বিআইডব্লিউটিএ নিয়মিত প্রকাশনা

বৃহস্পতিবার, জানুয়ারি ২৩, ২০২৫
16 C
Dhaka

বিআইডব্লিউটিএ নিয়মিত প্রকাশনা

বন্ধ্যা সময় পেছনে ফেলে নদীকে এখন তার কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার পালা। সেই ব্রত নিয়েই কাজ করছে বর্তমান সরকার। প্রধানমন্ত্রীর প্রজ্ঞা ও প্রয়াসে নদী হয়ে উঠছে প্রবহমান-সঞ্চরণশীল।

রিভার মেটামরফসিস’ বা ‘নদীর রূপান্তর’ চিরায়ত সত্য। এটাই স্বভাবচঞ্চল নদ-নদীর বৈশিষ্ট্য। খেয়াল-খুশির তালে মেতে থাকা তার কাজ। নদী সতত পরিবর্তিত হয়। এই পরিবর্তনে প্রকৃতি কখনো তাকে প্ররোচিত করে। কখনও বা মনুষ্য কর্মকাণ্ড অর্থাৎ ‘অ্যানথ্রপজেনিক অ্যাক্টিভিটি’ নদীকে রূপান্তরিত হতে বাধ্য করে। এই রূপান্তর যে নদীর পুরো শরীরজুড়ে হয়, তাও নয়। হয়তো অংশজুড়ে হয়।

প্রকৃতিগতভাবেই পানিপ্রবাহের সাথে সাথে নদী বিপুল পরিমাণ সেডিমেন্ট ও পলি বহন করে। এই পলির কিছু অংশ সে বঙ্গোপসাগরে নিয়ে যায়। কিছু অংশ নদীবক্ষেই জমা হয়, নৌপথের নাব্যতা কমিয়ে দেয়; চর জাগে। নদীকে তার স্রোত ফিরিয়ে দিতে তাই প্রয়োজন পড়ে নিয়মিত ড্রেজিংয়ের। তবে সেটা জবরদস্তিমূলক নয়; হতে হয় নদীকে বুঝে, উপাত্ত বিশ্লেষণ করে, জীববৈচিত্র্য অক্ষুন্ন রেখে, বৈজ্ঞানিক নিয়ম-বিধি মেনে। সম্পদ, সৌন্দর্যের আকর যে নদী, ’৭৫ পরবর্তী দীর্ঘ সময় পর্যন্ত সেই নদীর কাতরতা আমাদেরকে ভাবায়নি, নদীকে আমরা  স্নেহের বাঁধনে বাঁধতে পারিনি। ফল যা হওয়ার তা-ই হয়েছে। একদা সঞ্চরণশীল, স্রোতস্বীতা নদীবক্ষ শুকিয়ে মৃতবৎ রূপ পরিগ্রহ করেছে। কাঠফাটা গ্রীষ্মে অনেক নদীকে আর নদী বলে চেনাই যায় না। কোথাও নদীর বুকে গড়ে উঠেছে রাস্তা, তো কোথাও ধানক্ষেত নয়তো পাট। সঘন বর্ষায় শীর্ণ দেহে খানিকটা প্রাণ ফিরলেও শুখা নদীতে আগের মতো আর জোয়ার আসে না। নাব্যতা হারাতে হারাতে ২৪ হাজার কিলোমিটার দীর্ঘ নৌপথ নেমে এসেছে মাত্র ছয় হাজার কিলোমিটারে।

অ্যানথ্রপজেনিক অ্যাক্টিভিটির কারণে নদীর যে পীড়ন তা আরো বেশি ভয়াবহ। দীর্ঘ একটা সময় পর্যন্ত দেখা গেছে নদীর তীর দখলের উৎসব। অথচ এই তীরই হচ্ছে নদীর সংসার। সেই সংসার দখল করে অনায়াসে গড়ে উঠেছে নানা ধরনের শিল্প, ডকইয়ার্ড কিংবা বসতি। দখলের চাপে পিষ্ট প্রসারিত নদী হয়েছে বিশীর্ণ-সংকীর্ণ। আবার নদীর জীববৈচিত্র্যের দিকেও দৃষ্টি পড়েনি একটা দীর্ঘ সময় পর্যন্ত। দখলে ক্ষীণকায় হতে হতে স্রোত হারিয়ে দূষণের কবলে পড়ে একসময় প্রাণবৈচিত্র্যও হারাতে বসে নদী।

সেই সব বন্ধ্যা সময় পেছনে ফেলে নদীকে এখন তার কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার পালা। সেই ব্রত নিয়েই নদী রক্ষায় কাজ করছে বর্তমান সরকার। মৃতপ্রায় নদীতে আবার ডাকছে প্রাণের বান। ‘নদীবাংলা’র এই সংখ্যায় বক্ষমাণ প্রধান রচনাটি সেই গল্প বলারই প্রয়াস।

প্রযুক্তির ছোঁয়ায় অন্য সবকিছুর মতো বদল আসছে ইনল্যান্ড নেভিগেশনেও। কীভাবে সেই পরিবর্তন আসছে, কারাইবা এর কোন প্রান্তে আছে, সেই আলোচনাও থাকছে এবারের সংখ্যায়। আছে নদী ও নৌপথ নিয়ে সরকারের আরো পরিকল্পনার সারকথা। নিয়মিত আয়োজন হিসেবে নাতিদীর্ঘ কলেবরে এবারো তুলে এনেছি আমাদের নদী ও আমাদের বন্দরের কথা। পরিভ্রমণ করেছি দূর অতীতে, আমাদের ঐতিহ্যে। সেই সাথে থাকছে দেশ-বিদেশের নদী ও নৌ-খাত নিয়ে সবশেষ ঘটনাপ্রবাহের কথা ও ছবি।

প্রিয় পাঠক, আশা করি আমাদের এই প্রয়াস নদী ও নৌপথ নিয়ে আপনার জিজ্ঞাসার উত্তর দেবে। কিছুটা হলেও নতুন ভাবনার খোরাক জোগাবে। আপনার মূল্যবান মতামত এগিয়ে নেবে সমৃদ্ধ কলেবরে ‘নদীবাংলা’র পথচলা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here