বিআইডব্লিউটিএ নিয়মিত প্রকাশনা

বুধবার, জানুয়ারি ২২, ২০২৫
18 C
Dhaka

বিআইডব্লিউটিএ নিয়মিত প্রকাশনা

হুরাসাগর : উত্তরাঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ নদী

আত্রাই-বড়াল এবং ফুলজোরের (বাঙ্গালী-করতোয়া) মিলিত প্রবাহ হচ্ছে হুরাসাগর। এটি পাবনা ও সিরাজগঞ্জ জেলার মধ্যবর্তী একটি নদী, যার উৎপত্তি সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার বাঐতারা নামক স্থানে।

ফুলজোর বাঙ্গালী নদীর অংশ এবং যমুনা নদীর সাথে মিলিত হওয়ার পর এটি ফুলজোর নাম নিয়ে দক্ষিণ-পূর্ব দিকে মোড় নিয়েছে। হাটিকুমরুল যমুনা সেতু সড়কের দক্ষিণে ফুলজোর নদী সরাসরি দক্ষিণমুখী পথে প্রবাহিত হয়েছে। সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ার কাছে ডানদিক থেকে দুর্গাদহ নদ বের হয়েছে। শাহজাদপুরের কিছু আগে এর বাম তীরে হুরাসাগর নদী এসে পড়লে মিলিত প্রবাহ হুরাসাগর নাম ধারণ করেছে। কিন্তু শাহজাদপুরের কাছে হুরাসাগর মূল প্রবাহ থেকে বাম দিকে বের হয়ে গেলে এটি কাকিয়ান নদ নাম ধারণ করেছে। কাকিয়ান নদ বাঘাবাড়ীর কাছে গোহালা নদীর সাথে মিলিত হয়ে দক্ষিণ-পূর্ব দিকে প্রবাহিত হয়েছে।

বিলসূর্য নদ ও বান্নি নদী ভাটিতে গিয়ে মিলিত হয়ে বিলসূর্য নামে প্রবাহিত হওয়ার পথে সাপদাইর নামে একটি শাখা নদ বের হয়েছে। গোহালা নদী বাঙ্গালী নদী থেকে বের হয়ে দুর্গাদহ ও সাপদাইর নদ এবং জলাভূমি থেকে আসা সালিথা নদীর প্রবাহ গ্রহণ করে দক্ষিণ-পূর্ব দিকে প্রবাহিত হয়েছে। বড়াল নদের সাথে মিলিত হওয়ার পর বাঘাবাড়ী সেতু পার হলে কাকিয়ান নদ এর বাম তীরে পতিত হয়েছে। আরও কিছু ভাটিতে এর ডান তীরে সূতিখালী ও ইছামতি নদী এবং বাম তীরে হুরাসাগর নদী পতিত হয়েছে। এরপর থেকে মিলিত প্রবাহ হুরাসাগর নামে যমুনা নদীতে মিশেছে।

আগে ইছামতি থেকে নৌযানগুলোর সরাসরি হুরাসাগরে যাওয়ার কোনো সুযোগ ছিল না। তাই একটি নেভিগেশন লক নির্মাণ করা হয়েছে, যার সাহায্যে দুই পাশের দুই নদীর পানির উচ্চতায় পার্থক্য থাকার পরও ছোট-খাটো দেশি নৌকা এপার-ওপার করা যায়। বর্তমানে এই নদীর প্রবাহ খুবই কমে গেছে, শুকনা মৌসুমে পানি প্রায় একেবারেই থাকে না। অক্ষাংশ অনুযায়ী এ নদীর অবস্থান ২৪০৬র্৭ পূর্ব এবং দ্রাঘিমাংশ অনুযায়ী ৮৯০৬র্৭ পশ্চিম।

৬৬ কিলোমিটার দীর্ঘ, ৬০ মিটার প্রশস্ত ও ৭ মিটার গভীরতার হুরাসাগর নদীর অববাহিকা বা ক্যাচমেন্টের আয়তন ৩০০ বর্গকিলোমিটার। নদীটির প্রকৃতি মৌসুমি এবং ফেব্রæয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত প্রবাহ প্রায় থাকে না। নদীটির প্রবাহ সবচেয়ে বেশি থাকে জুলাই ও আগস্ট এই দুই মাসে এবং তার পরিমাণ দাঁড়ায় প্রতি সেকেন্ডে ৫০০ ঘনমিটার। নদীটির গভীরতাও এ সময় সর্বোচ্চ ৭ মিটারে উন্নীত হয়। জোয়ার-ভাটার প্রভাবমুক্ত হুরাসাগর নদীতে সাধারণত বন্যা হয় না এবং নদীর পানি দুই কূল উপচিয়ে পড়ে না।

জনশ্রুতি

হুরাসাগর নদীর তীরে অবস্থিত শাহজাদপুর একটি পুরাতন বন্দর। কথিত আছে, মুখদুম শাহ নামক জনৈক আরব বাসিন্দা ধর্মপ্রচারের উদ্দেশে শাহজাদপুরের তিন কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে পোতাজিয়া নামক স্থানে আসেন। আসার সময় তাঁর জাহাজ ডাঙ্গায় আটকে যায় এবং মুখদুম শাহ সেখানেই আবাস গড়েন। স্থানীয় লোকজন তাঁকে আরব দেশের শাহজাদা মনে করতেন। সেই মোতাবেক স্থানটির নাম হয়ে যায় শাহজাদপুর। এই শাহজাদপুর থেকে ১০-১১ কিলোমিটার দক্ষিণে ইছামতি-বড়াল ও হুরাসাগর নদীর সঙ্গমস্থলের পাশে বেড়া উপজেলা একসময় প্রসিদ্ধ বাণিজ্যকেন্দ্র ছিল। পাটের ব্যবসার জন্য বিশেষ খ্যাতি ছিল এর।

অর্থনৈতিক গুরুত্ব

সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া ও শাহজাদপুর পৌরসভা হুরাসগর নদীর তীরে অবস্থিত। উত্তরাঞ্চলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বাঘাবাড়ী নদীবন্দরও এই নদীর তীরেই গড়ে উঠেছে। পাশাপাশি নদীটিকে আশ্রয় করে গড়ে উঠেছে সরকারি ও বেসরকারি নানা শিল্প এবং অবকাঠামো। মিল্ক ভিটা, বাঘাবাড়ী নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্র ও বাঘাবাড়ী তেল ডিপো এর মধ্যে অন্যতম। উত্তরাঞ্চলে সার ও জ্বালানি তেল হুরাসাগর নদীর তীরে অবস্থিত বাঘাবাড়ী নদীবন্দর দিয়েই আসে। একটি সড়ক সেতু রয়েছে নদীটির ওপর। সবমিলিয়ে উত্তরবঙ্গের অর্থনীতিতে হুরাসাগর গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে।

এক নজরে হুরাসাগর নদী

উৎসমুখ : সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার যমুনা নদী (বাঐতারা নামক স্থানে উৎপত্তি)
পতিত মুখ : পাবনা জেলার বেড়া উপজেলার যমুনা নদী
প্রবাহিত গতিপথ এলাকা : সিরাজগঞ্জ সদর, বেলকুচি, উল্লাপাড়া,
শাহজাদপুর ও পাবনার বেড়া উপজেলা
দৈর্ঘ্য : ৬৬ কিলোমিটার
প্রস্থ : ৬০ মিটার
অববাহিকা : ৩০০ বর্গকিলোমিটার
প্রবাহবিহীন মাস : ফেব্রæয়ারি, মার্চ, এপ্রিল ও মে
বেশি প্রবাহের মাস : জুলাই ও আগস্ট
প্রবাহের পরিমাণ : ৫০০ ঘনমিটার/সেকেন্ড
গভীরতা : ৭ মিটার

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here