বিআইডব্লিউটিএ নিয়মিত প্রকাশনা

বৃহস্পতিবার, জানুয়ারি ২৩, ২০২৫
17 C
Dhaka

বিআইডব্লিউটিএ নিয়মিত প্রকাশনা

দূষণমুক্ত নদী, সুস্থ জীবন

এক দশক আগে স্বল্প পরিসরে সীমিত উদ্যোগে দেশে বিশ্ব নদী দিবস উদ্যাপনের চল শুরু হলেও আস্তে আস্তে এর পরিসর বাড়ছে। উদ্যাপনের মিছিলে যোগ দিচ্ছে নতুন নতুন সংগঠন সংস্থা। নদী রক্ষা কমিশন, বিআইডব্লিউটিএসহ সরকারি সংস্থাগুলোও দিবসটিকে গুরুত্বের সাথে দেখছে। ২০২০ সালেও ১২টি সংস্থার যৌথ আয়োজনে সাড়ম্বরে উদ্যাপিত হয়েছে দিবসটি।

‘বিশ্ব নদী দিবস’ একটি বৈশ্বিক উদ্যাপন। নদীর বহুমাত্রিক অবদানকে স্বীকৃতি দিয়ে এর প্রতি দায়বদ্ধ হওয়ার শিখন। সারা বিশ্বের সব নদীর প্রতিটি নৌপথ যাতে সুগম-নিরাপদ-বাধাহীন হয় তার প্রতি অঙ্গীকার। নদীর এখনকার স্বাস্থ্য যাতে ঠিক থাকে, আগামীতেও সুস্থ রাখা যায়, সব নাগরিকের মধ্যে সেই বোধ জাগ্রত করা। কারণ মার্ক অ্যাঞ্জেলোর ভাষায়-‘নদী হচ্ছে পৃথিবীর ধমনি; সত্যিকারের জীবনরেখা।

নদী দিবসের গোড়ার কথা

নদীর ইতিহাস বহুকালের পুরনো হলেও শুধু নদীকে নিয়ে আলাদা দিবস উদ্যাপনের রেওয়াজ বেশি দিনের নয়। শৈশবেই নদীর ডাক যিনি শুনতে পেয়েছিলেন, বুঝতে শিখেছিলেন নদীর ভাষা, সেই মার্ক অ্যাঞ্জেলোর ব্যক্তিগত উদ্যোগে সীমিত পরিসরে, স্বল্প আয়োজনে ১৯৮০ সালে শুরু হয় বিশ্ব নদী দিবস উদ্যাপন। নদীবিষয়ক বরেণ্য এই আইনজীবীর উদ্যোগে কানাডার ব্রিটিশ কলাম্বিয়া (বিসি) ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি ওই বছর থেকে প্রতি বছর সেপ্টেম্বর মাসের শেষ রোববার দিবসটির উদ্যাপন শুরু করে। প্রথম দিকে এটি পালিত হতো বিসি রিভারস ডে নামে।

এরই ধারাবাহিকতায় জাতিসংঘ নদী রক্ষায় জনসচেতনতা তৈরির লক্ষ্যে ২০০৫ সালে ‘জীবনের জন্য জল দশক’ ঘোষণা করে। একই সময়ে জাতিসংঘ দিবসটি অনুসমর্থনও করে। সেই থেকে জাতিসংঘের বিভিন্ন সহযোগী সংস্থা দিবসটি উদ্যাপন করে আসছে।

বাংলাদেশে অবশ্য দিবসটির চল শুরু হয়েছে আরো পরে ২০১০ সালে। ওই বছর থেকে প্রতি বছর সেপ্টেম্বর মাসের শেষ রোববার সারা বিশ্বের মতো আমাদের দেশেও নদী রক্ষার অঙ্গীকারের মধ্য দিয়ে দিবসটি উদ্যাপিত হচ্ছে। তবে সরকারি-বেসরকারিভাবে দিবসটি প্রথম পালিত হয় ২০১৬ সালে। সেপ্টেম্বরের শেষ রোববার হিসেবে ২০২০ সালে বিশ্ব নদী দিবস ছিল ২৭ সেপ্টেম্বর।

বাংলাদেশে নদী দিবসের তাৎপর্য

নদ-নদীই বাংলাদেশের বৈশিষ্ট্য। এই ভূখণ্ডের কোনো অংশের কথাই নদ-নদীকে বাদ দিয়ে চিন্তা করা যায় না। বলা যায়, বাংলাদেশের প্রাণশক্তি নিহিত এই নদ-নদীতেই। নদ-নদীর অবস্থান ও অবস্থার সাথে ঐতিহাসিককাল থেকেই এখানকার মানুষের ভালোমন্দ জড়িয়ে আছে। নদীকে বোঝা, নদীকে ভালো রাখা এই ভূখণ্ডের সন্তানদের জন্যই দরকার।

ইতিহাসবিদ নীহাররঞ্জন রায় যেমনটা বলেছেন-বাংলার ইতিহাস রচনা করেছে এখানকার ছোট বড় অসংখ্য নদী। এরাই যুগে যুগে বাংলাকে গড়েছে, আকৃতি-প্রকৃতি, মেজাজ তৈরি করেছে বাঙালির। এই নদীই বাংলার আশীর্বাদ ও অভিশাপ। বাংলার কোমল, নরম ও নমনীয় ভূমি নিয়ে বাংলাদেশের নদ-নদী ঐতিহাসিকভাবে কত খেলাই না খেলেছে; উদ্দাম প্রাণলীলায় কতবার যে পুরাতন স্রোতধারা ছেড়ে নতুন খাতে প্রবাহিত হয়েছে তার ইয়ত্তা নেই। সহসা এই খাত পরিবর্তনে কত সুরম্য নগর, কত বাজার-বন্দর, কত বৃক্ষ-শ্যামল গ্রাম, শস্য-শ্যামল প্রান্তর, কত মঠ ও মন্দির, মানুষ তথা জনপদের কীর্তি ধ্বংস করেছে, কত দেশখণ্ডের চেহারা ও সুখ-সমৃদ্ধি একেবারে বদলে দিয়েছে তার হিসাবও ইতিহাস সবসময় রাখতে পারেনি।

তবে এটা বলা যায়, কালের পরিক্রমায় নদীর অনেক পুরাতন পথ মরে গেছে, করতোয়ার মতো প্রশস্ত নদীও  ক্ষীণস্রোতা হয়েছে। অনেক নদী হারিয়েও গেছে। এতো গেল প্রাকৃতিক কারণ। নদীর মরে যাওয়া, বদলে যাওয়া, হারিয়ে যাওয়ার পেছনে মনুষ্য যে কারণ তা আরো ব্যাপক, আরো বীভৎস।

বিশ্ব পানি কমিশনের সমীক্ষা বলছে, সারা বিশ্বে যত নদী আছে তার অর্ধেকের বেশি দূষিত ও রিক্ত হয়ে পড়েছে। দূষিত এইসব নদী বিষাক্ত করে তুলছে চারপাশের পরিবেশ, স্বাস্থ্য সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে কোটি কোটি মানুষের।

এই অবস্থা যে কেবল দরিদ্র দেশের নদীর, তা নয়। ধনী-দরিদ্র সব দেশের নদীরই একই দশা। নদীর এই দুরবস্থার পেছনের কারণ হিসেবে পানি কমিশন বলছে শিল্পোন্নত ও উন্নয়নশীল সব দেশেই ভূমি ও পানিম্পদের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার ও অপব্যবহার। আমরাও এর বাইরে নই। অনেক সময় অপরিকল্পিত বাঁধ দিয়ে বা তীর দখল করে নদীকে আমরা অন্তরীণ করে ফেলছি। কারারুদ্ধ এইসব নদীকে মুক্ত করা তাই সময়ের দাবি, যাতে নিষ্প্রাণের বুকের ভেতর থেকে আবার প্রাণের ধারাস্রোত নিত্য উৎসারিত হতে পারে। এই বার্তা দেশের সব মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে বিশ্ব নদী দিবসের তাৎপর্য অপরিসীম।

এবারের প্রতিপাদ্য

অন্যান্য সব দিবসের মতো বিশ্ব নদী দিবসও পালিত হয় বিশেষ একটি প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে। ২০১০ সালে উদ্যাপিত প্রথম নদী দিবসে বাংলাদেশের জন্য প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয় ‘নদী আমাদের ডাকছে, সাড়া দিতে হবে’। পরের বছর ‘অভিন্ন নদীতে অভিন্ন অধিকার’ প্রতিপাদ্যে বাংলাদেশে দিবসটি উদ্যাপিত হয়। পরের বছর প্রতিপাদ্য ছিল ‘ফিরে চল নদীর টানে’। এরপর নানা প্রতিপাদ্যকে ধারণ করে নদী দিবস পালিত হয়েছে। আর ২০২০ সালের নদী দিবসে বাংলাদেশের প্রতিপাদ্য ছিল ‘ভাইরাসমুক্ত বিশ্বের জন্য চাই দূষণমুক্ত নদী’। কোভিড-১৯ মহামারির মধ্যে এ ধরনের প্রতিপাদ্য প্রাসঙ্গিক তো বটেই তাৎপর্যপূর্ণও।

প্রতিপাদ্য নির্বাচনে আন্তর্জাতিক অন্যান্য দিবসের চেয়ে বিশ্ব নদী দিবসের একটা মৌলিক তফাত রয়েছে। অন্যান্য সব আন্তর্জাতিক দিবসের একটি কেন্দ্রীয় প্রতিপাদ্য থাকলেও নদী দিবসের তা থাকে না। বিভিন্ন অঞ্চল বা দেশ তাদের প্রেক্ষাপটের সাথে মিলিয়ে সাজুয্যপূর্ণ একটা প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করে। যেমন বাংলাদেশে ২০২০ সালের বিশ্ব নদী দিবসের প্রতিপাদ্য ‘ভাইরাসমুক্ত বিশ্বের জন্য চাই দূষণমুক্ত নদী’ নির্ধারণ করা হলেও ভারতে দিবসটির প্রতিপাদ্য ‘ডে অব অ্যাকশন ফর রিভার’। আবার মালয়েশিয়ায় এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ‘ওয়াটারওয়েজ ইন আওয়ার কমিউনিটিজ’। ভিন্ন ভিন্ন দেশে দিবসটির প্রতিপাদ্য ভিন্ন ভিন্ন হলেও উদ্দেশ্য কিন্তু অভিন্নÑনদীকে রক্ষা করা, নদীকে নদীর মতো বইতে দেওয়া।

নদীর জন্য আহ্বান

বরাবরের মতো এবারো নদী দিবস পালনে সবচেয়ে তৎপর ছিল নদী রক্ষার অভিভাবক জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন। দিবসটি উপলক্ষে আয়োজিত বিভিন্ন আলোচনা অনুষ্ঠানে নদীকে রক্ষা করতে সংশ্লিষ্ট সবার সহযোগিতা কামনা করেছেন কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মুজিবুর রহমান হাওলাদার। তার এই আহ্বানের মধ্যে অবশ্য অনুযোগের অনুরণনও ছিল। বিশ^ নদী দিবসের পরের দিন ২৮ সেপ্টেম্বর এক ভার্চুয়াল আলোচনায় অংশ নিয়ে কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, স্বাধীনতার পর থেকে উন্নয়ন কার্যক্রমের পাশাপাশি নদী দখল-দূষণও ক্রমান্বয়ে বেড়েছে। নদী রক্ষায় আদালত যে রায় দিয়েছেন তা বাস্তবায়নের দায়িত্ব সরকারের। নদী রক্ষার সাথে যে মন্ত্রণালয়গুলো জড়িত তাদের মধ্যে আরো বেশি সমন্বয়ের ব্যবস্থা করা দরকার।

শিল্পকারখানার মালিকদের মধ্যে ইটিপি ব্যবহার না করার প্রবণতা সব সময়ের। তাই সরকারি প্রণোদনা দিয়ে হলেও তাদেরকে আইন মানতে বাধ্য করার দাবি জানিয়েছে কোনো কোনো পক্ষ। সব নদী যাতে রক্ষা পায় সেজন্য নদী রক্ষা কমিশনসহ বিভিন্ন সংস্থা ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে একটি ওয়াচডগ প্লাটফরম গঠনের কথা বলেছেন কেউ কেউ। নদী দূষণের অভিযোগে মামলা দায়েরের ক্ষমতা আছে পরিবেশ অধিদপ্তরের এবং অভ্যন্তরীণ নৌপথের পরিবেশ দূষণ রক্ষায় ইনল্যান্ড শিপিং অর্ডিন্যান্স-১৯৭৬ এর সংশ্লিষ্ট ধারায় ক্ষতিসাধনকারী নৌযানের মালিক/মাস্টারের বিরুদ্ধে নৌপরিবহন অধিদপ্তর, বিআইডব্লিউটিএ ও কোস্ট গার্ড নৌ-আদালতে মামলা করতে পারে। জনস্বার্থে জনগণকেও নদী দখল-দূষণবিষয়ক মামলা করার ক্ষমতা দেওয়ার প্রসঙ্গও এসেছে এবারের নদী দিবসের আলোচনায়। এজন্য পরিবেশ আইনের ১৭ নং ধারা সংশোধনের পক্ষে মতামত এসেছে। এ-সংক্রান্ত মামলার রায় যাতে দ্রুততম সময়ে পাওয়া যায় সেজন্য আলাদা ট্রাইব্যুনাল গঠনের সুপারিশও করা হয়েছে।

বড় হচ্ছে আয়োজনের পরিসর

এক দশক আগে স্বল্প পরিসরে সীমিত উদ্যোগে দেশে বিশ্ব নদী দিবস উদ্যাপনের চল শুরু হলেও আস্তে আস্তে এর পরিসর বাড়ছে। উদ্যাপনের মিছিলে যোগ দিচ্ছে নতুন নতুন সংগঠন ও সংস্থা। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়সহ নদী রক্ষা কমিশন, বিআইডব্লিউটিএ’র মতো সরকারি সংস্থাগুলোও দিবসটিকে গুরুত্বের সাথে দেখছে। এ বছরও ১২টি সংস্থার যৌথ আয়োজনে সাড়ম্বরে দিবসটি উদ্যাপিত হয়েছে। সংস্থাগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ রিভার ফাউন্ডেশন, প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশন, রিভার অ্যান্ড ডেল্টা রিসার্চ সেন্টার, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের হালদা নদী গবেষণাগার, বাংলাদেশ নদী পরিব্রাজক দল যেমন ছিল, একই সাথে ছিল হালদা নদী রক্ষা কমিটি, জিবিএম বেসিন বেইজ্ড পিপলস নেটওয়ার্ক, ব্রহ্মপুত্র সুরক্ষা আন্দোলন, ক্লিন রিভার বাংলাদেশ এবং পরিবেশ রক্ষা ও উন্নয়ন সোসাইটির মতো সংগঠনও।

পরিশেষে বলতে হয়, নদী রক্ষার উদ্যোগ শুধু দিবস পালনের মধ্যে বেঁধে রাখলে হবে না, সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতে হবে দিবসের শিক্ষা, প্রতিপাদ্য ও মর্ম। কারণ নদী মানে শুধু প্রবহমান জলধারা নয়, জীববৈচিত্র্যের এক বহমান ধারাও। তার চারপাশের অসংখ্য মানুষের জীবন ও সংস্কৃতির ধারক।

 

নৌসম্পদ আহরণ করতে হবে নদী নৌপথের পরিবেশ অটুট রেখেই

নদী যেকোনো দেশের জন্য সম্পদ। নদী অস্তিত্বের স্মারক, ঐতিহ্যের ধারক। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডেরও বুনিয়াদ। ঐতিহাসিকভাবে নদী যাত্রী ও পণ্য পরিবহনের সবচেয়ে প্রাচীন, নির্ভরযোগ্য ও সাশ্রয়ী মাধ্যম। নদীর তীরেই গড়ে উঠেছিল মানবসভ্যতাগুলো। হোয়াংহো এবং ইয়াংসিকিয়াং নদীর তীরে গড়ে উঠেছিল চীন সভ্যতা, নীল নদের তীরে মিসরীয় সভ্যতা, টাইগ্রিস ও ইউফ্রেটিস নদীর তীরে মেসোপটেমীয় সভ্যতা এবং সিন্ধু নদের তীরে সিন্ধু সভ্যতা বা হরপ্পা সভ্যতা।

আমাদের প্রাণের শহর ঢাকা আজ থেকে প্রায় ৪০০ বছর আগে বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে গড়ে উঠেছিল। তখন বুড়িগঙ্গা ছিল ভরা যৌবনা, খরস্রোতা এবং স্বচ্ছ পানির স্রোতধারা। নদীর বুকে অসংখ্য নৌকায় জ¦লত ফানুস বাতি। বুড়িগঙ্গার অপরূপ সৌন্দর্য মন ছুঁয়ে যেত। ১৮০০ সালে একজন ব্রিটিশ প্রত্ন তত্ত্ববিশারদ, সামরিক নীতিনির্ধারক এবং লেখক টমাস এডওয়ার্ড লরেন্স বুড়িগঙ্গা নদী দেখে মুগ্ধ হয়ে লিখেছিলেন, বর্ষাকালে যখন বুড়িগঙ্গা পানিতে ভরপুর থাকে তখন ঢাকাকে দেখায় ইতালির ঐতিহাসিক পর্যটন শহর ভেনিসের মতো। কালের পরিক্রমায় ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার এবং আধুনিক সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির সাথে সাথে ঢাকা শহরের পরিধি ও গুরুত্ব বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে। ঢাকা শহরের চারদিকে প্রকৃতির দান চারটি নদী ১১০ কিলোমিটার বৃত্তাকার দীর্ঘ নৌপথ পাড়ি দিয়েছে। এসব নৌপথের সাথে যুক্ত হয়েছে সারা দেশের নৌপথ, সৃষ্টি হয়েছে নৌপরিবহন নেটওয়ার্ক।

১৯৭১ সালের আগে নদীমাতৃক বাংলাদেশ জুড়ে প্রায় ৭০০ প্রবহমান নদ-নদী এবং ২৪ হাজার কিলোমিটার দীর্ঘ নৌপথের অস্তিত্ব ছিল। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীন বাংলাদেশের দায়িত্ব নিয়ে দেশের হাওড়-বাঁওড়, নদ-নদী ও জলাভূমি উন্নয়নের রূপরেখা প্রণয়ন করেছিলেন। নৌপরিবহন ব্যবস্থা যাতে ব্যাহত না হয়, নৌপথের পলি অপসারণ ও নদী খননকাজ যাতে সঠিকভাবে হয় সেজন্য নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়কে রেখেছিলেন নিজের হাতে। তিনি নৌপথ সচল রাখার উদ্দেশ্যে সর্বপ্রথম সাতটি ড্রেজার সংগ্রহ করেন, যেগুলো এখনো সচল আছে। ১৯৭২ সালের নভে€^রে তিনি যৌথ নদী কমিশন গঠন করেন, যার উদ্দেশ্য ছিল ভারত বাংলাদেশ, উভয় দেশের মধ্যে প্রবাহিত নদীগুলো থেকে সর্বাধিক সুবিধা লাভ করা। বঙ্গবন্ধুই এ দেশের নদ-নদী, নৌপথ রক্ষা ও নৌপরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়নের পথপ্রদর্শক।

বঙ্গবন্ধুর নদীভাবনার সূচনা পঞ্চাশের দশকেই। তিনি পানিসম্পদ সম্পর্কে গবেষণা এবং নৌপ্রশিক্ষণ গ্রহণ করার জন্য একটি নৌ-গবেষণা ইনস্টিটিউট স্থাপনের গুরুত্ব উপলব্ধি করেছিলেন। বন্যা নিয়ন্ত্রণকে তিনি প্রথম কর্তব্য হিসেবে বিবেচনা করেছিলেন।

অভ্যন্তরীণ নৌ ও সমুদ্রবন্দর উন্নয়নকে অগ্রাধিকার প্রদান করেছিলেন। তার নির্দেশে ১৯৭৪ সালে ৩১ কিলোমিটার দীর্ঘ মোংলা-ঘষিয়াখালী নৌপথ খনন করা হয়, ফলে সুন্দরবন ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পায় এবং মোংলা সমুদ্রবন্দরে পণ্য আনা-নেওয়ার বিকল্প স্বল্প দূরত্বের নৌরুট সৃষ্টি হয়। পরবর্তী সময়ে নাব্যতা সংকটে নৌপথটি বন্ধ হয়ে যায়, বর্তমান সরকারের আমলে পুনরায় নৌপথটি চালু করা হয়।

১৯৭৫ পরবর্তী সময়ে মাত্র ৪ হাজার ৫০০ কিলোমিটার নৌপথ ছিল। হারিয়ে যাওয়া সেই নৌপথ পুনরুদ্ধারের আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছেন তারই সুযোগ্য উত্তরসূরি ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরিকল্পিত খনন ও পলি অপসারণের মাধ্যমে প্রায় ২ হাজার ২০০ কিলোমিটার নৌপথ এরই মধ্যে উদ্ধার করা হয়েছে। ২০১৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে বর্তমান সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সারা দেশের ১০ হাজার কিলোমিটার নৌপথ খনন, নৌপথের অবকাঠামো উন্নয়ন, নৌবাণিজ্য স€ú্রসারণ এবং ঢাকার চারদিকের নদীসমূহের অবৈধ দখল, দূষণ স্থায়ীভাবে রোধ করে পর্যটনবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টিকল্পে অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। বিশ^ব্যাংক কর্তৃক (২০০৭ সালে) প্রণীত Peoples Republic of Bangladesh -Revival of inland Water Transport: Option and Strategies এর সমীক্ষা অনুযায়ী প্রতি এক টন মালামাল প্রতি এক কিলোমিটার দূরত্বে পরিবহনে ব্যয় নৌপথে ১ টাকা, রেলপথে ২.৫০ এবং সড়কপথে ৪.৫০ টাকা। এছাড়া আলোচ্য প্রতিবেদন অনুযায়ী সড়কপথে ৮৮ শতাংশ যাত্রী ও ৮০ শতাংশ মালামাল, অভ্যন্তরীণ নৌপথে ৮ শতাংশ যাত্রী ও ১৬ শতাংশ মালামাল এবং রেলপথে ৪ শতাংশ যাত্রী ও ৪ শতাংশ মালামাল পরিবাহিত হয়।

ইউএনডিপি/এসকাপের এক প্রকাশনা (১৯৮৭-৯১) মতে, প্রতি লিটার জ্বালানিতে কিলোমিটারপ্রতি নৌপথে যেখানে ২১৭ টন কিমি মালামাল পরিবাহিত হয়, সেখানে রেলপথে ৮৫ টন কিমি এবং সড়কপথে বড় ডিজেল ট্রাকে ২৫ টন মালামাল পরিবাহিত হয়।

পরিবেশবান্ধব ও সাশ্রয়ী পরিবহন মাধ্যম এ নৌপথে বিভিন্ন কারণে ১৯৯১ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত ৩০ বছরে ৬০২টি নৌ-দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে প্রাণহানি ঘটেছে প্রায় ৩ হাজার ৭৩৫ জন যাত্রীর। নৌ-দুর্ঘটনার তদন্ত প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা যায়, কালবৈশাখী বা দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া, অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহন, চালকের অদক্ষতা, গাফিলতি, জাহাজের নির্মাণ ও যান্ত্রিক ত্রুটি, সংঘর্ষ ইত্যাদি কারণে দুর্ঘটনা ঘটে থাকে। বিগত ২৯ বছরের তথ্য বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, লঞ্চে অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহনের কারণে প্রায় ৩০ শতাংশ, কালবৈশাখী ও দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে ২৫ শতাংশ এবং অন্যান্য কারণে ৪৫ শতাংশ দুর্ঘটনা ঘটে থাকে। এ সকল দুর্ঘটনা তদন্তে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন পর্যালোচনায় এটি স্পষ্ট যে, নৌযান পরিচালনাকারী অধিকাংশ নৌযান শ্রমিক এবং একই সাথে মালিকগণও প্রচলিত আইন-কানুন, নিরাপদ ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে যথেষ্ট সচেতন নন।

নৌ-দুর্ঘটনা প্রতিরোধে বিআইডব্লিউটিএ বেশকিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করায় সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নৌ-দুর্ঘটনা অনেক কমে এসেছে। কালবৈশাখী মৌসুমে নৌ-দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা বেশি থাকে বিধায় বিআইডব্লিউটিএ’র পক্ষ থেকে সকল নদীবন্দরে বিশেষ মনিটরিং ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। অভ্যন্তরীণ নদীবন্দরসমূহে আবহাওয়া বার্তা প্রচার করা হয়। যাত্রীসাধারণকে সচেতন করার লক্ষ্যে নৌ-হুঁশিয়ারিসংবলিত বিভিন্ন স্লোগান বিলবোর্ড ও লিফলেট প্রকাশ ও প্রচার করা হয়। চলতি মৌসুমে এরই মধ্যে প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় জনসচেতনতায় বিশেষ বিজ্ঞপ্তি প্রচার করা হয়েছে। তাছাড়া উদ্ধারকারী জাহাজ রুস্তম, হামজা, নির্ভীক প্রত্যয়সহ উদ্ধারকারী টিম, যেকোনো দুর্ঘটনা মোকাবিলায় সতর্ক অবস্থায় রাখা হয়েছে।

রাতের বেলায় বালিবাহী বা মালবাহী নৌযান চলাচল সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এজন্য ভিজিল্যান্স টিম গঠন করা হয়েছে।

নৌযানের ডেক ও ইঞ্জিন কর্মীদের দক্ষ ও প্রশিক্ষিত করে তোলার জন্য বিআইডব্লিউটিএ’র নিজস্ব প্রশিক্ষণকেন্দ্র রয়েছে। নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনাকান্দায় এ প্রশিক্ষণকেন্দ্র থেকে তৈরি জনবল এরই মধ্যে সর্বমহলে প্রশংসা কুড়িয়েছে। অভ্যন্তরীণ নৌপথে পর্যাপ্ত দক্ষ ও প্রশিক্ষিত জনবল তৈরির লক্ষ্যে বরিশাল ও মাদারীপুর জেলায় ডিইপিটিসির আরো দুটি শাখা খোলা হয়েছে। স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ প্রদানের সুবিধা থাকায় আগ্রহী যে কেউ এ সকল কেন্দ্র থেকেও প্রশিক্ষণ লাভ করতে পারে।

কালবৈশাখী ঝড় অতর্কিতে আঘাত হানে। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় পথিমথ্যে অবস্থানরত লঞ্চগুলো যাতে তাৎক্ষণিকভাবে আশ্রয় নিতে পারে সে লক্ষ্যে বিআইডব্লিউটিএ নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, চাঁদপুর, বরিশাল ইত্যাদি নদীবেষ্টিত জেলার দুর্যোগপ্রবণ এলাকার ১০টি স্থানে আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে।

দুই ঈদের সময় ঢাকা নদীবন্দরসহ দেশের সকল নদীবন্দরে যাত্রী সংখ্যা কয়েক গুণ বৃদ্ধি হয়। বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃক এ সকল নদীবন্দরে ঈদ প্যাসেঞ্জার ম্যানেজমেন্ট প্ল্যান অনুযায়ী সকল ধরনের কার্যক্রম গ্রহণ করা হচ্ছে। ফলে বর্তমানে নৌপথে যাত্রীসাধারণ নিরাপদে ঘরে ফিরতে পারছে।

নদী যেকোনো দেশের সম্পদ। এজন্য নদীতীরেই গড়ে উঠেছে বড় বড় নগর সভ্যতা। বাংলাদেশ খুবই ভাগ্যবান যে, এদেশে প্রায় চার শতাধিক নদ-নদী প্রবহমান রয়েছে। তবে প্রকৃতি-প্রদত্ত এই নদীসমূহ কতকটা প্রাকৃতিক এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রে মানবসৃষ্ট কারণে বিনষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছে। একটা সময় এদেশে যেখানে প্রায় ২৪ হাজার কিমি নৌপথে নৌযান চলাচল করত, বর্তমানে সেখানে শুষ্ক মৌসুমে মাত্র ৪ হাজার ৫০০ কিমি নৌপথ সচল আছে। তবে আশার কথা বর্তমান সরকার নৌপথের প্রয়োজনীয়তা অধিকতর গুরুত্বের সাথে উপলব্ধি করে সারাদেশের ৪৯১টি (বিআইডব্লিউটিএ ১৭৮টি, পানি উন্নয়ন বোর্ড ৩১৩টি) নদী খননের একটি মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। এ প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে ১২টি গুরুত্বপূর্ণ নৌপথের খননকাজ সমাপ্ত হয়েছে। ৫৩ নৌপথের প্রথম পর্যায়ে ২৪টি নৌপথের খননকাজ চলমান রয়েছে। এছাড়া আরো দুটি প্রকল্পের আওতায় পাঁচ নদীর খননকাজ চলছে। এখন আমাদের প্রধান দায়িত্ব সর্বাত্মক প্রচেষ্টা দিয়ে সরকারের এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা।

নৌ-দুর্ঘটনা প্রতিরোধে লঞ্চের চালক বা মাস্টার, যাত্রী ও মালিক সকলকে একযোগে কাজ করতে হবে। চালকদের প্রতি নির্দেশনা-যাত্রীদের বসার স্থানে মালামাল উঠাবেন না এবং ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রী ও মালামাল বহন করবেন না। বৈধ কাগজপত্র, জীবন রক্ষাকারী সরঞ্জামাদি লঞ্চে রাখবেন, যাত্রার পূর্বে ইঞ্জিন পরীক্ষা করুন এবং আবহাওয়া সংকেত মেনে চলুন। পথিমধ্যে বিপদের আশঙ্কা দেখা দিলে দ্রুত লঞ্চ নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নিন, ঘাটে ভেড়ার এবং ছাড়ার সময় সতর্কতা অবলম্বন করুন। যাত্রাপথে অন্য নৌযানের সাথে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হবেন না। যাত্রার পূর্বে হ্যাচ কভার পানিরোধক করে সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করুন। লঞ্চের ছাদে যাত্রী উঠাবেন না, ধারণক্ষমতা অনুযায়ী যাত্রী বোঝাই হওয়ার সাথে সাথে ঘাট ত্যাগ করবেন।

নৌপথে নিরাপদ চলাচল নিশ্চিত করতে জনসচেতনতার বিকল্প কিছু নেই। ঈদ, পূজা-পার্বণ অথবা দীর্ঘ ছুটির সময় যাত্রীসাধারণের অধিক সমাগম ঘটে। হঠাৎ যাত্রী আধিক্যের কারণে লঞ্চে ওভার লোডিং হয়ে থাকে। সুতরাং কোনো লঞ্চে অতিরিক্ত যাত্রী হয়ে না ওঠা, লঞ্চের ছাদে ভ্রমণ না করা, দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় যাত্রা না করা ইত্যাদি বিষয়ে যাত্রীসাধারণকে অবশ্যই সচেতন হতে হবে।

নৌযান মালিকদের প্রতি আমাদের অনুরোধ লঞ্চে রাডার, জিপিএস, ইকোসাউন্ডার ইত্যাদি আধুনিক  যন্ত্রপাতি সমৃদ্ধ করে নৌযান স্ট্যাবল করে দুর্ঘটনা প্রতিরোধে সক্ষম করে তুলুন। সনদধারী, দক্ষ ও অভিজ্ঞ মাস্টার বা সারেং ও ড্রাইভার দ্বারা লঞ্চ পরিচালনা করুন। ধারণক্ষমতা অনুযায়ী যাত্রী বোঝাই হওয়ার সাথে সাথে ঘাট ত্যাগ করে গন্তব্যের উদ্দেশে যাত্রা করতে মাস্টারকে নির্দেশ দিন।

মনে রাখতে হবে যেকোনো দুর্ঘটনায় একটি প্রাণহানির ঘটনা ঘটলেও তা অপূরণীয় ক্ষতি। সরকারের পক্ষ থেকে এক্ষেত্রে আর্থিক সুবিধা দেয়া হয় বটে তবে তা নিহতের পরিবারবর্গের ক্ষতি পুষিয়ে দেওয়ার মতো যথেষ্ট নয়। যাত্রীসাধারণকে নিজের মধ্যে এই উপলব্ধি তৈরি করতে হবে যে, নিজের জীবন সুরক্ষিত থাকলে নিজের জন্য, পরিবারের জন্য, দেশের জন্য কিছু অবদান রাখতে পারবেন। নৌযানচালকদের মধ্যে এই চেতনাবোধ তৈরি করা প্রয়োজন-তিনি যে নৌযান পরিচালনা করছেন তাতে যতজন যাত্রী অবস্থান করছেন, তাদের নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছানোসহ নিরাপত্তার ভার যথাযথভাবে পালন করবেন। নৌযান মালিকদেরও মনে রাখতে হবে, তিনি একটি সেবামূলক কাজে নিয়োজিত থেকে নৌ-ব্যবসায় সংশ্লিষ্ট রয়েছেন।

পরিশেষে বলতে চাই নৌ-নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে নৌ-আইন প্রতিপালন এবং নৌযান কর্মচারীদের প্রশিক্ষণের বিকল্প নেই। সম্মানিত মালিক সমিতিকে অনুরোধ করব তারা যেন নৌযান কর্মীদেরকে প্রশিক্ষিত করে তোলার জন্য এগিয়ে আসেন। মালিকপক্ষ আগ্রহী হলে বিআইডব্লিউটিএ নৌযান কর্মীদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করবে। মনে রাখতে হবে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ ও অভিজ্ঞ নৌযান কর্মী গড়ে তুলতে পারলে আমরা অবশ্যই নিরাপদ নৌপথ নিশ্চিত করতে পারব।

নৌসম্পদের সর্বোচ্চ সুফল ঘরে তুলতে নদীর পরিবেশ ও প্রতিবেশ ঠিক রাখার বিকল্প নেই। অর্থাৎ নৌসম্পদ আহরণ করতে হবে নদী ও নৌপথের পরিবেশ অটুট রেখেই।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here