ব্রহ্মপুত্র অববাহিকার নৌপথ দিয়ে ভারত-ভুটান-বাংলাদেশের মধ্যে বাণিজ্যের যে সম্ভাবনা তা কাজে লাগাতে বেসরকারি খাতকেই নেতৃত্ব দিতে হবে। ১৩ এপ্রিল অক্সফাম ইন্ডিয়া আয়োজিত ইন্দো-ভুটান-বাংলাদেশ কনসালটেশন অন ট্রেড অ্যান্ড ইনল্যান্ড ওয়াটারওয়েজ নেভিগেশন ইন দ্য ব্রহ্মপুত্র বেসিন’ শীর্ষক এক ওয়েবিনারে এই অভিমত ব্যক্ত করেন বিশেষজ্ঞরা। ওয়েবিনার আয়োজনে সহযোগিতা করে গবেষণা প্রতিষ্ঠান কাটস ইন্টারন্যাশনাল ও অক্সফাম বাংলাদেশ।
ওয়েবিনারটি সঞ্চালনা করেন কাটস ইন্টারন্যাশনালের নির্বাহী পরিচালক বিপুল চ্যাটর্জী। বক্তব্য রাখেন প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক (প্রোগ্রাম অ্যান্ড অ্যাডভোকেসি) পঙ্কজ আনন্দ। তিনি বলেন, বাংলাদেশ, ভুটান ও ভারতের মধ্যে বাণিজ্যের বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। বাণিজ্য বৃদ্ধির এই সুফল সীমান্তের উভয পাশের প্রান্তিক মানুষদের কাছে পৌঁছাতে হবে।
বাংলাদেশ, ভুটান ও ভারতের ৬০ জনের বেশি বক্তা ওয়েবিনারটিতে অংশ নেন। আসামের গুয়াহাটিতে বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনার তানভীর মনসুর ট্রেড বাস্কেট শক্তিশালী করার পাশপাশি একে সম্প্রসারিত করার ওপর জোর দেন। তিনি বলেন, বাণিজ্যকে সম্ভব করা ও বাণিজ্য সম্পাদন করা দুটি আলাদা বিষয়। বাজারের চাহিদা বিশ্লেষণ করে সরবরাহ শৃঙ্খল উন্নত করতে হবে।
জোগীগোপা ও ধুবড়ি নদীবন্দরের ড্রেজিং, ক্ল্যামশেল ক্রেন, স্টিল জেটি ও পূর্ণাঙ্গ কাস্টম অফিস ও টার্মিনাল সুবিধা উন্নয়নের ওপর জোর দেন ভুটানে গেলেফুর তাসি ওয়াংমো কনসালট্যান্সির দরজি নোরবু। চট্টগ্রাম, মোংলা ও পায়রা বন্দরে পোর্টস-অব-কল সম্প্রসারণের ওপরও গুরুত্বারোপ করেন তিনি। বলেন, অভ্যন্তরীণ নৌপথের উন্নয়ন করা গেলে অন্যান্য পণ্যের মতো বাংলাদেশের সাথে ফল ও সবজির বাণিজ্যও সম্ভব। ইনল্যান্ড ওয়াটারওয়েজ অথোরিটি অব ইন্ডিয়ার (আইডব্লিউএআই) পরিচালক (লজিস্টিকস অ্যান্ড ট্রাফিক) এ কে বানসাল বলেন, শিল্প মালিকদের অভ্যন্তরীণ নৌপথের সুবিধা কাজে লাগানো উচিত। তাদের উচিত তাদের পণ্যের একটা অংশ অভ্যন্তরীণ নৌপথে পরিবহন করা।
কোভিড-১৯ মহামারির কারণে যোগাযোগের অন্যান্য মাধ্যম বন্ধ থাকার সময় নিরাপদ মাধ্যম হয়ে ওঠে অভ্যন্তরীণ নৌপথ। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের উদ্যোগ ও পরিকল্পনা এবং কোভিডের মধ্যেও নৌপথে বাণিজ্য কীভাবে টেকসই সেটি ব্যাখ্যা করেন সংস্থাটির উপপরিচালক শর্মিলা খানম। এ কে বানসাল ও শর্মিালা খানমের বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে বিপুল চ্যাটার্জী বলেন, ব্যবসায়ীরা যাতে অভ্যন্তরীণ নৌপথ কাজে লাগাতে পারেন সেজন্য বিদ্যমান অবকাঠামো ও আইন-কানুন সম্পর্কে তাদের অবগত থাকা জরুরি।
ওয়েবিনারে ব্যবসায়ীদের বিষয়গুলো তুলে ধরেন এক্সপোর্ট অ্যান্ড ইমপোর্ট বিজনেস অ্যাসোসিয়েশন, রৌমারির সদস্য চান মিয়া এবং ভারতের দক্ষিণ সালমারা-মানকাচর ইমপোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য আশরাফ আলি। দুজনেই বলেন, স্থানীয়দের বিশেষ করে নারীদের তৈরি হস্তশিল্প ও কৃষি পণ্য রপ্তানির আওতায় আনা গেলে নদী তীরবর্তী মানুষের জীবন-জীবিকা উন্নত হবে। অভ্যন্তরীণ নৌপথ দিয়ে বাণিজ্য বাড়াতে বিদ্যমান অবকাঠামো উন্নয়নে কর্মকর্তাদের প্রতি আহ্বান জানান তারা।