বিদায়ী চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল গোলাম সাদেক বিআইডব্লিউটিএর দায়িত্ব নিয়েছিলেন বিক্ষুব্ধ সময়ে; করোনা অতিমারির স্থবিরতার কালে। যোগাযোগ ব্যবস্থা যখন বন্ধের জোগাড় সেই সময় ব্রতী হয়েছিলেন অভ্যন্তরীণ নৌপথ ব্যবহার করে পণ্য পরিবহন স্বাভাবিক রাখার প্রয়াসে। নিরন্তর কাজ করে গেছেন সরকার ঘোষিত ১০ হাজার কিলোমিটার নৌপথের অভীষ্টে পৌঁছানোর আকাঙ্ক্ষায়। অবিচল থেকেছেন বাধাহীন স্রোতবাহী মুক্ত নদীর দর্শনে। নিবিষ্ট ছিলেন স্মার্ট বাংলাদেশের সারথি হিসেবে বিআইডব্লিউটিএকে প্রযুক্তিদক্ষ স্মার্ট প্রতিষ্ঠানে রূপ দেওয়ার কর্মে। তবে সব কিছুকে ছাপিয়ে গেছে কর্মক্ষেত্রে তাঁর মানবিকতা। অতিমারিতে দুর্দশাগ্রস্ত নৌযান শ্রমিকদের পাশে দাঁড়াতে বিলম্ব করেননি। সহমর্মিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন অকালে চলে যাওয়া বিআইডব্লিউটিএ কর্মীটির পরিবারের দিকে। সবার কাছে তিনি ছিলেন মানবিক চেয়ারম্যান।
বিদায়ী চেয়ারম্যানের সময়ে বিআইডব্লিউটিএর উল্লেখযোগ্য কিছু অর্জনের কথা তুলে ধরে কর্তৃপক্ষের সদস্য (প্রকৌশল) ড. এ. কে. এম. মতিউর রহমান বিদায় অনুষ্ঠানে বলেন, চেয়ারম্যান মহোদয়ের যোগ্য নেতৃত্বে আমরা ই-নথি ৯০ শতাংশে উন্নীত করেছি। ইনল্যান্ড ওয়াটারওয়েজ ম্যানেজমেন্ট, ভেসেল ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম অটোমেশনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। অ্যাকাউন্টিং সিস্টেম ও মেডিকেল সেন্টারকে অটোমেশন করা হচ্ছে। সরকারের ঘোষিত স্মার্ট বাংলাদেশের সাথে সামঞ্জস্য রেখে বিআইডব্লিউটিএতে একটি কমান্ড সেন্টার প্রতিষ্ঠার উদ্যোগও শুরু করেছিলেন বিদায়ী চেয়ারম্যান। আশা করি, নতুন চেয়ারম্যান এসব উদ্যোগকে এগিয়ে নেবেন।
তাঁর ভাষায়, বিদায়ী চেয়ারম্যানের সবচেয়ে বড় অর্জন সম্ভবত জাতীয় পর্যায়ে বিআইডব্লিউটিএকে পরিচিত করে তোলা। নিজের প্রতিষ্ঠান দিয়ে নিজেকে পরিচিত করা একটা বিরল সুযোগ এবং নিজের যোগ্যতা দিয়েই তিনি সেই সুযোগটি কাজে লাগিয়েছেন। বিদায়ী চেয়ারম্যানের ক্ষেত্রে আমরা আরেকটি বিষয় দেখেছি এবং তা হলো নিজ থেকেই দায়িত্ব নিয়ে নেওয়া। এটা নেতৃত্বের এক বিরল গুণ। জাতীয় পর্যায়ে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সব ধরনের অনুষ্ঠানে বিআইডব্লিউটিএ নেতৃত্ব দিয়েছে। মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষ্যে বিআইডব্লিউটিএর ওপর যে দায়িত্ব ছিল বিদায়ী চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে কর্তৃপক্ষ তা পরিপূর্ণভাবে পালন করেছে।
তিনি বলেন, একটি প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব প্রকাশনা থাকা অত্যন্ত জরুরি। বিদায়ী চেয়ারম্যানের উদ্যোগে ‘নদীবাংলা’ নামে বিআইডব্লিউটিএর একটি প্রকাশনা নিয়মিত বের হচ্ছে এবং লোকজন সেটা পড়ছেন।
বিদায়ী চেয়ারম্যানকে অত্যন্ত মেধাবী কর্মকর্তা উল্লেখ করে তার উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করেন কর্তৃপক্ষের সদস্য (প্রশাসন ও পরিকল্পনা) মোহাম্মদ মনোয়ার উজ জামান। ছাত্রজীবনে রিয়ার এডমিরাল গোলাম সাদেক অত্যন্ত মেধাবি ছিলেন এবং সেই মেধার স্বাক্ষর তিনি বিআইডব্লিউটিএতে রেখেছেন বলে মন্তব্য করেন কর্তৃপক্ষের সদস্য (অর্থ) মোঃ সেলিম ফকির, এনডিসি। বিপর্যস্ত পরিবারগুলোর পাশে দাঁড়ানোকে বিদায়ী চেয়ারম্যানের একটি বড় গুণ এবং প্রাপ্তি বলে উল্লেখ করেন তিনি।
গোলাম সাদেক তাঁর বিদায়ী বক্তব্যে দেশের অগ্রগতির জন্য বিআইডব্লিউটিএর যে ভূমিকা তা কর্তৃপক্ষের প্রত্যেক সদস্যের অবদানের ফল বলে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, প্রত্যেকের একান্ত আগ্রহ, আন্তরিকতা ও পরিশ্রমের ফলেই এটা সম্ভব হয়েছে। আপনারা এই সাফল্যের জন্য প্রস্তুত ছিলেন। আমি শুধু আপনাদের সাথে পথ হেঁটেছি। বিআইডব্লিউটিএতে আমি চাকরি করতে এসেছিলাম। কিন্তু এখানকার সব কর্মকর্তা-কর্মচারী কাজ করেন। তাই বাধ্য হয়ে আমাকেও কাজ করতে হয়েছে।
বিআইডব্লিউটিএ থেকে তিনি বিদায় নিলেও অত্যন্ত যোগ্য একজন ব্যক্তিকে রেখে যাচ্ছেন বলে মন্তব্য করেন রিয়ার এডমিরাল গোলাম সাদেক। নবাগত চেয়ারম্যানকে পরিচয় করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, কমডোর আরিফ সুপ্রশিক্ষিত এবং বিভিন্ন ধরনের কাজের অভিজ্ঞতা নিয়ে তিনি কর্তৃপক্ষে আসছেন। তিনি একজন জ্ঞানি ব্যক্তিত্ব এবং কঠোর পরিশ্রমী। তিনি আরও বেশি কাজ করতে পারবেন। বিআইডব্লিউটিএর কর্মী হিসেবে আপনাদেরকেও তাঁর সাথে দৌড়াতে হবে। আমি আশা করি, কমডোর আরিফের নেতৃত্বে বিআইডব্লিউটিএ আরও এগিয়ে যাবে। বঙ্গবন্ধুকন্যার হাত ধরে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশ হওয়ার যে স্বপ্ন, বিআইডব্লিউটিএ তাতে সক্রিয় অংশীদার হয়ে থাকবে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও মুক্তিযুদ্ধে সকল শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে কমডোর আরিফ আহমেদ মোস্তফা বলেন, বিদায় ও বরণের এই যে অনুষ্ঠান সেখানে সবার মধ্যেই একটা মিশ্র অনুভ‚তি কাজ করছে। বিদায়ী চেয়ারম্যান মহোদয় একজন মানবিক চেয়ারম্যান ছিলেন। সেই মানবিক চেয়ারম্যানের অনুপস্থিতি আপনারা অনুভব করবেন। অন্যদিকে পদোন্নতি পেয়ে তিনি আরও গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে নিয়োজিত হবেন, সেটা আমাদের সকলের জন্যই অত্যন্ত খুশির বিষয়। এ ছাড়া এই সংস্থার জন্য তথা দেশের জন্য তিনি যে কাজ করেছেন সেটা তাঁকে তৃপ্তি দেবে। একটা সুখের অনুভুতি নিয়ে তিনি এই সংস্থা থেকে বিদায় নিচ্ছেন বলে আমি বিশ্বাস করি।
বিদায়ী চেয়ারম্যানের মূল্যায়ন করতে গিয়ে তিনি বলেন, তাঁকে আমি ব্যক্তিগতভাবে চিনি। তাঁর সাথে সরাসরি কাজ না করলেও কাছাকাছি থেকে কাজের সুযোগ হয়েছে। তিনি আনন্দ দিয়ে কাজ করতে পছন্দ করেন। সবশেষে তিনি রিয়ার এডমিরাল গোলাম সাদেকের সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করেন।