যেভাবে আইনি অধিকার পেল ওয়াঙ্গানুই নদী

0
24

সত্তরের দশকে ওয়াঙ্গানুই নদীর মুখে কাদামাটিতে খেলাধুলা করে শৈশব কাটে জেরার্ড আলবার্টের। পানি যখন কমে আসত তখন আলবার্ট ও তার খেলার সঙ্গীদের চোখ আটকে যেত পানিতে ভেসে থাকা টয়লেট পেপারে। কে কোনটা ব্যবহার করেছে তা নিয়ে হাসি-ঠাট্টাও চলত।

১৮০০ সালের দিকে নিউজিল্যান্ডে আসার পর মাওরি আদিবাসীদের আদরের এই ওয়াঙ্গানুই নদী ঘিরেই শিল্পায়নের দিকে যায় ব্রিটিশরা। শিল্পের বিষাক্ত বর্জ্যে এরপর থেকেই দূষিত হতে থাকল ওয়াঙ্গানুই। নুড়ি পাথরে ভরা নদীর দুই কূল ধীরে ধীরে কাদায় ভরে উঠতে শুরু করল। পাথর উত্তোলনের ফলে কাদার পরিমাণ এত বেশি হয়ে গেল যে, হাঁটু পর্যন্ত তলিয়ে যেতে থাকল।

আলবার্ট যে জায়গায় খেলতেন ও মাছ ধরতেন, সেখানে বর্জ্য ফেলার বিষয়টি তাকে সেভাবে ভাবায়নি। কিন্তু বড় একটি বিষয়ের সাক্ষ্য হয়ে আছে ওয়াঙ্গানুই। আর তা হলো নদীটির সাথে মাওরিদের সম্পর্ক এবং একে রক্ষায় ১৮৭০ সালে শুরু হওয়া একটা লড়াই। শেষ পর্যন্ত ২০১৭ সালে লড়াইটির একটি পরিণতি পায়।

ওয়াঙ্গানুই-ই বিশ্বের প্রথম নদী, যাকে জীবনসত্তার স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। নিউজিল্যান্ডের তৃতীয় দীর্ঘতম নদীটি এখন আইনি অধিকার পেয়েছে। তার পক্ষে আদালতে কথা বলার জন্য দুজন অভিভাবকও নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। আদিবাসীদের অধিকার নিয়ে কাজ করা ও পরিবেশবাদী বিভিন্ন সংগঠন এ উদ্যোগের প্রশংসা করেছে। অন্যান্য দেশও এখন একই পথে হাঁটছে।

তিন বছর পর এটা পরিষ্কার হয়ে গেছে যে, নদীটির ওপর মাওরিদের অধিকার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে একে জীবন্ত সত্তা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ায় যথেষ্ট নয়। জীবন্তসত্তা হিসেবে ওয়াঙ্গানুইকে স্বীকৃতি দেওয়ার পরও আলবার্ট ও অন্যদের বিভিন্ন সমস্যা মোকাবিলা করতে হচ্ছে।

ওয়াঙ্গানুইয়ের ওপর অধিকার রক্ষায় ১৮৭০ সাল থেকেই ঔপনিবেশিক সরকারের বিরুদ্ধে পিটিশন দায়ের শুরু করে মাওরিরা। পরের দশকগুলোতে রাজধানী ওয়েলিংটনে সরকারের কাছে আরো অসংখ্য পিটিশন দাখিল করা হয়। এই আইনি লড়াইয়ে ১৯২০ ও ১৯৩০-এর দশকে আলবার্টের মাতামহ ও তার ভাই তাঁদের তরফ থেকে যতটুকু সম্ভব অবদান রেখেছিলেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here