ব-দ্বীপ পরিকল্পনায় বিশেষ স্থান জুড়ে আছে নৌ-পরিবহন খাত। বাস্তবায়নকারী সংস্থা হিসেবে বিআইডব্লিউটিএ’র ভূমিকাও বিশেষ।
গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র-মেঘনার পলল মৃত্তিকায় গড়া বঙ্গীয় এই ব-দ্বীপই বিশ্বের বৃহত্তম ব-দ্বীপ, যার ৮০ শতাংশই নদী ও প্লাবনভূমি। নবসৃষ্ট এই পললভূমি একদিকে যেমন কোমল-নরম-কমনীয়, একইভাবে উর্বরা-সুফলা। এই ব-দ্বীপে জনঘনত্ব তাই অর্বাচীন নয়। বিস্তীর্ণ এই প্লাবনভূমি এবং বিস্তৃত নদীই তাদের জীবিকা, জীবন এবং অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির আকর। মধ্যম আয়ের দেশের সিঁড়ি ডিঙিয়ে অভীষ্ট এখন ২০৩০ সালে উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশে অভিগমন। আর ২০৪১ সাল নাগাদ উচ্চ আয়ের দেশ। কিন্তু সেই অভীষ্টে পৌঁছতে হবে ব-দ্বীপীয় নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করেই, যেগুলো পানি ও খাদ্যনিরাপত্তা এবং আর্থসামাজিক উন্নয়নের সাথে আন্তঃসম্পর্কিত।
বন্যা, ঝড়, খরার খেয়ালিপনা এই বঙ্গে চিরকালীন। এর সাথে যোগ হয়েছে বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি। এসব ঝুঁকি সামলে উদ্দিষ্টে পৌঁছতে দরকার নতুন পথের, ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গির, নতুন পরিকল্পনার। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী চিন্তাধারার অন্যতম প্রতিফলন হচ্ছে শতবর্ষী বাংলাদেশ ব-দ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০। এই মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে অর্থায়নের প্রয়োজন পড়বে জিডিপির বার্ষিক ২ দশমিক ৫ শতাংশ। এই অর্থের সংস্থানই বড় প্রশ্ন। সরকারের পাশাপাশি এজন্য সম্পৃক্ত করতে হবে বেসরকারি খাতকে। নজর দিতে হবে বৈশ্বিক জলবায়ু তহবিলের দিকেও। শতবর্ষী এই পরিকল্পনায় বিশেষ স্থান জুড়ে আছে নৌ-পরিবহন খাত। বাস্তবায়নকারী সংস্থা হিসেবে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) ভূমিকাও বিশেষ। অংশীজন হিসেবে তারা কী ভাবছে তা নিয়েই নদীবাংলার এই সংখ্যার বক্ষ্যমাণ প্রচ্ছদ প্রতিবেদনটি।
ধান-নদী-খাল এই তিনে বরিশাল। এই বরিশাল অঞ্চলে পরিবহনের প্রধানতম মাধ্যম হিসেবে নদী ও নৌপথের অবস্থান বরাবরের। এই অঞ্চলে যন্ত্রচালিত নৌযানের চলাচল শুরু হওয়ার পর উনিশ শতকেই স্টিমার সেন্টার হয়ে ওঠে বরিশাল। পরবর্তীকালে সড়ক যোগাযোগের উন্নতি হলেও নৌপথের গুরুত্ব এতটুকুও কমেনি। এখনো দেশের দক্ষিণাঞ্চলে পরিবহনের প্রধান মাধ্যম নৌপথ। সম্প্রতি মোংলা বন্দরের কার্যক্রম বৃদ্ধি ও পায়রা বন্দরের উন্নয়ন এ অঞ্চলের নৌপথের চাহিদা আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। বর্ধিত এই চাহিদা পূরণে প্রয়োজন নাব্য নৌপথ ও উন্নত নৌ অবকাঠামোর উপর ভর করে আধুনিক সেবা। সাম্প্রতিক এক সম্ভাব্যতা সমীক্ষায়ও সেই প্রয়োজনের কথাই উঠে এসেছে। বরিশাল বিভাগের ৩১টি নৌপথের ওপর জরিপ চালিয়ে ৪৩০ কিলোমিটার নৌপথ খননের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। সেই সাথে প্রস্তাব করা হয়েছে ৪৩টি নতুন ঘাট নির্মাণের। বিদ্যমান ঘাটগুলো উন্নয়নের কথাও বলা হয়েছে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা প্রতিবেদনে, সামগ্রিকভাবে যার ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বরিশাল অঞ্চলের আর্থসামাজিক ক্ষেত্রে। এই নিয়ে সবিস্তার আলোচনা থাকছে বক্ষ্যমাণ বিশেষ রচনাটিতে।
পরিবহনের অন্য সব খাতের মতো জ্বালানি দক্ষ হয়ে উঠছে অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন খাতও। কীভাবে তা সম্ভব হচ্ছে সেই আলোচনা থাকছে নিয়মিত বিভাগ ‘প্রযুক্তি’তে। আছে নদী ও নৌপথ নিয়ে সরকারের আরো পরিকল্পনার সারকথা। নিয়মিত আয়োজন হিসেবে সংক্ষিপ্ত কলেবরে এবারো তুলে এনেছি আমাদের নদী ও আমাদের বন্দরের কথা। পরিভ্রমণ করেছি দূর অতীতে, আমাদের ঐতিহ্যে। সেই সাথে থাকছে দেশ-বিদেশের নদী ও নৌখাত নিয়ে সবশেষ ঘটনাপ্রবাহের কথা ও ছবি।
প্রিয় পাঠক, আশা করি আমাদের এই প্রয়াস নদী ও নৌপথ নিয়ে আপনার জিজ্ঞাসার উত্তর দেবে। কিছুটা হলেও নতুন ভাবনার খোরাক জোগাবে। আপনার মূল্যবান মতামত, মন্তব্য ‘নদীবাংলা’র পথচলা এগিয়ে নেবে।