নদীর সীমানা নির্ধারণ করে যে খুঁটি বসানো হয়েছে, সেই সীমানার মধ্যে কারো স্থাপনা থাকলে তা অবশ্যই সরাতে হবে বলে জানিয়েছেন নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহামুদ চৌধুরী এমপি। সচিবালয়ে ১৫ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়েট রিপোর্টার্স ফোরামের (বিএসআরএফ) সংলাপে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, নদীর পাড়ে অনেক ভারী শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। এ জন্য তাদের কিছুটা সুযোগ দিতে চাই। কারণ এক সময় অনেকে ভাবেননি নদীরও নিজস্ব জায়গা আছে। এ ভাবনার জায়গাটা তৈরির দায়িত্ব ছিল রাষ্ট্রের। রাষ্ট্র অনেক দিন সেই জায়গাটা তৈরি করেনি। নদীর সীমানা পিলারের মধ্যে যেসব প্রতিষ্ঠান রয়েছে ভবিষ্যতে তাদের প্রতিষ্ঠান সরাতে হবে। আমরা পিলার বসাচ্ছি। পিলার বসানোর ক্ষেত্রে কোনো আপস করা হয়নি। কাজ করতে অনেক চ্যালেঞ্জ থাকে। আমাদের সদিচ্ছা, সাহস ও প্রেরণা আছে।
শুধু রাঘববোয়াল নয়, সাধারণ মানুষও নদী দখল করে আছেন জানিয়ে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী বলেন, সাধারণ মানুষ হয়তো জানেনই না যে তারা নদী দখল করে আছেন। অনেকে নদীর ২০০ ফুট ভেতরে চলে গেছেন অসাবধানতার কারণে। জোর যার মুল্লুক তার ছিল। এখন আর তা নেই।
ক্ষতিগ্রস্ত সাধারণ মানুষ সরকারের কাছে আবেদন করলে ঘর নির্মাণ করে দেওয়া হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, যারা শিল্পপ্রতিষ্ঠান নির্মাণ করেছেন তাদের আমরা সুযোগ দিয়েছি। তাঁরা সুযোগের সঠিক মূল্যায়ন না করলে অনেক কঠিন পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হতে পারে।
নদীর জায়গায় স্থাপনা নির্মাণ করে অনেক শিল্পপ্রতিষ্ঠান বিনিয়োগ করেছে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, নদীতে থাকা এসব প্রতিষ্ঠান হঠাৎ বন্ধ করে দিলে তাঁরা যেসব পণ্য উৎপাদন করে সেগুলোর দাম বেড়ে যাবে। তার মানে এই নয় যে আমরা তাদের সাথে আপস করেছি। নারায়ণগঞ্জে অনেকগুলো রুগ্ণ শিল্প ছিল, যেগুলো অল্পদামে বিনিয়োগকারীদের কাছে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল। এখন সেগুলো আবাসিক প্লটে পরিণত করা হয়েছে। যে মানুষটি সেখানে ফ্ল্যাট কিনেছেন তার কি অপরাধ? এসব দেখা রাষ্ট্রের দায়িত্ব ছিল। সেই দায়িত্ব রাষ্ট্র পালন করেনি বলে এই সরকারের ওপর এখন বিরাট বোঝা পড়েছে। আমরা বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি না করে ধারাবাহিকভাবে সমাধানের চেষ্টা করছি। কোনো আপস করছি না।
খালিদ মাহামুদ বলেন, শুধু নদীর জায়গা নয়, যেকোনো অবৈধ দখলে সরকারের জিরো টলারেন্স নীতি। ঢাকার চারপাশের নদীর পাশ থেকে অবৈধ দখলদারদের এখনো পুরোপুরি উচ্ছেদ করা হয়নি। কিছু মামলা-মোকদ্দমা আছে, সেগুলো নিয়ে আইনজীবীরা কাজ করছেন। সফলতা দেখাতে পারব বলে আমরা আশাবাদী।
নৌপথগুলো সচল করতে বিনিয়োগ করা হয়েছে জানিয়ে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী বলেন, ড্রেজিং হচ্ছে। এর সুফলটাও আমরা পেতে শুরু করেছি। অতিবৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পানি এবার বন্যায় রূপ নেয়নি। পানির প্রবাহ নিশ্চিত হয়েছে। ১০ হাজার কিলোমিটার নৌপথ তৈরি ও নদীকে ঘিরে সরকারের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে পারলে বন্যা ও নদীভাঙন থেকে রক্ষা পাব।
তিনি বলেন, নদী শাসন নয়, সঠিকভাবে নদী ব্যবস্থাপনা করার নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। বিআইডব্লিউটিসি ২০২৩ সালের মধ্যে ২৮০ কোটি টাকায় তিনটি ক্রুজ শিপ সংগ্রহ করবে। এসব শিপে থ্রিডি সিনেমা হল, জিম, সুইমিংপুল, হেলিপ্যাডসহ সব ধরনের সুবিধা থাকবে।