বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত নদীগুলোর অন্যতম ম্যানিলার পাসিগ নদী। নদীতে জমে থাকা আবর্জনার স্তূপ সংগ্রহ করে তা বস্তায় ভরা একদল ফিলিপিনোর নিত্যদিনের কাজ। এই কাজটি তারা করে চলেছেন নৌপথটিকে পরিচ্ছন্ন রাখার আকাঙ্খা থেকে। সমুদ্রে জমা হওয়া প্লাস্টিকেরও বড় উৎস নদীটি।
কাজটি যারা নিষ্ঠার সাথে করে চলেছেন তারা সবাই এক দশক আগে তৈরি একটি গ্রুপ ‘রিভার ওয়ারিয়রস’-এর সদস্য। গ্রুপের সদস্য সংখ্যা ১০০-এর মতো।
ফিলিপিন্সের রাজধানী ম্যানিলার মধ্য দিয়ে বয়ে চলা ২৭ কিলোমিটার দীর্ঘ নদীটি একসময় ছিল গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য রুট। কিন্তু নগরায়ণের চাপে ও দুর্বল পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থার কারণে সেই নদীই এখন মৃতপ্রায়।
ছয় বছর ধরে সংগঠনটিতে কাজ করছেন নদী যোদ্ধা অ্যাঙ্গেলিটা ইম্পেরিও। তার কথায়, এক মুহূর্তের জন্যও নদীটিকে বর্জ্যমুক্ত অবস্থায় পাবেন না। বর্জ্যের পরিমাণ অসীম।
স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে নদী যোদ্ধারা কাজটি শুরু করলেও স্থানীয় সরকারের কাছ থেকে ন্যূনতম একটা আয় তাদের হচ্ছে এবং ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে নদীর বিভিন্ন অংশে আবর্জনা সংগ্রহের কাজটি করছে। আরেক নদী যোদ্ধা ডেক্সটার ওপিয়ানাও ছয় বছর ধরে সংগঠনটির সাথে রয়েছেন। তার ভাষায়, তিনিসহ আরো ১৯ জন কর্মী পালাক্রমে সাত ঘণ্টা করে কাজ করেন এবং প্রতিদিন গড়ে ৮০ থেকে ১০০ বস্তা আবর্জনা সংগ্রহ করেন। তবে বর্ষা মৌসুমে আবর্জনা সংগ্রহের পরিমাণটা বেড়ে যায়।
পাসিগ থেকে নদী যোদ্ধারা যেসব বর্জ্য সংগ্রহ করেন তার সিংহভাগই প্লাস্টিক র্যাপার, সিঙ্গেল-ইউজ স্যাশে ও প্যাকেজিং সামগ্রী। তবে কোভিড-১৯ মহামারী শুরু হওয়ার পর থেকে এসব বর্জ্যরে সাথে সার্জিক্যাল মাস্কও সংগ্রহ করতে হচ্ছে তাদের।
পাসিগের এ বর্জ্য যে কেবল ফিলিপিন্সের সমস্যা বাড়াচ্ছে, তা নয়। অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির ২০২১ সালে প্রকাশিত ‘আওয়ার ওয়ার্ল্ড ইন ডেটা’ শীর্ষক প্রতিবেদন বলছে, সমুদ্রে যে পরিমাণ প্লাস্টিক মিশছে তা ৮১ শতাংশেরই উৎস এশিয়ার বিভিন্ন নদী। এর এক-তৃতীয়াংশের জন্য দায়ী ফিলিপিনোরা। আর পাসিগ নদী একাই ৬ দশমিক ৪৩ শতাংশ প্লাস্টিক সমুদ্রে বয়ে নিয়ে যাচ্ছে।
নদী যোদ্ধাদের একার পক্ষে সম্ভব না হলেও সুদিন একদিন ঠিকই আসবে বলে আত্মবিশ্বাসী তারা। ইম্পেরিও বলছিলেন, আমাদের সন্তান, আমাদের পিতা-মাতা, আমাদের জাতি ও আমাদের প্রকৃতির জন্য নদীকে পরিচ্ছন্ন রাখা আমাদের দায়িত্ব।