প্রতি বছর ৫০ লাখের বেশি যাত্রী যাতায়াত করে মুন্সিগঞ্জের মীরকাদিম নদীবন্দর দিয়ে। পণ্য পরিবাহিত হয় প্রতি বছর গড়ে সাড়ে তিন লাখ টনের বেশি। যদিও ২০২০-২১ অর্থবছরে রেকর্ড ৬ লাখ ৪৪ হাজার টন পণ্য হ্যান্ডলিং হয়েছে এই নদীবন্দরে।
নদীবাংলা স্টাফ
দশম শতকের শুরু থেকে ত্রয়োদশ শতক পর্যন্ত প্রাচীন বাংলার রাজধানী ছিল বিক্রমপুর। ত্রয়োদশ শতকে রাজধানী সোনারগাঁয় স্থানান্তরিত হয়। তবে সপ্তদশ শতকে রাজধানী ঢাকায় স্থানান্তরের পরও সোনারগাঁ তার গুরুত্ব দীর্ঘদিন ধরে রেখেছিল। সুলতানী, মুঘল এবং ঔপনিবেশিক আমলে বিক্রমপুরও ব্যবসায়ীদের কাছে ছিল একইভাবে তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ একটাই– ভৌগলিক অবস্থানগত সুবিধা। বিক্রমপুরকে ঘিরে ছিল ধলেশ্বরী, ইছামতী ও মেঘনার মতো নদী এবং এখনো আছে। এ কারণেই তখনকার ব্যবসায়ীদের কাছে ব্যবসার কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল বিক্রমপুর। সুলতানী আমলে বাংলাদেশে যে ৩৭টি কসবা (প্রশাসনিক ইউনিট) ছিল বিক্রমপুর বা মুন্সিগঞ্জের নগর কসবা তার মধ্যে অন্যতম। এখান থেকে সোনারগাঁর সাথে বাণিজ্যে সেই সময় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে মুন্সিগঞ্জের মীরকাদিম। এখানকার কমলা ঘাট ও কাঠপট্টি ঘাট নৌ ট্রানজিট হিসেবে ব্যবহৃত হতো। বড় ধরনের জোয়ারের সময় নৌকাগুলোও নোঙর করত এসব ঘাটেই। তাই এটা বললে অত্যুক্তি হবে না যে, কাঠপট্টি লঞ্চঘাট ও কমলা ঘাটের মতো স্থানগুলো বিক্রমপুরকে ব্যবসাকেন্দ্র ও এলিট ব্যবসায়ীদের বসবাসের ক্ষেত্র তৈরি করে দিয়েছিল।
কাঠপট্টি লঞ্চঘাট ও কমলা ঘাটের ধারাবাহিকতাই এখন বহন করছে মীরকাদিম নদীবন্দর। স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে সুলতানী আমলের নগর কসবাকে। তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে ওই অঞ্চলের লোকজনের যাতায়াত ও পণ্য পরিবহনে।
সীমানা
২০০৪ সালের ২৯ এপ্রিল মীরকাদিম নদীবন্দরের প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। নদীবন্দরটির গেজেট প্রকাশিত হয় ২০০৪ সালের ৫ মে। একই সাথে পোর্টস অ্যাক্ট, ১৯০৮-এর সেকশন ৪-এর সাব-সেকশন ২-এর ক্লজ (এ)-এর সাব-সেকশন ২-এ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে নদীবন্দরটির সীমানা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়।
গেজেট নোটিফিকেশন অনুযায়ী, নদীবন্দরটির উত্তর সীমানা নির্ধারণ করা হয়েছে বিজিমাউথের কাছে বুড়িগঙ্গা নদীর আড়াআড়ি উত্তর-দক্ষিণ বরাবর ৯০°-২৭′-২৬″ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। দক্ষিণ সীমানা নির্ধারণ করা হয়েছে চরহোগলার কাছে ধলেশ্বরী নদীর আড়আড়ি উত্তর-দক্ষিণ বরাবর ৯০°-৩৩′-৩০″ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ।
উপরোল্লেখিত উত্তর ও দক্ষিণ সীমানার প্রবাহিত বুড়িগঙ্গা ও ধলেশ্বরী নদীর উভয় পাড়ে/তীরে সাধারণ ভরাকটালের সময় জোয়ারে প্লাবিত সর্বোচ্চ জলসীমা থেকে স্থলভাগের দিকে ৫০ গজ এবং গোপচরের কাছে শীতলক্ষ্যা নদীর আড়াআড়ি উত্তর-দক্ষিণ ৯০°-৩২′-১৬″ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ বরাবর নদীর উভয় তীরে সাধারণ ভরাকটালে জোয়ারে প্লাবিত সর্বোচ্চ জলসীমা থেকে স্থলভাগের দিকে ৫০ গজ পর্যন্ত মীরকাদিম নদীবন্দরের সীমানা বিস্তৃত।
অর্থনৈতিক গুরুত্ব
মীরকাদিম নদীবন্দরের অর্থনৈতিক গুরুত্ব ব্যাপক। প্রতি বছর ৫০ লাখের বেশি যাত্রী যাতায়াত করছে মুন্সিগঞ্জের এই নদীবন্দরটি দিয়ে। ২০২০-২১ অর্থবছরেও ৫২ লাখের বেশি যাত্রী তাদের যাতায়াতে নদীবন্দরটি ব্যবহার করেছে। তার আগে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে প্রায় ৭০ লাখ যাত্রী মীরকাদিম বন্দর দিয়ে যাতায়াত করেছিল। ২০১৭-১৮ অর্থবছরেও প্রায় সমসংখ্যক যাত্রী ব্যবহার করেছিল নদীবন্দরটি।
যাত্রীর পাশাপাশি পণ্য পরিবহনেও মীরকাদিম নদীবন্দরের গুরুত্ব কম নয়। ২০১৬-১৭ থেকে ২০১৯-২০ অর্থবছর পর্যন্ত প্রতি বছর গড়ে সাড়ে ৩ লাখ টনের বেশি পণ্য পরিবাহিত হয়েছে নদীবন্দরটি দিয়ে। তবে ২০২০-২১ অর্থবছরে বন্দরটি দিয়ে পণ্য পরিবহন বেড়ে প্রায় দ্বিগুন হয়েছে। ওই অর্থবছরে মীরকাদিম নদীবন্দর দিয়ে প্রায় সাড়ে ৬ লাখ টন পণ্য পরিবাহিত হয়।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) নদীবন্দরটির অবকাঠামো উন্নয়নে বিশেষ জোর দিচ্ছে। এসব কাজের ফলে মীরকাদিম নদীবন্দর দিয়ে সামনের দিনে যাত্রী ও পণ্য পরিবহন আরও গতিশীল হবে এমন আশা করাই যায়।