নৌপথকে দক্ষিণাঞ্চলে পরিবহনের প্রধান মাধ্যম উল্লেখ করে বরিশাল বিভাগের ৩১টি নৌপথের নাব্যতা ও অন্যান্য সুবিধা বৃদ্ধি করে টেকসই ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলার কথা জানিয়েছেন নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহ্মুদ চৌধুরী এমপি। মোংলা বন্দরের ব্যবহার উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাওয়ায় ও পায়রা বন্দরের উন্নয়নের কারণে এ অঞ্চলের নৌপথ ব্যবহারে নদীগুলোর গুরুত্ব অনেকে বেড়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
১৯ জানুয়ারি বরিশাল সার্কিট হাউসের সম্মেলন কক্ষে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) আয়োজিত ‘বরিশাল বিভাগের নদীসমূহের নাব্যতা বৃদ্ধি, জলাবদ্ধতা হ্রাস, জলাভূমি বাস্তু পুনরুদ্ধার, সেচ ও ল্যান্ডিং সুবিধাদি বৃদ্ধি করে নদী ব্যবস্থাপনার সম্ভাব্যতা যাচাই’ শীর্ষক সমীক্ষা কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী বলেন, শুধু রাজধানী নয়; পর্যায়ক্রমে দেশের সব নদী অবৈধ দখলদারদের হাত থেকে মুক্ত করা হবে। ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও চট্টগ্রামে নদী দখলদারদের উচ্ছেদ অভিযান চলছে। পর্যায়ক্রমে দেশের সব নদীর অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করা হবে। সারা দেশে বিভিন্ন নদীর ৬০ হাজার অবৈধ দখলদার রয়েছে। তাদের মধ্যে ইতোমধ্যেই ২০ হাজার দখলদার উচ্ছেদ করা হয়েছে।
বরিশালের বিভাগীয় কমিশনার ড. অমিতাভ সরকারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ্, বিআইডব্লিউটিএ চেয়ারম্যান কমডোর গোলাম সাদেক, বিআইডব্লিউটিএ ড্রেজিং বিভাগের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম তালুকদার, বরিশালের জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দীন হায়দার ও পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন, বরিশাল সদরের উপজেলা চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান প্রমুখ।
খালিদ মাহ্মুদ চৌধুরী কর্মশালায় বলেন, দখলদারদের হাত থেকে নদী দখলমুক্ত করতে বিভিন্ন যন্ত্রপাতি সংগ্রহ করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে বেশকিছু যন্ত্রপাতি সংগ্রহ করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে সব দখলদারকে উচ্ছেদ করা হবে। নদী না বাঁচলে বাংলাদেশ বাঁচবে না। তাই দখলদারদের স্বেচ্ছায় সম্মানের সাথে দখল ছেড়ে দিতে হবে। তা না হলে দখলকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
উল্লেখ্য, সরকারের নির্দেশনায় নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের অধীনে বিআইডব্লিউটিএ ‘বরিশাল বিভাগের নদীসমূহের নাব্যতা বৃদ্ধি, ন্যূনতম জলাবদ্ধতা, জলাভূমি বাস্তু পুনরুদ্ধার, সেচ ও ল্যান্ডিং সুবিধাগুলি বৃদ্ধি করে টেকসই ব্যবস্থাপনা’ শীর্ষক প্রকল্পটি হাতে নিয়েছে। পরামর্শক প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্টাল অ্যান্ড জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সার্ভিসেস (সিইজিআইএস) প্রকল্পটির সম্ভাব্যতা সমীক্ষা করেছে।
প্রকল্পের আওতায় বরিশাল বিভাগের ৩১টি নৌপথ উন্নয়নের পরিকল্পনা করা হয়েছে। এর দৈর্ঘ্য প্রায় ১ হাজার ৪৭৫ কিলোমিটার। ৩১টি নৌপথের মধ্যে মাত্র চারটি নৌপথে পর্যাপ্ত গভীরতা থাকায় আপাতত ড্রেজিংয়ের প্রয়োজন নেই। অবশিষ্ট নৌপথে খননের প্রস্তাব করা হয়েছে, যার দৈর্ঘ্য প্রায় ৪৭০ কিলোমিটার এবং এর ক্যাপিটাল ড্রেজিংয়ের পরিমাণ প্রায় ৪২ মিলিয়ন ঘনমিটার। পরবর্তীতে নৌপথগুলোর নাব্যতা বজায় রাখার জন্য সাত বছর প্রায় ১৭০ মিলিয়ন ঘনমিটার সংরক্ষণ ড্রেজিংয়ের প্রস্তাব করা হয়েছে। নতুন ঘাট ও বিদ্যমান ঘাট উন্নয়নের জন্য গৃহীত প্রকল্পের আওতায় তিনটি নতুন লঞ্চঘাট নির্মাণ, ৬০টি লঞ্চঘাট, ১১টি কার্গোঘাট, ৩৮টি খেয়াঘাট উন্নয়ন ও তিনটি ঘাট পর্যটনের জন্য উন্নয়নের প্রস্তাব করা হয়েছে।