বিআইডব্লিউটিএ নিয়মিত প্রকাশনা

বুধবার, জানুয়ারি ২২, ২০২৫
17 C
Dhaka

বিআইডব্লিউটিএ নিয়মিত প্রকাশনা

খুলনা নদীবন্দর: দেশের অন্যতম প্রাচীন বন্দর

১৯৬০ সালে পাঁচটি নদীবন্দরের গেজেট প্রকাশিত হয়। খুলনা নদীবন্দর তার অন্যতম। সর্বশেষ ২০০৪ সালের ১৯ অক্টোবর নদীবন্দরটির সীমানা পুনর্নির্ধারণ করে গেজেট বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়।

নদীমাতৃক দেশ হিসেবে বাংলাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থায় নদীর অবস্থান কেন্দ্রভাগে। নৌপথে যাত্রী ও পণ্য পরিবহনের জন্য প্রয়োজন পড়ে নদীতীরে জুতসই অবকাঠামো। সেই প্রয়োজন থেকেই এ অঞ্চলে গড়ে ওঠে নদীবন্দর, যার ইতিহাস বেশ পুরনো। বাংলায় নদীবন্দরের উল্লেখ পাওয়া যায় গ্রিক পণ্ডিত টলেমির মানচিত্রে, যা তাম্রলিপ্তি বা তাম্রলিপ্ত বন্দর নামে পরিচিত। পরবর্তী সময়ে গুরুত্বপূর্ণ নদীর কিনারে কিনারে আরও অনেক নদীবন্দর গড়ে উঠেছে।

অষ্টাদশ শতকে ইংরেজ শাসন প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর প্রশাসনিকভাবে কলকাতা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। কলকাতা এবং হুগলিতে গড়ে ওঠা বন্দরগুলোর সাথে পূর্ব বাংলার বাণিজ্যের প্রয়োজনে একইভাবে নারায়ণগঞ্জ, চাঁদপুর, বরিশাল, মাদারীপুর, খুলনা ও গোয়ালন্দেও বন্দর গড়ে ওঠে। স্বাভাবিকভাবেই এসব স্থানে নদীবন্দরের পত্তন হয় এবং ক্রমেই এগুলোর গুরুত্ব বাড়তে থাকে। তবে আসামের সাথে যোগাযোগে সিরাজগঞ্জ ও চিলমারী বন্দরের গুরুত্বও কম ছিল না। উনিশ শতকের দ্বিতীয় ভাগে বাষ্পচালিত নৌযানের পরিসর বাড়লে যাত্রী ও পণ্য ওঠানামার প্রয়োজনেই নদীবন্দরের চাহিদা বাড়তে থাকে। চাহিদা ও সহজগম্যতার কথা বিবেচনায় রেখে সেই ধারাবাহিকতা এখনো চলছে।

বর্তমানে সরকারের গেজেটভুক্ত নদীবন্দর রয়েছে ৩৪টি। এগুলোর অন্যতম হলো খুলনা নদীবন্দর, যার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। নদীবন্দরটির অবস্থান দক্ষিণাঞ্চলের খুলনা বিভাগের খুলনা জেলায়। মোংলা বন্দর থেকে নদীপথে দেশের বিভিন্ন স্থানে পণ্য পরিবহনের গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত হয় নদীবন্দরটি। স্বাভাবিকভাবেই নদীবন্দরটি গুরুত্বের কথা আলাদা করে বলতে হয়।

খুলনা নদীবন্দরের গেজেট প্রকাশিত হয় ১৯৬০ সালে। ওই বছরের ১২ সেপ্টেম্বর গেজেট নোটিফিকেশনের মাধ্যমে পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর পোর্টস অ্যাক্ট, ১৯০৮-এর সেকশন ৩-এর ক্লজ ৯-এর সাব-সেকশন ৭-এ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে ইস্ট পাকিস্তান ইনল্যান্ড ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট অর্ডিন্যান্স, ১৯৫৮-এর সেকশন ৩-এর আওতায় খুলনা নদীবন্দরের কর্তৃত্ব পূর্ব পাকিস্তান অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের (ইপিআইডব্লিউটিএ) কাছে ন্যস্ত করেন। ১৯৬০ সালের ১ সেপ্টেম্বর থেকে এ আদেশ কার্যকর বলে গেজেট নোটিফিকেশনে উল্লেখ করা হয়।

সেই সাথে পোর্টস অ্যাক্ট, ১৯০৮-এর সেকশন ৪-এর সাব-সেকশন ২-এ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে নদীবন্দরের সীমানাও নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। উত্তর দিকে ভৈরব ও মুজুদ খালি নুলা বরাবর ২২০-২৫′-৪৫″ অক্ষাংশে পূর্ব ও পশ্চিমে একটি রেখা টানা হয়েছ। দক্ষিণ দিকে ২২০-৪৬′-৪০″ অক্ষাংশে রূপসা নদী বরাবর পূর্ব ও পশ্চিমে একটি রেখা টানা হয়েছে। পূর্বদিকে সীমানা চিহ্নিত করা হয়েছে স্বাভাবিক জোয়ারে ভৈরব ও রূপসার তীর থেকে হাই ওয়াটার মার্কের ৫০ গজ পর্যন্ত। পশ্চিম দিকেও স্বাভাবিক জোয়ারে ভৈরব ও রূপসার তীর থেকে হাই ওয়াটার মার্কে ৫০ গজ পর্যন্ত নদীবন্দরটির সীমানা নির্ধারণ করা হয়েছে।

এক দশক ধরে খুলনা নদীবন্দরে যাত্রী পরিবহন স্বাভাবিক নিয়েমে বাড়লেও ২০১৮-১৯ অর্থবছরে কার্গো পরিবহনে বড় ধরনের উল্লম্ফন ঘটে। ওই অর্থবছরে নদীবন্দরটিতে কার্গো পরিবহন ৫৭০ শতাংশের বেশি বৃদ্ধি পায়। পরের অর্থবছরও কার্গো পরিবহনে প্রবৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রাখে নদীবন্দরটি। ২০১৯-২০ অর্থবছরে খুলনা নদীবন্দর দিয়ে সাকল্যে ৫ লাখ টনের বেশি কার্গো পরিবাহিত হয়। এছাড়া যাত্রী পরিবাহিত হয় ১৮ লাখ ৪৩ হাজার। অর্থাৎ কোভিড-১৯ মহামারির মধ্যেও ২০১৯-২০ অর্থবছরে নদীবন্দরটি দিয়ে যাত্রী ও কার্গো পরিবহনে সেইভাবে নেতিবাচক কোনো প্রভাব পড়েনি।

অর্থনৈতিক গুরুত্ব

ঢাকা ও চট্টগ্রামের পর দেশের তৃতীয় বৃহত্তম নগরী খুলনায় শিল্প-কারখানার পত্তন অনেক আগেই। এই শিল্পায়নে প্রভাবক হিসেবে কাজ করেছে এখানকার নদ-নদী তথা বন্দর। এই বিবেচনায় সেই ষাটের দশকেই খুলনা নদীবন্দরটি গড়ে তোলা হয়। ব্যবসায়ীরা এই বন্দর ব্যবহার করে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় পণ্য পাঠিয়ে থাকেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here