বিআইডব্লিউটিএ নিয়মিত প্রকাশনা

বুধবার, জানুয়ারি ২২, ২০২৫
17 C
Dhaka

বিআইডব্লিউটিএ নিয়মিত প্রকাশনা

ছয় দশক পর চালু সুলতানগঞ্জ-মায়া নৌপথ প্রটোকল রুটে বাণিজ্য বৃদ্ধির নতুন সম্ভাবনা

নদীবাংলা ডেস্ক,
১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ তারিখে সুলতানগঞ্জ থেকে মায়া পর্যন্ত নৌপথে পণ্য পরিবহন আবার শুরু হয় ছবি: সংগৃহীত

পূর্ববঙ্গের মধ্য দিয়ে কলকাতা থেকে আসামে পণ্য পরিবহন চালু ছিল সেই ব্রিটিশ আমলেই। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পরও অভ্যন্তরীণ নৌপথে পণ্য পরিবহনের এ কার্যক্রম অব্যাহত থাকে। ১৯৫০ এর দশকের শেষ দিকে পাকিস্তান ও ভারত সরকার এক চুক্তির মাধ্যমে উভয় দেশের মধ্যে বাণিজ্য এবং এক দেশের এক স্থান থেকে অন্য স্থানে পণ্য আনা-নেওয়ার জন্য অন্য দেশের নৌপথ ব্যবহারের সুযোগ সৃষ্টি করে। ১৯৬৫ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর এটি বন্ধ হয়ে যায়।

স্বাধীনতার পর প্রতিবেশী ভারতের সাথে বাণিজ্য, অর্থনীতি, যোগাযোগ, পানি ব্যবস্থাপনাসহ একাধিক গুরুত্বপূর্ণ দ্বিপক্ষীয় চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এর অন্যতম হলো বাংলাদেশ-ভারত বাণিজ্য চুক্তি। সেই সময়ে বাংলাদেশের বাণিজ্যমন্ত্রী এম আর সিদ্দিকী এবং ভারতের কেন্দ্রীয় বৈদেশিক বণিজ্যমন্ত্রী এলএন মিশ্র ১৯৭২ সালের ২৮ মার্চ নিজ নিজ পক্ষে চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। চুক্তিটির ৫ নম্বর অনুচ্ছেদে উভয় সরকার পারস্পরিক স্বার্থে দুই দেশের মধ্যে এবং এক দেশের এক স্থান থেকে অন্য স্থানে পণ্য পরিবহনে নিজ নিজ দেশের নৌ, রেল ও সড়কপথ ব্যবহারের অনুমতি দেওয়ার ব্যাপারে সম্মত হয়। অনুচ্ছেদটি অনুযায়ী, ওই বছরের ১ নভেম্বর দুই দেশের সরকারের মধ্যে স্বাক্ষরিত হয় প্রটোকল অন ইনল্যান্ড ওয়াটার ট্রানজিট অ্যান্ড ট্রেড (পিআইডব্লিউটিটি)।

এই চুক্তিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আনা হয় ২০১৫ সালে। ওই বছরের ৬ জুন দুই দেশের নৌ সচিব স্বাক্ষরিত চুক্তিতে প্রটোকলের মেয়াদ ধরা হয় পাঁচ বছর। শুধু তাই নয়, চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার অন্তত ছয় মাস আগে কোনো দেশ চুক্তি বাতিলের আগ্রহ প্রকাশ করে লিখিত নোটিশ না দিলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে প্রটোকলের মেয়াদ পরবর্তী পাঁচ বছরের জন্য নবায়ন হয়ে যাবে বলে সিদ্ধান্ত হয়। এ ছাড়া পিআইডব্লিউটিঅ্যান্ডটির পরিচালন অগ্রগতি মূল্যায়ন এবং উদ্ভূত পরিস্থিতিতে তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের লক্ষ্যে উভয় দেশের নৌপরিবহন সচিব যাতে প্রতি দুই বছরে অন্তত একবার বৈঠক করেন সে ব্যবস্থাও রাখা হয় চুক্তিতে।

২০১৫ সালে স্বাক্ষরিত চুক্তিতে প্রথম সংযোজনী আনা হয় ২০১৮ সালের ২৫ অক্টোবর। এতে বাংলাদেশ অংশের পানগাঁও এবং ভারতীয় অংশের ধুবরিকে নতুন পোর্ট অব কল হিসেবে যুক্ত করা হয়।

নৌ প্রটোকলে দ্বিতীয় সংযোজনী স্বাক্ষরিত হয় ২০২০ সালের ২০ মে। সংযোজনীতে বিদ্যমান আটটি প্রটোকল রুটের সাথে আরও দুটি রুট সংযোজন করা হয়। রুট দুটি হলো সোনামুড়া থেকে দাউদকান্দি এবং দাউদকান্দি থেকে সোনামুড়া। পাশাপাশি বাংলাদেশ ও ভারতীয় অংশে পাঁচটি করে নতুন পোর্ট অব কল এবং দুটি করে সম্প্রসারিত পোর্ট অব কল ঘোষণা করা হয়।

বাংলাদেশ অংশের নতুন পাঁচটি পোর্ট অব কল হলো রাজশাহী, সুলতানগঞ্জ, চিলমারী, দাউদকান্দি ও বাহাদুরাবাদ। ভারতীয় অংশের পাঁচটি পোর্টস অব কল হচ্ছে ধুলিয়ান, মায়া, কোলাঘাট, সোনামুড়া ও যোগীগোপা। এ ছাড়া বাংলাদেশ অংশের দুটি সম্প্রসারিত পোর্ট অব কল হচ্ছে ঘোড়াশাল ও মুক্তারপুর এবং ভারতীয় অংশে ত্রিবেণী (বান্ডেল) ও বদরপুর।

প্রটোকলের দ্বিতীয় সংযোজনীতে ৫ ও ৬ নং রুটটি বাংলাদেশের রাজশাহী থেকে আরিচা পর্যন্ত সম্প্রসারিত করায় সম্পূর্ণ রুটটি দাঁড়িয়েছে আরিচা-রাজশাহী-গোদাগাড়ী-সুলতানগঞ্জ-মায়া-ধুলিয়ান। বিআইডব্লিউটিএর  অনুরোধের প্রেক্ষিতে কাস্টমস ষ্টেশনের রুট ও আমদানিযোগ্য পণ্যের তালিকা সংক্রান্ত জাতীয় রাজস্ব বোর্ড জারিকৃত প্রজ্ঞাপনে ২০২২ সালে গোদাগাড়ী/সুলতানগঞ্জকে পোর্ট অব কল নৌপথ শুল্ক স্টেশন হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। এর ফলে উভয় দেশে পোর্ট অব কলের সংখ্যা পাঁচটি করে বেড়েছে। এর বাইরে সম্প্রসারিত পোর্ট অব কল রয়েছে দুটি করে।

সুলতানগঞ্জ পোর্ট অব কলের বাণিজ্যিক গুরুত্ব

৫ ও ৬ নং প্রটোকল রুটটি পদ্মা নদীর আরিচায় এসে প্রটোকল রুট নং ১ ও ২ (কলকাতা-কোলাঘাট -হলদিয়া-রায়মঙ্গল-চালনা-খুলনা-মোংলা-কাউখালী -হিজলা-চাঁদপুর-নারায়ণগঞ্জ-পানগাঁও-আরিচা-সিরাজগঞ্জ-বাহাদুরাবাদ-চিলমারী-ধুবরি-যোগীগোপা-পাণ্ডু -শীলঘাট) এবং প্রটোকল রুট নং ৭ ও ৮ (বদরপুর-কালিগঞ্জ-জকিগঞ্জ-ফেঞ্চুগঞ্জ-শেরপুর-মাজুলী-আজমিরীগঞ্জ-আশুগঞ্জ-ভৈরববাজার-ঘোড়াশাল-নারায়ণগঞ্জ-পানগাঁও-চাঁদপুর-আরিচা-সিরাজগঞ্জ-বাহাদুরাবাদ-চিলমারী-ধুবরি-যোগীগোপা-পাণ্ডু-শীলঘাট) এর সাথে যুক্ত হয়েছে। নৌপথে আরিচা থেকে রাজশাহীর দূরত্ব ১৭৫ কিলোমিটার। এ ছাড়া রাজশাহী থেকে গোদাগাড়ী/সুলতানগঞ্জের দূরত্ব ৩৬ কিলোমিটার, গোদাগাড়ী/সুলতানগঞ্জ থেকে মায়ার দূরত্ব ২০ কিলোমিটার এবং মায়া থেকে ধূলিয়ানের দূরত্ব ৪১ কিলোমিটার। সবমিলিয়ে ২৭২ কিলোমিটার দীর্ঘ পুরো প্রটোকল রুটটি চালু করা সম্ভব হলেই এর উপযোগিতা/সুবিধা পাওয়া যাবে। তবে পদ্মা নদীর পুরো রুটটিতে শুষ্ক মৌসুমে নাব্যতা চ্যালেঞ্জ থাকলেও মাত্র ২০ কিলোমিটার দূরত্বের সুলতানগঞ্জ-মায়া প্রটোকল রুটে সারা বছরই স্বল্প নাব্যতার নৌযান দ্বারা উভয় দেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য পরিচালনা করা সম্ভব হবে।

১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ তারিখে সুলতানগঞ্জ থেকে মায়া পর্যন্ত নৌপথে পণ্য পরিবহন আবার শুরু হয় ছবি: সংগৃহীত

রাজশাহী জেলার গোদাগাড়ী উপজেলার সুলতানগঞ্জ মৌজাভূক্ত পদ্মা নদীর তীরে সুলতানগঞ্জ পোর্ট অব কলের অবস্থান। সুলতানগঞ্জ থেকে সড়কপথে রাজশাহীর দূরত্ব ৩২ কিলোমিটার। সুলতানগঞ্জ থেকে সমগ্র উত্তরবঙ্গের বৃহত্তর রাজশাহী, পাবনা, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, রংপুর, দিনাজপুর এবং পশ্চিম-দক্ষিণ বঙ্গের ফরিদপুর, কুষ্টিয়া, খুলনা, যশোরের সাথে সড়কপথে সরাসরি সংযোগ রয়েছে। ভারতের মায়া পোর্ট অব কলের মাধ্যমে বাংলাদেশে আমদানিকৃত সব ধরনের পণ্য তাই অনায়াসেই উল্লিখিত জেলাগুলোতে পৌঁছানো সম্ভব। একইভাবে সুযোগ রয়েছে এসব জেলা থেকে বড় বড় কনসাইনমেন্টের বাল্ক কার্গো সুলতানগঞ্জ পোর্ট অব কলের মাধ্যমে ভারতে রপ্তানি করার।

সুলতানগঞ্জ পোর্ট অব কল চালু হওয়ার পর সুলতানগঞ্জ এলাকায় পদ্মা নদীর তীরে পণ্য পরিবহন, সংরক্ষণ এবং স্থানান্তরের জন্য জেটি/গ্যাংওয়ে, গোডাউন, ডাম্পিং এরিয়া, পার্কিং এরিয়া এবং আধুনিক পণ্য হ্যান্ডলিংয়ের ক্রেন, কনভেয়ার বেল্ট ইত্যাদি অবকাঠামো গড়ে উঠেবে। অর্থাৎ, গোদাগাড়ী/সুলতানগঞ্জ এবং পার্শ্ববর্তী রাজশাহী এলাকায় ব্যাপক নৌবাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু হবে।

সম্ভাবনা প্রস্তুতি

সুলতানগঞ্জ-মায়া প্রটোকল রুটের সুলতানগঞ্জ পোর্ট অব কলে আমদানি-রপ্তানি পণ্য উঠানামার সুবিধার্থে প্রধান সড়কের সাথে সংযুক্ত সুলতানগঞ্জ ট্রলারঘাট এলাকাটি ব্যবহার করার সুযোগ রয়েছে। এ লক্ষ্যে এলাকাটির ৩ দশমিক ৬৫৮৮ একর নদী সিকন্তি ও ব্যক্তিমালিকানাধীন জমিতে ডাম্পিং পয়েন্ট, গোডাউন, পার্কিং ইয়ার্ডের মতো অবকাঠামো নির্মাণ করা যেতে পারে।

তবে এক্ষেত্রে কিছু সীমাবদ্ধতাও রয়েছে। প্রস্তাবিত ৩ দশমিক ৬৫৮৮ একর জায়গা পার্শ্ববর্তী এলাকায় সম্প্রসারণের সুযোগ নেই। কিন্তু মায়া-সুলতানগঞ্জ প্রটোকল রুটের সম্ভাবনা ব্যাপক। অর্থাৎ, ভবিষ্যতে এই রুটের মাধ্যমে আন্তঃদেশীয় বাণিজ্য বৃদ্ধির ব্যাপক সুযোগ থাকায় বর্ধিত পণ্য উঠানো নামানোর জন্য এই পরিমাণ জায়গা যথেষ্ট হবে না। সে কারণেই সুলতানগঞ্জ ট্রলারঘাটের পশ্চিম পাশে সুলতানগঞ্জ ও অনুপনগর মৌজার নদী তীরবর্তী আরও একটি জায়গা উপযুক্ত বলে মনে হয়েছে। এর কারণ এটি একটি বড় জায়গা, যার আয়তন ১৬ দশমিক ২৫৮২ একর এবং প্রধান সড়কের সাথে সংযুক্ত। জায়গাটির প্রায় পুরোটাই খাস, পতিত এবং সামান্য কিছু অংশ ব্যক্তিমালিকানাধীন হওয়ায় এখানে সুপরিসর ও পরিকল্পনামাফিক সব ধরনের অবকাঠামো নির্মাণ সম্ভব হবে।

বর্তমানে রাজশাহী, গোদাগাড়ী, সুলতানগঞ্জ এলাকায় পদ্মা নদীর তীরে পণ্য হ্যান্ডলিংয়ের জন্য আধুনিক যন্ত্রপাতি যেমন ক্রেন, কনভেয়ার বেল্ট, ভ্যেকু ইত্যাদির যন্ত্রপাতি স্থাপিত হয়নি বা পণ্য লোড-আনলোড, পরিবহন, সংরক্ষণ এবং স্থানান্তরের জন্য জেটি/গ্যাংওয়ে, গোডাউন, ডাম্পিং এরিয়া, পার্কিং এরিয়া ইত্যাদি অবকাঠামো সরকারি বা বেসরকারিভাবে গড়ে ওঠেনি। সুলতানগঞ্জ পোর্ট অব কল চালু হওয়ায় গোদাগাড়ী/সুলতানগঞ্জ এবং পার্শ্ববর্তী রাজশাহী এলাকায় ব্যাপক নৌ-বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরুর সুযোগ তৈরি হয়েছে। এই নৌ-বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ড সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের জন্য সুলতানগঞ্জকেন্দ্রিক বিভিন্ন পদক্ষেপসহ অবকাঠামো নির্মাণ প্রয়োজন বলে মনে করে প্রটোকল রুটটি চালু করা নিয়ে গঠিত একটি  কমিটি। এর মধ্যে রয়েছে-

● জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চাহিদানুযায়ী অর্থাৎ কাস্টমস অ্যাক্ট, ১৯৬৯ এর ধারা ৯ ও ১০ অনুযায়ী সুলতানগঞ্জ পোর্ট অব কলের শুল্ক স্টেশনের সীমানা নির্ধারণের জন্য বিআইডব্লিউটিএর নিজস্ব, লীজকৃত বা ভাড়াকৃত ন্যূনতম ১৫-২০ একর জায়গা/জমির ব্যবস্থা করা।

● সুলতানগঞ্জে বাংলাদেশ ও ভারত উভয় দেশের দ্বিপাক্ষিক আমদানি ও রপ্তানি পণ্য লোড/আনলোডের জন্য ন্যূনতম ২টি কার্গো হ্যান্ডলিং পন্টুন স্থাপন, পন্টুন ও শোরের সংযোগ স্থাপনের জন্য জেটি/গ্যাংওয়ে নির্মাণ, পণ্য হ্যান্ডলিংয়ের জন্য আধুনিক যন্ত্রপাতির (ক্রেন, কনভেয়ার কেন্ট, হুপার, ভ্যেকু ইত্যাদি) ব্যবস্থা করা ও স্থাপন, পণ্য পরিমাপের জন্য ওয়ে ব্রীজ স্থাপন, পণ্য ডাম্পিংয়ের জন্য ডাম্পিং ইয়ার্ড তৈরি, গাড়ির পার্কিং ইয়ার্ড তৈরি, প্রধান সড়ক থেকে প্রথম প্রস্তাবিত জায়গার ঘাট অবধি আনুমানিক ৪০০ মিটার রাস্তা এবং দ্বিতীয় প্রস্তাবিত জায়গার ঘাট অবধি ২৫০ মিটার রাস্তা প্রশস্ত করাসহ পাকাকরণ, পুরো জায়গাটিতে কাঁটাতারের বেড়া, অভ্যন্তরীণ রাস্তা এবং গোডাউন, ট্রানজিট শেড ইত্যাদি নির্মাণ, পাইলট হাউজ, লেবার শেড, নিরাপত্তাকর্মী (গার্ড) ও আনসার ব্যারাক এবং টয়লেট কমপ্লেক্স নির্মাণ, প্রশাসনিক ও অপারেশনাল ভবন নির্মাণ (এই ভবনের অভ্যন্তরে থাকবে বিআইডব্লিউটিএর দপ্তর, কাস্টম দপ্তর, ব্যাংক, আমদানি-রপ্তানিকারক অর্থাৎ অংশীজনদের দপ্তর ইত্যাদি) এবং বন্দর পরিচালনা ও ব্যবহারকারীদের ডিজিটাল গ্রাহক পরিষেবার জন্য উন্নত ও আধুনিক আইটি সিস্টেম চালু করা।

ভারতীয় অংশে মুর্শিদাবাদের লালগোলার মায়া থেকে সুলতানগঞ্জ পর্যন্ত পরীক্ষামূলক পণ্য পরিবহনের সূচনা করেন ভারতের কেন্দ্রীয় বন্দর, জাহাজ ও জলপথ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী শান্তনু ঠাকুর ছবি: সংগৃহীত

ভারতীয় অংশের প্রস্তুতি

মায়া-সুলতানগঞ্জ পণ্য পরিবহন চালুর উদ্দেশে ভারতের রাজস্ব বিভাগ ২০২৩ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর এসআরও জারি করে মায়াকে নৌরুট হিসেবে ঘোষণা করেছে। পাশাপাশি কলকাতা কাস্টমস বিভাগও মায়াকে এলসি স্টেশন হিসেবে ঘোষণা করেছে। এ ছাড়াও ভারতীয় শুল্ক বিভাগ ২০২৩ সালের ৪ ডিসেম্বর মায়া পোর্ট অব কলের শুল্কায়ন কার্যক্রমের সীমানা নির্ধারণ করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে।

এখানে উল্লেখ্য যে, মায়া পোর্ট অব কলের সীমানাধীন এলাকায় ভারতের অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (আইডব্লিউএআই) নিজস্ব কোনো জমি নেই। তবে উভয় দেশের মধ্যে নৌযান পরিচালনা করে মায়া প্রান্তে বাণিজ্য করার জন্য ভারতীয় কয়েকটি আগ্রহী প্রতিষ্ঠান স্থানীয় জমির মালিকদের কাছ থেকে জমি লীজ নিয়েছে। মেসার্স জিম্যাক্স ইন্টারন্যাশনাল ৯ একর এবং মেসার্স রাজেশ অটো মার্চেনডাইজ প্রাঃ লিঃ ৮ একর জমি লীজ নিলে আইডব্লিউএইআই প্রতিষ্ঠান দুটির সাথে জেটি নির্মাণ, অফিস ভাবন নির্মাণ এবং সর্বোপরি বৈদেশিক ও স্থানীয় বাণিজ্য পরিচলনার জন্য চুক্তি করেছে। চুক্তি অনুযায়ী, মায়া পোর্ট অব কলে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যিক পণ্য লোড ও আনলোডের জন্য জমির ব্যবস্থা, অফিস ভবন নির্মাণ এবং সর্বোপরি হ্যান্ডলিং কার্যক্রমের আধুনিক ইকুইপমেন্ট স্থাপন বেসরকারি খাতে ছেড়ে দিয়েছে। মেসার্স জিম্যাক্স ইন্টারন্যাশনাল এবং মেসার্স রাজেশ অটো মার্চেনডাইজ প্রাঃ লিঃ মায়ায় এরই মধ্যে অবকাঠামো নির্মাণ এবং পণ্য হ্যান্ডলিং ইকুইপমেন্ট স্থাপন করেছে।

সম্ভাবনা অবারিত

অদূর ভবিষ্যতে পুরো প্রটোকল রুটটি অর্থাৎ ধুলিয়ান/মায়া (ভারত)-আরিচা (বাংলাদেশ) চালু হলে আমদানি-রপ্তানিকারকরা ভারতীয় পণ্য ধুলিয়ান/মায়া থেকে সরাসরি ঢাকা/নারায়ণগঞ্জে পাঠাতে আগ্রহী হবেন। কেননা কলকাতা-মোংলা-বরিশাল-চাঁদপুর-নারায়ণগঞ্জ/ঢাকার দূরত্ব ৯১০ কিলোমিটার এবং দীর্ঘ এই পথ পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশের আনুমানিক ৫০০ থেকে ৫৫০টি কার্গো জাহাজ পণ্য পরিবহন করছে। অন্যদিকে মায়া-সুলতানগঞ্জ- রাজশাহী-ঈশ^রদী-আরিচা-নারায়ণগঞ্জ/ঢাকার দূরত্ব মাত্র ৬১০/৬২০ কিলোমিটার। তাই প্রটোকল রুট নং-৫ ও ৬ দিয়ে বাংলাদেশে আমদানি-রপ্তানি করা হলে কমপক্ষে ৩০০ কিলোমিটার অর্থাৎ আপ ও ডাউনে অন্তত ৬০০ কিলোমিটার পথ কমে যাবে।

এসব সম্ভাবনার কথা বিবেচনায় নিয়ে এবং প্রটোকলের আওতাভুক্ত সুলতানগঞ্জ/প্রেমতলী, গোদাগাড়ী পোর্ট অব কল এবং তৎসংলগ্ন এলাকাসমূহ সরেজমিন পরিদর্শন শেষে কমিটি বেশ কিছু সুপারিশ করেছে। সুপারিশগুলো হলোÑ

● জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সম্মতি অনুযায়ী বাংলাদেশ-ভারত দ্বিপাক্ষিক নৌ-বাণিজ্যের স্বার্থে প্রটোকল রুট নং-৫, ৬ (আরিচা-রাজশাহী-গোদাগাড়ী/সুলতানগঞ্জ-মায়া-ধুলিয়ান) এর আংশিক সুলতানগঞ্জ (বাংলাদেশ)-মায়া (ভারত) নৌ প্রটোকল রুটটিতে নৌযানের ট্রায়াল রান কার্যক্রম গ্রহণ করা।

● আলোচ্য ট্রায়াল রানের শুল্কায়ন কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় এবং বিআইডব্লিউটিএর পক্ষ থেকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে অনুরোধ করা।

● আরিচা-রাজশাহী-গোদাগাড়ী/সুলতানগঞ্জ-মায়া-ধুলিয়ান নৌ প্রটোকল রুটটির একাংশের শুধুমাত্র ২০ কিলোমিটার দূরত্বের সুলতানগঞ্জ-মায়া রুটটিতে এখনই স্বল্প নাব্যতার নৌযানের পাঁচটি ট্রায়াল রানের পর এই রুটে নিয়মিতভাবে নৌযান পরিচালনার ব্যবস্থা করা।

● প্রথমিক পর্যায়ে ট্রায়াল রান কার্যক্রম পরিচালনাকালীন এবং পরবর্তীতে সুলতানগঞ্জ পোর্ট অব কলে কর্তৃপক্ষের পক্ষে হ্যান্ডলিং ঠিকাদার নিয়োগ না হওয়া পর্যন্ত কর্তৃপক্ষের কর্মচারীর মাধ্যমে অথবা স্পট কোটেশনের মাধ্যমে সুলতানগঞ্জ পোর্ট অব কলে শুল্ক আদায় করা।

● সুলতানগঞ্জ ঘাট এলাকায়/বেসিন এলাকায় এবং সুলতানগঞ্জ-মায়া ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ নৌপথটি খনন/সংরক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণসহ এইডস টু নেভিগেশনের সকল কার্যক্রম গ্রহণের বিষয়ে কর্তৃপক্ষকে উদ্যোগ নিতে হবে।

● সুলতানগঞ্জ পোর্ট অব কল-এ নৌবাণিজ্যিক কার্যক্রম পরিচালনা ও পণ্য হ্যান্ডলিংয়ের জন্য কোনো ধরণের অবকাঠামো ও ইকুইপমেন্ট না থাকায় প্রয়োজনীয় জমির সংস্থানসহ অবকাঠামো নির্মাণ এবং যন্ত্রপাতি স্থাপন করতে বড় অংকের বিনিয়োগ প্রয়োজন। কিন্তু এই বিনিয়োগ যাতে ঝুঁকিতে না পড়ে সেজন্য সুলতানগঞ্জ পোর্ট অব কলে আমদানি-রপ্তানি পণ্য হ্যান্ডলিংয়ের জন্য এক্সপ্রেশন অব ইনভেস্টমেন্ট (ইওআই) আহ্বান করে দীর্ঘমেয়াদী অপারেশন অ্যান্ড মেইনটেন্যান্স (ওঅ্যান্ডএম) পদ্ধতি অনুসরণে উন্মুক্ত দরপত্র আহবান পূর্বক একটি যোগ্য প্রতিষ্ঠান নির্বাচন ও নিয়োগ দেওয়া যেতে পারে। নির্ধারিত ওই প্রতিষ্ঠানকে চিহ্নিত ৩ দশমিক ৬৫৮৮ একর ও ১৬ দশমিক ২৫৮২ একর জমি পৃথকভাবে অথবা বিআইডব্লিউটিএ পুনর্নির্ধারিত ন্যূনতম ১৫-২০ একর জমি নিজস্ব উদ্যোগে ও ব্যয়ে ব্যবস্থা (জমি লীজ, ভাড়া বা বন্দোবস্ত) করতে হবে। সেই সাথে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ করবে। সুলতানগঞ্জ পোর্ট অব কলে পণ্য হ্যান্ডলিংয়ের সব ধরনের অপারেশনাল কার্যক্রমের ক্ষেত্রে বিআইডব্লিউটিএর সাথে রাজস্ব ভাগাভাগির একটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সম্পাদন করতে হবে।

ছয় দশকের অপেক্ষার অবসান

পদ্মা ও মহানন্দা নদীর মোহনায় অবস্থিত রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার সুলতানগঞ্জ থেকে ভারতের মুর্শিদাবাদের মায়া নদীবন্দর পর্যন্ত নৌপথটি ছিল এক সময় ব্যস্ততম নৌপথ। পণ্যবাহী নৌযান চলাচল করত নিয়মিত। কিন্তু ১৯৬৫ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের পর বন্ধ হয়ে যায় সুলতানগঞ্জ-মায়া নৌপথটি। পরবর্তীতে দুই দেশের বাণিজ্যিক স্বার্থ বিবেচনা করে নৌপথটি আবার চালুর সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। তারই অংশ হিসেবে গত ১২ ফেব্রুয়ারি রাজশাহীর সুলতানগঞ্জ এবং মুর্শিদাবাদের মায়া পর্যন্ত নৌপথে পণ্যবাহী নৌযান চলাচল আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয়।

নৌপথটি উদ্বোধনের পর বিআইডব্লিউটিএ আয়োজিত সুধী সমাবেশে বক্তারা বলেন, বাংলাদেশ-ভারত বন্ধুত্ব প্রতিদিনই নতুন উচ্চতা পাচ্ছে। সুলতানগঞ্জ-মায়া নৌপথটি চালু তারই প্রতিফলন।

রাজশাহীর সুলতানগঞ্জ থেকে মুর্শিদাবাদের মায়া পর্যন্ত নৌপথের দৈর্ঘ্য মাত্র ২০ কিলোমিটার ছবি: সংগৃহীত

নৌপথটি দিয়ে এখন ভারত থেকে কম খরচে ও সহজে পাথর আমদানি করা সম্ভব হবে বলে জানিয়ে তারা বলেন, শুষ্ক মৌসুমে এই নৌপথটির নাব্যতা সংকট থাকলেও মাত্র ২০ কিলোমিটার দূরত্বের সুলতানগঞ্জ-মায়া নৌপথে সারাবছরই কম ড্রাফটের নৌযান চলাচল করতে পারে। কম ড্রাফটের এসব নৌযান দিয়ে সারাবছলই উভয় দেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য পরিচালনা করা সম্ভব।

বক্তারা বলেন, পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদের ধুলিয়ান থেকে নৌপথটি গোদাগাড়ীর সুলতানগঞ্জ, রাজশাহী ও পাকশী হয়ে আরিচা ঘাট পর্যন্ত গেছে। দীর্ঘদিন এটির ব্যাপারে কোনো উদ্যোগ ছিল না। অবশেষে রুটটি চালু হলো। প্রথম পর্যায়ে সুলতানগঞ্জ-মায়া নৌপথে নৌযান চলাচলের শুরু হলো। পরবর্তীতে এটি রাজশাহী হয়ে আরিচা পর্যন্ত যাবে। রাজশাহী নগরীতে নদীবন্দর স্থাপন করা হবে। এর মাধ্যমে রাজশাহীর অর্থনীতি গতিশীল হবে, অনেক কর্মসংস্থান হবে।

সুলতানগঞ্জ নদীবন্দর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের পর সাড়ে ১১ মেট্রিক টন গার্মেন্টস ঝুট কাপড় নিয়ে ভারতের মায়া বন্দরের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে এমবি সাইফ সিয়াম শাফিন নামে একটি নৌযান। একই দিন দুপুর ১২টায় ভারতের ১০০ মেট্রিক টন পাথর নিয়ে মুর্শিদাবাদের মায়া নদীবন্দর থেকে দেশবাংলা নামে একটি নৌযান সুলতানগঞ্জের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে।

কমবে দূরত্ব

সুলতানগঞ্জ ও মায়াকে পোর্ট অব কল ঘোষণা করায় দুই দেশের সীমান্তে নদী বন্দর নির্মাণ করা হবে। বাংলাদেশের ভেতরে সুলতানগঞ্জ আর ভারতের ভেতরে মায়া নদীবন্দরে পরিণত হবে। রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জ মহাসড়ক থেকে এক কিলোমিটার ভেতরে পদ্মা ও মহানন্দার মোহনায় সুলতানগঞ্জ নৌঘাট অবস্থিত। আর এই সুলতানগঞ্জ থেকে মায়া নৌঘাটের দূরত্ব মাত্র ২০ কিলোমিটার।

একই সাথে পদ্মা-মহানন্দার মোহনায় সারা বছরই পানি থাকে। ফলে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মায়া ও রাজশাহীর সুলতানগঞ্জের মধ্যে পণ্যবাহী জাহাজ বা নৌযান চলাচলে সময় লাগবে মাত্র এক ঘণ্টা। দুই দেশের মধ্যকার দূরত্ব কমবে ১২০ কিলোমিটার। রুটটিতে সারা বছরই কম ড্রাফটের নৌযান দিয়ে দুই দেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য পরিচালনা করা সম্ভব হবে।

আমদানি হবে যেসব পণ্য

রুটটি ব্যবহার করে যেসব পণ্য আনা-নেওয়া করা যাবে তার প্রজ্ঞাপন জারি করেছে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। এই রুটে ভারত থেকে গবাদি পশু, মাছের পোনা, তাজা ফলমূল, গাছ-গাছড়া, বীজ, গম, পাথর, কয়লা, রাসায়নিক সার, চায়না ক্লে, কাঠ, চুনাপাথর, পেঁয়াজ, মরিচ, রসুন, আদাসহ ১৯ ধরনের পণ্য আমদানি করা হবে। তবে রপ্তানি করা যাবে সব ধরনের পণ্য।

কম খরচে নির্মাণ উপকরণ আমদানির সুযোগ

বর্তমানে দেশে অবকাঠামো উন্নয়নের ব্যাপক কর্মযজ্ঞ চলছে। এই অবকাঠামো নির্মাণের প্রধান উপাদান হলো পাথর। বর্তমানে দেশের অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে যে পাথর পাওয়া যায় তা দিয়ে ৫ শতাংশ চাহিদাও পূরণ হয় না। বাধ্য হয়ে বিপুল পরিমাণ পাথর আমদানি করতে হয়। এসব পাথর আমদানির উৎস দেশ হিসেবে রয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাত, ভিয়েতনাম, ওমান, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া ও ভারত। এসব দেশ থেকে মাদার ভেসেলের মাধ্যমে সমুদ্রবন্দর দিয়ে পাথর আমদানি করতে টনপ্রতি খরচ হয় প্রায় ২০ মার্কিন ডলার। এর মধ্যে ভারত থেকে কয়েকটি স্থলবন্দর দিয়ে সিঅ্যান্ডএফের মাধ্যমে পাথর আমদানিতে খরচ হয় ১৩ মার্কিন ডলারের মতো। উভয় দেশের স্থলবন্দরগুলোর অবকাঠামো অত্যন্ত নাজুক হওয়ার কারণে পর্যাপ্ত পাথর সরবরাহ করা সম্ভব হয় না। এ ছাড়াও খাদ্যদ্রব্য এবং অন্যান্য বহুবিধ পণ্য স্থলবন্দরগুলো দিয়ে অগ্রাধিকারভিত্তিতে আমদানি করা হচ্ছে। তাই চাহিদামত পাথর আমদানি করা যায় না। বাংলাদেশ থেকে ঋণপত্র (এলসি) পাঠানো হলেও এক/দেড় মাসের আগে পাথর আমদানির কোনো স্লট পাওয়া যায় না। চাহিদা অনুযায়ী আমদানি করাও সম্ভব হয় না। তাই বাধ্য হয়ে অন্যান্য দেশ থেকে দ্বিগুণ বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় করে পাথর আমদানি করতে হয়। ভারতের সবচেয়ে বড় ও উন্নতমানের পাথরের উৎস পাকুর, ঝাড়খন্ড, নলহাটি, রাজগ্রাম এবং পশ্চিমবঙ্গের অন্যান্য পাথরের উৎস থেকে বাংলাদেশের স্থলবন্দরের দূরত্ব অনেক বেশি। সেক্ষেত্রে ভারতের মায়া থেকে গোদাগাড়ী, সুলতানগঞ্জের দূরত্ব নৌপথে মাত্র ২০ কিলোমিটার। এই রুটে এফওবি ৯-১০ মার্কিন ডলারে পাথর আমদানি করা সম্ভব হবে এবং বাংলাদেশের কার্গো/জাহাজে ওই পাথর দেশীয় মুদ্রায় পরিবহন করাও সম্ভব হবে।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের তথ্যভান্ডার থেকে প্রাপ্ত উপাত্ত অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ১ মার্চ থেকে ১০ মে পর্যন্ত মাত্র আড়াই মাসে চট্টগ্রাম ও অন্যান্য সমুদ্রবন্দর দিয়ে ৩৪ লাখ ৯৯ হাজার ৩৮২ টন পাথর আমদানি হয়েছে, যার মূল্য ৬ কোটি ৯১ লাখ ৭ হাজার ৬৬৩ মার্কিন ডলার। আলোচ্য নৌরুটটি দিয়ে পাথর আমদানি করা হলে বড় অংকের অর্থ সাশ্রয় হবে। পাশাপাশি সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের নির্মাণ ব্যয়ও কমবে। এতে বৈদেশিক মুদ্রার মজুদের ওপর চাপ হ্রাস পাবে।

সুলতানগঞ্জ-মায়া রুটে আমদানির সময় স্থানীয় মুদ্রা ব্যবহার করায় ব্যয় আরও কমে যাবে। নির্মাণ উপকরণ পাথর আমদানির ব্যয় কমে যাওয়ায় অবকাঠামো নির্মাণ ব্যয়ও হ্রাস পাবে। সর্বোপরি নদীবন্দরটিতে স্থানীয় লোকজনের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here