বিআইডব্লিউটিএ নিয়মিত প্রকাশনা

বৃহস্পতিবার, জানুয়ারি ২৩, ২০২৫
16 C
Dhaka

বিআইডব্লিউটিএ নিয়মিত প্রকাশনা

বিআইডব্লিউটিএর ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার ডিজিটাল রূপান্তর

অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়ন ও দক্ষ ব্যবস্থাপনায় তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার এখন আর দূরবর্তী নয়। বিশ্বব্যাপীই এর ব্যবহার বাড়ছে। অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহনে তথ্যপ্রযুক্তির বিভিন্ন টুলের ব্যবহার নৌরুটের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করছে। সেই সাথে সহজ করছে নৌপরিবহন সংক্রান্ত পরিকল্পনা প্রণয়নও।

অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহনের ডিজিটাইজেশন প্রশাসনিক ব্যয় কমিয়ে একে লজিস্টিকস খাতের টেকসই মাধ্যম হিসেবে উন্নীত করতেও ভূমিকা রাখছে। দীর্ঘমেয়াদে এর পরোক্ষ প্রভাব রয়েছে উৎপাদন খাত, কর্মসংস্থান, সর্বোপরি সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে। অন্য সব খাতের মতো ডিজিটাইজেশনের ছোঁয়া এখন বাংলাদেশে অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহনেও। সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশের যে রূপরেখা, তার সাথে সামঞ্জস্য রেখে ডিজিটাল রূপান্তর ঘটছে দেশের অভ্যন্তরীণ নৌপথের ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায়।

এরই অংশ হিসেবে সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের দেওয়া সেবাসূহ বিবেচনায় নিয়ে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ এবং অ্যাকসেস টু ইনফরমেশনের (এটুআই) সহযোগিতায় ই-ইনল্যান্ড ওয়াটার ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম উন্নয়ন করেছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কতৃর্পক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। যাত্রীসেবা থেকে শুরু করে জাহাজমালিক, কর্মচারী, তদন্তকারী ও নিয়ন্ত্রণকারীর কার্যক্রম, এমনকি জাহাজ চলাচলের বিভিন্ন তথ্যও এই সিস্টেমে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। সিস্টেমটি উন্নয়ন করা হয়েছে মোট ১০টি মডিউলের ভিত্তিতে। এর মধ্যে আছে

ভেসেল রেজিস্ট্রেশন ও সার্ভে ব্যবস্থাপনা: সিস্টেমটির মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন অধিদপ্তরের নৌযান রেজিস্ট্রেশন ও জরিপ-সংক্রান্ত সব তথ্য স্বয়ংক্রিয়ভাবে বিআইডব্লিউটিএ জানতে পারবে।

টাইম-টেবিল ও ভাড়া ব্যবস্থাপনা: এই পদ্ধতিতে অনলাইনে টাইম-টেবিলের জন্য আবেদন গ্রহণ করা হবে। টাইম-টেবিল অনুমোদন এবং সনদও পাওয়া যাবে অনলাইনে। টাইম-টেবিল বাতিল করা হলে অনলাইনে তা জানা যাবে। এ ছাড়া রুটসমূহের নতুন, নবায়নকৃত ও পরিবর্তিত ভাড়ার তালিকা স্বয়ংক্রিয়ভাবে নির্ধারিত হবে।

রিকুইজিশন ম্যানেজমেন্ট: রিকুইজিশনের জন্য অনলাইনে আবেদন করা যাবে। সরকারি ও বেসরকারি উভয় ক্ষেত্রেই আবেদন প্রক্রিয়াকরণ সম্পন্ন হবে অনলাইনে। এজন্য মূল্য পরিশোধও করা যাবে অনলাইনেই।

ভেসেল নেভিগেশন ম্যানেজমেন্ট: এই ব্যবস্থায় জাহাজে ট্র্যাকিং ডিভাইস থাকবে এবং জাহাজ চলাচলের তথ্য অনলাইনে ও বন্দরে স্থাপিত ডিসপ্লে বোর্ডে প্রদর্শিত হবে। ট্র্যাকিং সিস্টেমের মাধ্যমে এইসব তথ্য তাৎক্ষণিক হালনাগাদ করা হবে। বিআইডব্লিউটিএ, জাহাজমালিক ও যাত্রী সকলেই তা দেখতে পারবেন।

ই-ঘাট ব্যবস্থাপনা: জাহাজ আগমন ও নির্গমনের সব তথ্য ঘাটের ডিসপ্লে বোর্ডে প্রদর্শিত হবে। ভাড়া ও লজিস্টিকস ব্যবস্থাপনাও হবে অনলাইনে।

জাহাজে জরিপ ব্যবস্থাপনা: যাত্রীদের জন্য অনলাইন ফরম থাকবে। তা জমাও দেওয়া যাবে অনলাইনে। জাহাজের মাস্টার ডিক্লারেশন ফরম জমা দেওয়ার পর বিআইডব্লিউটিএর তথ্যপ্রযুক্তি শাখার কাছে সেই বার্তা পৌঁছে যাবে। ডিক্লারেশন অনুমোদনও দেওয়া হবে অনলাইনে।

মেরিন কোর্ট মামলা ব্যবস্থাপনা: এই ব্যবস্থায় অনলাইনে মামলা দাখিল করা যাবে। মামলা প্রক্রিয়াকরণ এবং এ সংক্রান্ত তথ্যও স্বয়ংক্রিভাবে জানা যাবে। অর্থাৎ, মেরিন কোর্টে মামলা ব্যবস্থাপনা হবে অনলাইনের মাধ্যমে।

কনজার্ভেন্সি চার্জ গ্রহণ ব্যবস্থাপনা: এই ব্যবস্থায় কনজার্ভেন্সি সংক্রান্ত মাশুল অনলাইনে প্রদান করা যাবে। বকেয়া মাশুল ব্যবস্থাপনাও হবে অনলাইনেই।

টিকেটিং ও যাত্রীসেবা ব্যবস্থাপনা: এই পদ্ধতিতে আসন বুকিং, টিকেট ক্রয় ও এর মূল্য পরিশোধ সবই করা যাবে অনলাইনে। এ সংক্রান্ত কোনো অভিযোগ থাকলে তা-ও অনলাইনে দাখিল করা যাবে। টিকেট ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম তদারকিতে জাহাজমালিক ও বিআইডব্লিউটিএ একই প্ল্যাটফরমে যুক্ত থাকবে।

অর্থাৎ, এইসব সফটওয়্যারের মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ নৌরুটগুলো ডিজিটাইজড হচ্ছে। জাহাজে ট্র্যাকিং সিস্টেম থাকায় সার্বক্ষণিক সেগুলোর অবস্থান ও গতিবিধি পর্যবেক্ষণেরও সুযোগ তৈরি হচ্ছে। ব্যবস্থাটির ফলে জাহাজের নাবিকরা যেমন চলাচলের সহায়তা পাবেন, তেমনি আবহাওয়াজনিত বা অন্যান্য সতর্কবার্তা আদান-প্রদানের মাধ্যমে সঠিক সিদ্ধান্তও নিতে পারবেন। সিস্টেমটি ব্যবহারের মাধ্যমে সব পর্যায়ে তথ্য আদান-প্রদান, বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ, মূল্য পরিশোধ কার্যক্রম অনলাইনে সম্পাদন হবে, যা সব পক্ষের কার্যক্রমকে সহজ ও দ্রুততর করবে।

সিস্টেমটি প্রায় সব ক্ষেত্রেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে অগ্রিম বার্তা প্রদানের মাধ্যমে সঠিক সময়ে কার্যক্রমগুলো সম্পাদনে সহায়তা করবে। এতে সব পর্যায়ে জবাবদিহিতা নিশ্চিত হবে। তাছাড়া সঠিক সময়ে তথ্য পাওয়ার কারণে একদিকে সেবাগ্রহীতারা ক্ষেত্রবিশেষে জরিমানার হাত থেকে রেহাই পাবেন, অন্যদিকে সরকারও কাঙ্ক্ষিত রাজস্ব পাবে।

এদিকে সফটওয়্যার প্রস্তুত হওয়ার পর ১৪—১৫ জুন এর ইউজার অ্যাকসেপট্যান্স টেস্ট (ইউএটি) অনুষ্ঠিত হয়। চারটি গ্রুপে মোট ৭৮ জন এতে অংশ নেন। অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে বিআইডব্লিউটিএর কর্মকর্তা ছিলেন ৫০ জন, বিশেষজ্ঞ ৬ জন, এটুআইয়ের বিশেষজ্ঞ ১০ জন এবং আইটি পার্টনারের পক্ষে ছিলেন ১২ জন। ইউজার অ্যাকসেপট্যান্স টেস্ট শেষে যে মূল্যায়ন করা হয়েছে তাতে সিস্টেমটি ৭৫ শতাংশ ইউজার ফ্রেন্ডলি বলে মতামত এসেছে। এছাড়া প্রসেস ডিজিটাইজেশন এফিশিয়েন্সি পাওয়া গেছে ৮০, ব্যবহারকারীর ফিজিওলজিক্যাল অ্যাডপটেশন ৭৫, পজিটিভ ডিপ্লয়মেন্ট রেডিনেস ৮০ এবং আর্কিটেকচারাল স্ট্রেংথ ৯০ শতাংশ। ইউএটি শেষে সিস্টেমটি এখন বাস্তবায়নের প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

সবশেষে বলা যায়, ই-ইনল্যান্ড ওয়াটার ট্রাফিক ম্যানেজমেন্টের আওতায় অনেক কার্যক্রম স্বয়ংক্রিয়ভাবে সম্পাদন হওয়ার কারণে সেবাসমূহ পক্ষপাতমুক্ত থাকবে। সর্বোপরি এটি বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে বিআইডব্লিউটিএ একটি স্মার্ট প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরিত হবে, যা প্রতিষ্ঠানটিকে সরকারের ঘোষিত ভিশন ২০৪১—এর সাথে সমানতালে চলতে সক্ষম করে তুলবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here