বিআইডব্লিউটিএ নিয়মিত প্রকাশনা

বুধবার, জানুয়ারি ২২, ২০২৫
17 C
Dhaka

বিআইডব্লিউটিএ নিয়মিত প্রকাশনা

ধলেশ্বরী : যমুনার প্রাচীন শাখানদী

ধলেশ্বরী যমুনার একটি শাখা নদী, যার উৎপত্তি টাঙ্গাইলের সলিমাবাদ নামক স্থানে যমুনা থেকে। নদীটির দৈর্ঘ্য ১৬৮ কিলোমিটার ও এলাসিন ঘাটে প্রস্থ ৬৯৭ মিটার। বর্ষা মৌসুমে ধলেশ্বরীতে পানি প্রবাহিত হয় প্রতি সেকেন্ডে ২,৩৩০ ঘনমিটার।

ধলেশ্বরী যমুনার একটি শাখা নদী। শাখা হলেও যমুনার চেয়েও এটি প্রাচীন। যমুনার উৎপত্তির আগে ধলেশ্বরী, করতোয়া ও আত্রেয়ী- এই তিন নদীর একটি সম্মিলিত প্রবাহ হুরাসাগরের সাথে মিলিত হয়। কিন্তু যমুনার উৎপত্তির পর করতোয়ার সাথে ধলেশ্বরীর সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় এবং বৃহত্তর ময়মনসিংহের পশ্চিম-দক্ষিণ কোণ থেকে যমুনার একটি শাখা এসে ধলেশ্বরীর সাথে মিলিত হয়। এর মধ্য দিয়ে ধলেশ্বরী যমুনার একটি শাখানদী হয়ে পড়ে।

ধলেশ্বরীর উৎপত্তি টাঙ্গাইলের সলিমাবাদ নামক স্থানে যমুনা থেকে। এই স্থান থেকে উৎপত্তির পর ধলেশ্বরী প্রথমত দক্ষিণ দিকে প্রবাহিত হয়েছে। এরপর কিছুদূর পর্যন্ত পূর্বমুখী হয়ে কিছুটা উত্তর দিকে গেছে এবং পুনরায় দক্ষিণ-পূর্বাভিমুখী হয়ে মানিকগঞ্জ পর্যন্ত গিয়ে ক্রমে সাভার পর্যন্ত পূর্ব দিকে প্রবাহিত হয়েছে। সাভার থেকে ফুলবাড়ীয়ার সামান্য দক্ষিণে এসে নদীটি বুড়িগঙ্গার সাথে সংযুক্ত হয়েছে। এই সঙ্গমস্থল থেকে ধলেশ্বরী ক্রমে দক্ষিণ-পূর্বাভিমুখে রোহিতপুর, কুচিয়ামোড়া, পাথরঘাটা ও রামকৃষ্ণদির পাশ দিয়ে প্রবাহিত হয়ে পাইনার দক্ষিণে সিংদহ নামক একটি শাখানদীর সাথে মিলিত হয়েছে। এখান থেকে পশ্চিমদি, কোণ্ডা প্রভৃতি স্থান দিয়ে পূর্বাভিমুখী হয়ে কিছুদূর প্রবাহিত হওয়ার পর নারায়ণগঞ্জ বন্দরের দক্ষিণে শীতলক্ষ্যার সাথে মিলিত হয়েছে। এরপর আরও কিছুটা পূর্ব দিকে ষাটনলে মেঘনা নদীতে পড়েছে।

শীতলক্ষ্যা, ধলেশ্বরী এবং মেঘনা এই তিনটি নদীর সঙ্গমস্থল অত্যন্ত ভয়ানক। এই স্থানের নাম কলাগাছিয়া। মুন্সিগঞ্জ, ফিরিঙ্গিবাজার, রিকাবিবাজার, মীরকাদিম, আবদুল্লাহপুর, তালতলা, ফুরশাইল, বয়রাগাদী প্রভৃতি এর দক্ষিণ তটে অবস্থিত।

যতীন্দ্রমোহন রায় ‘ঢাকার ইতিহাস’ গ্রন্থে ধলেশ্বরী থেকে উৎপন্ন বিভিন্ন খাল ও শাখানদীর একটি তালিকা দিয়েছেন। তার মতে, এলামজানী বা ধলেশ্বরীর ঊর্ধ্বতন নতুন প্রবাহ থেকে উৎপন্ন আলম নদী চৌহাট ঝিলে পড়েছে। এ ছাড়া গাজিখালি, সুঙ্গার, বুড়িগঙ্গা ও বয়রাগাদি নদী ধলেশ্বরীতে পড়েছে। ধলেশ্বরীর ঊর্ধ্বতন প্রাচীন প্রবাহ থেকে উৎপন্ন ঘিওর খাল পড়েছে ইছামতীতে, তরানদী কালীগঙ্গায় ও ইছামতী ধলেশ্বরীতে। মহাদেবপুরের খাল পড়েছে কালীগঙ্গায় এবং তুলসীখালি, গোয়ালখালি ও কুচিয়ামোড়া খাল ধলেশ্বরীতে এবং শ্রৗনগরের খাল তরতরিয়া খালে মিশেছে।

বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, ধলেশ্বরীর দৈর্ঘ্য ১৬৮ কিলোমিটার ও এলাসিন ঘাটে এর প্রস্থ ৬৯৭ মিটার। বর্ষা মৌসুমে ধলেশ্বরীতে পানি প্রবাহিত হয় প্রতি সেকেন্ডে ২,৩৩০ ঘনমিটার।

দেশের অধিকাংশ নদ-নদীর মতো ধলেশ্বরীও বারোমাসী নদী। অর্থাৎ, সারা বছরই নদীটিতে পানি থাকে এবং কোনো মাসেই প্রবাহবিহীন থাকে না। তবে সবচেয়ে বেশি পানি প্রবাহিত হয় জুলাই ও আগস্ট এই দুই মাসে। নদীর গভীরতাও এ সময় বেশি থাকে। পানি উন্নয়ন বোর্ড এলাসিন ঘাট এলাকায় জুলাই-আগস্ট মাসে পানির গভীরতা পরিমাপ করেছে আনুমানিক ৭ মিটার। ধলেশ্বরীর উজানের দিকে জোয়ার-ভাটার প্রভাব না থাকলেও ভাটির দিকে রয়েছে। সাধারণ বন্যায় নদীর পাড় উপচে পাশ্ব‍‍‍‍‍র্বর্তি এলাকা প্লাবিত হয়। ধলেশ্বরীতে সাধারণত পলিপ্রবাহ নেই। পানিতে কোনো লবণাক্ততাও নেই।

নদীটির অর্থনৈতিক গুরুত্ব বিপুল। ধলেশ্বরীকে আশ্রয় করেই গড়ে উঠেছে এলাসিনঘাট, সাটুরিয়া, কাঠপট্টি, মুন্সিগঞ্জ শহর ও মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলা সদর। অনেক শিল্প কারখানাও গড়ে উঠেছে এই ধলেশ্বরীকে ঘিরে। নদীটির ওপর নির্মিত হয়েছে দুটি সেতু-ধলেশ্বরী সড়ক সেতু ১ ও ২।

এক নজরে ধলেশ্বরী নদী
উৎসমুখ : টাঙ্গাইল সদর উপজেলায় যমুনা নদী
পতিত মুখ : মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলায় মেঘনা নদী
প্রবাহিত গতিপথ এলাকা : টাঙ্গাইলের ভূয়াপুর, টাঙ্গাইল সদর, নাগরপুর;
মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া; ঢাকার কেরাণীগঞ্জ; মুন্সিগঞ্জ ও নারায়ণগঞ্জ
দৈর্ঘ্য : ১৬৮.০০ কিলোমিটার
প্রস্থ : ৬৯৭.০০ মিটার (এলাসিন)
গভীরতা : ৬ মিটার (এলাসিন)
অববাহিকা : ৭,২৫৩.০০ বর্গকিলোমিটার
বেশি প্রবাহের মাস : জুলাই ও আগস্ট
প্রবাহের পরিমাণ : ২,৩৩০.০০ ঘনমিটার/সেকেন্ড (এলাসিন)
গভীরতা : ৬.০০ মিটার (এলাসিন)
কম প্রবাহের মাস : নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি
প্রবাহের পরিমাণ : ২১.৩০ ঘনমিটার/সেকেন্ড (এলাসিন)
গভীরতা : ৩.০০ মিটার (এলাসিন

সূত্র : পানি উন্নয়ন বোর্ড

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here