বিআইডব্লিউটিএ নিয়মিত প্রকাশনা

বৃহস্পতিবার, জানুয়ারি ২৩, ২০২৫
17 C
Dhaka

বিআইডব্লিউটিএ নিয়মিত প্রকাশনা

বরিশাল নদীবন্দর : দেড় শতাব্দী পুরনো বন্দর

কীর্তনখোলা নদীর তীরে গড়ে ওঠা বরিশাল নদীবন্দর দেশের ব্যস্ততম নদীবন্দরগুলোর অন্যতম। ঢাকা বরিশালের পাশাপাশি চাঁদপুর, নারায়ণগঞ্জ, ভোলা, লক্ষ্মীপুর, পিরোজপুর, বরগুনাসহ দেশের দক্ষিণাঞ্চলের বেশির ভাগ জেলার মধ্যে নৌপথে যোগাযোগের কেন্দ্র হিসেবে কাজ করে দেড়শ বছরের পুরনো বন্দরটি।

বাণিজ্যকেন্দ্র হিসেবে বরিশালের খ্যাতি সেই ১৭ শতকেই। এর পরিচিতি তখনো গিরদে বন্দর নামে, যেখানে প্রথমে মোলঙ্গী বা লবণ ব্যবসায়ী ও জেলেরা বাস করত। মুঘল আমলে এই লবণ ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে নিয়মিত শুল্ক আদায় করা হতো। লবণ ব্যবসায়ীরা প্রথমে এখানে লবণ গোলাজাত করে রাখতেন এবং পরবর্তী সময়ে তা বিভিন্ন স্থানে রফতানি করতেন।

১৮৬৯ সালে শহর কমিটি গঠনের পর এটি বরিশাল রিভার স্টেশনে রূপান্তরিত হয়। ১৮৮৪ সালে বেঙ্গল সেন্ট্রাল ফ্লোটিলা কোম্পানি বরিশাল ও খুলনার মধ্যে নিয়মিত স্টিমার সার্ভিস চালু করে। ব্রিটিশ আমলেই কলকাতার সাথে বাংলার উত্তর ও পূর্বাঞ্চলের যোগাযোগের ক্ষেত্রে ইন্ডিয়ান জেনারেল নেভিগেশন, রিভার স্টিম নেভিগেশন ও ইন্ডিয়ান জেনারেল রিভার স্টিমার কোম্পানিজের সদর দপ্তর হয়ে ওঠে বরিশাল রিভার স্টেশনটি। ১৯৪৭ সালে ভারত ভাগের পর পাকিস্তান স্টিমার সার্ভিসেস গঠিত হয় এবং সেবাটি পূর্ব পাকিস্তান অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের (ইপিআইডব্লিউটিএ) কাছে হস্তান্তরিত হয়। এরপর ১৯৬০ সালে রিভার স্টেশনটিকে নদীবন্দরের স্বীকৃতি দিয়ে গেজেট প্রকাশ করা হয়। ওই বছরের ১২ সেপ্টেম্বর পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর পোর্টস অ্যাক্ট, ১৯০৮-এর সেকশন ৩-এর ক্লজ ৯-এর সাব-সেকশন ৭-এ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে গেজেট নোটিফিকেশনের মাধ্যমে ইস্ট পাকিস্তান ইনল্যান্ড ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট অর্ডিন্যান্স, ১৯৫৮-এর সেকশন ৩-এর আওতায় বরিশাল নদীবন্দরের দায়িত্ব ইপিআইডব্লিউটিএ’র কাছে ন্যস্ত করা হয়। ১৯৬০ সালের ১ সেপ্টেম্বর থেকে এ আদেশ কার্যকর বলে গেজেট নোটিফিকেশনে উল্লেখ করা হয়। সেই সাথে পোর্টস অ্যাক্ট, ১৯০৮-এর সেকশন ৪-এর সাব-সেকশন ২-এ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে সীমানা নির্ধারণ করে দেওয়া হয় নদীবন্দরটির।

যাত্রী ও পণ্য পরিবহনের সুবিধার্থে বরিশালসহ পাঁচটি প্রধান নদীবন্দরে স্থায়ী টার্মিনাল ভবন ও অন্যান্য সুবিধা নির্মাণের প্রকল্প হাতে নেওয়া হয় ১৯৬৪ সালেই। তবে বরিশাল নদীবন্দরে প্রকল্পটি আর এগোয়নি এবং ১৯৮০ সালে এসে যা নির্মিত হয় তা হলো অর্ধপাকা ও টিনশেড অবকাঠামো। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর ২০০৯ সালের ১৪ অক্টোবর বরিশাল নদীবন্দরে আধুনিক টার্মিনাল ভবনসহ অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণ প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) অনুমোদিত হয়। প্রকল্পের কাজও শুরু হয় ওই বছরই। কাজ শেষে ২০১২ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টার্মিনাল ভবনটি উদ্বোধন করেন। এর মধ্য দিয়ে নতুন রূপ পায় প্রায় দেড় শতাব্দী পুরনো বরিশাল নদীবন্দর।

নৌপথে যাত্রী চলাচল আরো সহজ ও আরামদায়ক করতে পরবর্তী সময়ে নদীবন্দরের নিয়ন্ত্রণাধীন ৭৫টি ঘাট/পয়েন্ট আগের চেয়ে উন্নত করা হয়েছে। অধিকাংশ ঘাটেই এখন পন্টুন, জেটিসহ আনুষঙ্গিক অন্যান্য সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা রয়েছে। পাশাপাশি বন্দরের পরিচালন কার্যক্রম বিস্তৃত করতে একটি গ্যাংওয়ে সৃষ্টিসহ বন্দরের সীমানা বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। একই সাথে বরিশালে একটি আধুনিক নদীবন্দর ও বহুমুখী ব্যবহারযোগ্য ভবনের পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে, যাতে অর্থায়ন করছে বিশ্বব্যাংক। পাঁচটি নতুন লঞ্চঘাট/পয়েন্ট/খাল-টোলের কাজও ইতোমধ্যেই সম্পন্ন হয়েছে। তবে টার্মিনাল ভবনের সামনে নদীর নাব্যতা সারা বছর সংরক্ষণ করা; ভোলা অঞ্চলে নদীভাঙন ও নদীর গতিপথ পরিবর্তনের কারণে নৌরুটে নৌ-সহায়ক সুবিধাদি স্থাপন ও চালু রাখার মতো কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে, যা অতিক্রম করা গেলে যাত্রী ও পণ্য পরিবহনের রোল মডেল হয়ে উঠবে নদীবন্দরটি।

অর্থনৈতিক গুরুত্ব

কীর্তনখোলা নদীর তীরে গড়ে ওঠা বরিশাল নদীবন্দর দেশের ব্যস্ততম নদীবন্দরগুলোর অন্যতম। ঢাকা ও বরিশালের পাশাপাশি চাঁদপুর, নারায়ণগঞ্জ, ভোলা, লক্ষ্মীপুর, পিরোজপুর, বরগুনাসহ দেশের দক্ষিণাঞ্চলের বেশির ভাগ জেলার মধ্যে নৌপথে যোগাযোগের কেন্দ্র হিসেবে কাজ করে বন্দরটি। বরিশালের পাশ্ববর্তী জেলাগুলোর সাথে নৌ-পরিবহনও পরিচালিত হয় এখান থেকে। মোংলা ও চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরের ট্রানজিট পয়েন্ট হিসেবেও বিবেচিত হয় বন্দরটি। একসময় ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, আসাম ও ত্রিপুরার সাথেও সংযুক্ত ছিল নদীবন্দরটি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here