রথমবারের মতো বিজ্ঞানীরা সেগুলো চিহ্নিত করার উদ্যোগ নেন। ফলাফলে দেখা যায়, এ ধরনের নদীর অস্তিত্ব রয়েছে সবখানেই।
আমাদের এই পৃথিবীর প্রত্যেক নদী ব্যবস্থাতেই এমন একটি চ্যানেল আছে যেটির প্রবাহ সাময়িকভাবে থেমে যায়। যেসব নদী বারোমাসী নয় সেগুলোর রয়েছে খুবই মূল্যবান বাস্তুতন্ত্র। সেখানে বিশেষ প্রজাতি বাস করায় নদীতে পানির উপস্থিতি ও অনুপস্থিতির সাথে মানিয়ে নিতে হয় তাদেরকে।
কানাডার ম্যাকগিল ইউনিভার্সিটির ইকোহাইড্রোলজিস্ট ম্যাথিস মেসাজারের ভাষায়, এই ধরনের নদীগুলো মানুষের জন্য গুরুত্বপানি পানি ও খাদ্যের উৎসের জোগান দিয়ে থাকে এবং পানির গুণগত মান নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। কিন্তু অধিকাংশ সময়ই সেগুলো নিয়ে অব্যবস্থাপনা দেখা যায় অথবা ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম ও সংরক্ষণ আইনের বাইরে রাখা হয়। সহজ কথায় এ ধরনের নদীগুলো উপেক্ষিত থাকে।
আগের একাধিক গবেষণায় বারোমাসী নয় যেসব নদী সেগুলোর মূল্য অতোটা নেই বলে ধরা নেওয়া হয়েছে। সেগুলো সংরক্ষণের গুরুত্বও অতোটা নেই। এ ধরনের অনেক নদীরই আজ আর কোনো নাম নেই এবং মানচিত্র থেকেও হারিয়ে গেছে। তার মানে অবশ্য এটা নয় যে, তারা অগুরুত্বপূর্ণ। গবেষকরা বলছে, এসব নদীকে উপেক্ষা করাটা ভুল। বিশেষ করে দ্রুত জলবায়ু পরিবর্তনের এই সময়টাতে।
গত ৫০ বছর ধরে বৈশ্বিক উষ্ণতা ও ভূমি ব্যবহারে পরিবর্তন বেশি সংখ্যক নদীর প্রবাহ থামিয়ে দিয়েছে। এমনকি মিশরের নীল, এশিয়ার ইন্দাস, চীনের ইয়েলো ও উত্তর আমেরিকার কলোরাডো নদীর কিছু অংশের প্রবাহ থেমে যাচ্ছে, পরক্ষণেই আবার চালু হচ্ছে। তাই গবেষকরা সতর্ক করে দিয়ে বলছেন, অব্যাহতভাবে বৈশ্বিক পরিবর্তনের কারণে সামনের দশকগুলোতে বৈশ্বিক নদী ব্যবস্থার বড় অংশের প্রবাহ মৌসুমের একটা সময়ে থেমে যাবে।